আধুনিক ইতিহাস এর কাল গণনার বিচারটা, আমাদের অনেক আগের পুরুষ থেকেই ভিন্ন পথগামী। যদি বলি পৌরাণিক মতে অষ্টাবিংশ যুগ, তবে এটা নিশ্চিত এই কাল গণনা অনেকের কাছে ধাঁধাঁর মতো লাগবে। সাহেবরা আমাদের শিখিয়ে গেছেন, পুরাণ মানে মাইথলজি/মিথোলজি (mythology), ইতিহাস না! অতএব, সে কাল গণনা রূপকথার মতো!
পূরাতনস্য কল্পস্য পূরাণানি বিদুরবুধাঃ । জ্ঞানী ব্যাক্তিগণ পূরাণকে প্রাচীঙ্কালের বিবরন জ্ঞানেই অবগত আছেন। জ্ঞানীর সাথে আমার মতো অর্বাচীন এর ফারাক হল, আমি সংশয়ী। আমার যুক্তি চাই। খুজতে গিএ দেখেছি, খ্রিষ্ট জন্মকাল কে যারা কাল্বিন্দু হিসেবে ধরেন, তারাই কৃষ্ণ জন্মকাল কে খ্রিস্ট পূরবাব্দ ভাবতে আপত্তি করেন। এ আপত্তি টা কুসংস্কার, কারণ পূরাণকার দেখছি যুগ মানের দ্বারা কাল নিরনয় করেছেন। একজন বলেন এক হাজার ছেষট্টি খ্রিষ্টাব্দে রাজা উইলিয়াম ছিলেন; আর একজন বলেন কৃষ্ণ অষ্টাবিংশ যুগে ছিলেন।
সৃষ্টি, প্রলয়, বংশ, মন্বন্তর, বংশানুচরিত- পূরাণের কাছে এই পাঁচ বিষয় ইতিহাস এর মুল উপাদান। পূরাণের কি কোনও কালবিন্দু নেই? নেই। তার আদিবিন্দু আছে। তাকে বলা হএছে মানবকল্পের আদিবিন্দু। স্বয়ম্ভূর মনুকাল, পাঁচ হাজার নয়শ আটান্ন খ্রিস্ট পুরবাব্দ। এই আদিবিন্দুর অতীতে আর কিছু পূরাণের ইতিবৃত্তে আসেনি। পুরাণকারের কথা আগেই বলেছি, তাদের ইতিবৃত্তের লক্ষণ বা উপাদান সর্গ, প্রতিসর্গ, বংশ, মন্বন্তর, বংশানুচরিত। সর্গ বোঝায় বিশ্বের সৃষ্টি, প্রতিসর্গ বোঝায় প্রলয়। রাজা রিষি প্রধান ব্যাক্তিগণ দেবতা দৈত্যগণের বংশের উৎপত্তি স্থিতি বিলপ আর বংশানুক্রম। বংশ হল ইংরেজি ডাইনেস্টি(dynesty). মন্বন্তর হল মনুকাল। কাল গণনার জন্যেই যুগকাল আর মনুকাল পুরাণকারেরা ধরে নিয়েছেন।
এই ইতিবৃত্তকারগণ কারা? পুরান কালে প্রত্যেক রাজার নিজের ইতিবৃত্তকার থাকতেন। এঁদের বলা হত মাগধ। এঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন রাজবংশের বিবরন সংগ্রহ করতেন সূতগণ। এই সূতেরাই হলেন খাঁটি লক, কোনও বিশেষ বংশের পোঁ ধরা ছিলেন না। মিথ্যাকে কাট- ছাঁট করতে জানতেন। তাঁদের বিবরণ পুরানের মুল ভিত্তি।
পুরাণের অতিরঞ্জনঃ
হাজার বছরের পরমায়ু নিয়ে কেউ জন্মায় না, যুগ যুগ জীইয়ে ও কাউকে রাখা যায় না। কিন্তু পুরাণে বলা আছে রাম একাদশ সহস্র বৎসর রাজত্ব করে স্বর্গারোহণ করলেন। এখানে এই হাজার হল উপলক্ষণ প্রয়োগ। যেমন, কাতর্বীযার্জুন পঁচাশি হাজার বছর বেচেছিলেন। অলর্ক ছেষট্টি হাজার বছর রাজত্ব করেছিলেন। হাজার এর উপলক্ষণ সরালে দেখা জায়, কাতর্বীযার্জুন পঁচাশি বছর বেঁচেছিলেন। অলর্ক ছেষট্টি বছর রাজত্ব করেছিলেন। এও কীর্তিরই গৌরব। কীর্তিমানকে আশীর্বাদ বা গৌরব করে যেমন বলা হয়, “হাজার বছর পরমায়ু হোক”, এও তেমনই। মহত্ত্ব, বীরত্ব, সুকৃতি, অতুলনীয় কীর্তির গৌরব করতে হলে আমরা এমনই অতিশয়োক্তি করি। রামের মতন একজন রাজার এগার বছরের রাজত্বের আশ্চর্য ঘটনাবহুল কীর্তিকে এগার হাজার বছর বলতে দোষ কী!
চলবে......
তথ্যসুত্রঃ কালকূট এর লেখা 'শাম্ব'
সুধীরচন্দ্র সরকার সঙ্কলিত 'পৌরাণিক অভিধান'
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



