somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রাপ্তি, একজন লেখকের অধঃপতন এবং কনফেশন......

১১ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক নিতান্তই পুঁচকে লেখক। ব্লগে আইডি খুলেছে খুব বেশিদিন হয় নি। প্রথম প্রথম শুধু মানুষজনের লেখা পড়েই সময় কাটাতো। ভালোই লাগতো, কত কিসিমের লেখা ব্লগ দুনিয়াতে! মুভি রিভিউ হরেক রকমের, হাজারো স্যাটায়ার, কবিতার ঝুলি, ছোট-বড় গল্প, সাহিত্য সমালোচনা! পড়তো, আর ভাবতো, আরে বাহ, এই চিন্তাটাতো আমার মাথায়ও এসেছিলো, লেখলাম না ক্যান? অথবা, এই মুভিটা তো আমারও দেখা, চাইলে তো আমিও লেখে ফেলতে পারতাম একটা মুভি রিভিউ! যত দিন যায়, তার মাথায় ব্যাপারটা ঘুরতে থাকে, লিখতে হবে, আমাকেও লিখতে হবে।
লিখতে বসলো সে। তার সবচেয়ে প্রিয় টপিক হল মিথলজি, হিন্দু পুরাণ ঘেঁটে-ঘুটে বেশ বড়সড় একটা লেখা লেখে ফেললো সে দু’দিন খাটুনির পর। পড়ে দেখলো। নাহ, অতটা প্রাঞ্জল হয় নি। আবার লেখলো নতুন করে। আবার লেখলো, কিছুটা ইম্প্রুভমেন্ট। লেখাটা পড়ে নিজের কাছেই ভালো লাগলো! বাহ আমি তো খুব একটা খারাপ লেখি না! সাহসে ভর করে লেখাটা পোস্ট দিলো সে।
তারপর? কিছুই হল না! ১৫ মিনিট অন্তর নিজের ব্লগ চেক করে সে, নাহ, কোন মনুষ্য সেখানে পদচিহ্ন রাখে নি। একটা দিন পার হয়ে গেলো। তার এই লেখাটা কারো চোখেই পড়লো না।
মন খারাপ ছিলো কয়েকদিন। তারপর ভাবলো, নাহ এই টপিক খাবে না মানুষ, রস-কষ নেই তেমন একটা। অন্য কোন টপিকে লেখতে হবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলছে। ভর্তিচ্ছুদের বিভিন্ন দুর্ভোগ এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন অসামঞ্জস্য নিয়ে আরেকটা লেখা লেখলো সে, এ-বারেরটা আরও খেটে খুটে, বাস্তব বিভিন্ন অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে, লেখাটা যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য সমৃদ্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল তার মধ্যে। এই লেখাটাও পোস্ট করলো।
ফলাফল? তথৈবচ। তার ব্লগে মাছিও আসে না। আসবে কোথা থেকে, মধু নেই যে! ব্লগের হোমপেইজে ঘুরে বেড়ায় সে। দেখে, হাজারো অন্তঃসারশূন্য লেখায় মানুষের আনাগোনা, কমেন্টে বিতর্কের ফুলঝুরি! দেখে আর বুকের বামপাশে চিনচিনে একটা ব্যথা টের পায়। “আমি কি এদের থেকেও খারাপ লেখি? আমার লেখাগুলো কি এই চুটকিগুলোর থেকেও খারাপ?!” হতাশা গ্রাস করে ফেলে তাকে। ব্লগ লেখালেখি থেকে বিদায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তারপর অনেকদিন কেটে গেছে। ধর্মান্ধ আর ধর্মপ্রাণদের সম্পর্কে তার নিজস্ব অভিমত নিয়ে একটা লেখা তার বন্ধু-মহলে প্রশংসা পায় ভালই। তখনই আবার পুরনো ভুত মাথা চারা দিয়ে ওঠে। এই লেখাটা ব্লগে দিলে কেমন হয়! যে ভাবা সেই কাজ। পুরনো হতাশা ভুলে এই লেখাটা আবারো পোস্ট করে ব্লগে। এবং যথারীতি, এবারও তাকে হতাশ হতে হয়। তার লেখা কারো চোখে পড়ে না।...
কোন এক প্রতিষ্ঠিত ব্লগারের লেখা পড়ছিল সে। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে খুব চমৎকার একটা লেখা। ওই পোস্টে একজনের কমেন্টে চোখ আটকে যায় তার। কমেন্টের কথাগুলো যেনো তারই মনের কথা। কিন্তু অনেক গোছানো, অল্প কথায় পুরো ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। সেই একই বিষয় নিয়ে তার নিজেরও লেখা একটা কপি ছিলো। কমেন্টের সাথে মিলিয়ে দেখে, সে যেখানে পুরো এক পৃষ্ঠা লাগিয়ে লেখেছে, সেখানে ওই লোক মাত্র এক প্যারাতেই পুরো ব্যাপারটা তুলে আনতে পেরেছে।
খারাপ হবার একটা তীব্র বাসনা হঠাৎ অনুভব করে নিজের ভেতর। নিজের লেখা প্রায় এক পৃষ্ঠার ড্রাফট পোস্টটা মুছে ফেলে সে। তার বদলে ওই ছোট্ট কমেন্টের সাথে অল্প কিছু মালমসলা যোগান দিয়ে নতুন একটা লেখা লেখে। পোস্ট দেয়।
পোস্টটা দেবার পরে থেকেই নিজের ভেতর একটা অপরাধ-বোধে ভুগতে থাকে সে। এ আমি কি করলাম! শেষ পর্যন্ত আমি এতটাই নিচে নামলাম! এদিকে ওই পোস্টে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। মিনিটে মিনিটে বাড়ছে মানুষের পদচারনা। যতই দেখে, নিজের কাছে নিজে আরো বেশি কুঁকড়ে যায় সে। নিজের কাছে নিজেই ছোট হতে থাকে, মুখ ঢাকে লজ্জায়। পোস্টটা মুছে ফেলতে চায় বারংবার, পারে না। যেনো পোস্টটা ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে, তার পাপের শাস্তি দিচ্ছে শতগুণে।
এরই মধ্যে এক ব্লগারের চোখে পড়ে যায় লেখাটা। মৃদু ভাষায় সে ভৎসনা করে চলে যায়। ওই ভৎসনা হাজার হাজার বিষ মাখান তীরের ফলার মতো বিঁধতে থাকে তার শরীরে। এই নিদারুণ অশান্তি নিয়েই ঘুমাতে যায় সে। ঘুমের ভেতর সারারাত তার আশেপাশে ভীড় জমায় সব পরিচিত জনেরা। যারা এতদিন ধরে তাকে লেখালেখিতে উৎসাহ দিয়েছে, তারা এবার এসেছে ভৎসনা উপহার দিতে। পরিচিত ব্লগারদের মুখগুলো ভেসে উঠে একে একে, থু থু ছিটায় তারা সবাই। সেই পুঁচকে লেখক নিচ থেকে আরো নিচে নেমে যায়, নামতেই থাকে, নামতেই থাকে। এই অধঃপতনের কোন শেষ নেই।
তারপর ঘুম থেকে উঠে ছেলেটা আবার কীবোর্ডের সামনে বসে। লিখে শেষ করে এই লেখাটা......
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×