somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতের আগন্তুক

৩১ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্বঃ Click This Link


আবছা অন্ধকারে বিছানাটা দেখা যাচ্ছে। কেউ শুয়ে আছে ওদিকে পাশ ফিরে। আরেকটু কাছে গিয়ে নিশ্চিত হতে চাইলাম। এগিয়ে গিয়ে ঠাহর করার চেষ্টা করলাম। লম্বা চুল বালিশের উপর এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখে শিওর হলাম, আমার টার্গেট এই মেয়েটিই। আমাকে দেয়া বর্ণনার সাথে সবকিছু খাপেখাপে মিলে যাচ্ছে। মেয়েটা প্রতিদিন স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমায় এটা আমাকে আগেই জানানো হয়েছে।

কাজ সারার আমার নিজস্ব দুটো পদ্ধতি আছে। একটা হচ্ছে চামড়ার চওড়া বেল্ট গলায় এঁটে দিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত ভিকটিম নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়ে স্থির না হচ্ছে ততক্ষণ দুপাশ থেকে চেপে ধরে রাখা, আরেকটা হচ্ছে নাকেমুখে বালিশ চাপা দিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়ে পরপারে পাঠিয়ে দেয়া। এটাকে শেষ করতে আমি আজ দ্বিতীয় পদ্ধতিটা ব্যবহার করব।

পাশ থেকে একটা বালিশ টেনে নিয়ে আস্তে করে মেয়েটার নাকেমুখে চেপে ধরলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েটা ছটফট করে উঠে দুহাত দিয়ে নাকমুখ থেকে বালিশ সরানোর জন্য জোরাজুরি করতে লাগল। আমি আরো শক্ত করে বালিশটা চেপে রাখলাম। হাত-পা নাড়িয়ে কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর মেয়েটা নেতিয়ে পড়ল। নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রায় মিনিট পাঁচেক আমি বালিশটা চেপে ধরে রাখলাম। তারপর বালিশটা আস্তে আস্তে সরিয়ে নিলাম। ব্যস, আমার কাজ শেষ।

এতক্ষণ শক্তি খাটানোর ফলে কিছুটা হাঁপিয়ে গেছি। পাশেই একটা সোফা দেখে ধপ করে বসে পড়লাম। সিগারেটের তেষ্টা পেয়ে গেছে। পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করলাম। সিগারেট ঠোঁটে চেপে ফস করে লাইটার জ্বাললাম। মুখটা সামনে লাইটারের দিকে এগিয়ে নিতে গিয়ে হঠাৎই চোখ চলে গেল মেয়েটার স্থির নিষ্কম্প মুখের দিকে।

বিদ্যুৎপৃষ্টের মত কেঁপে উঠে স্থির হয়ে গেলাম। কড়কড় করে কোথাও বাজ পড়ল। হাত আর মুখ থেকে লাইটার-সিগারেট খসে পড়ল আমার। সারা শরীর যেন এক নিমিষে অবশ হয়ে গেল। বিস্ফারিত চোখে অন্ধকারেই চেয়ে রইলাম অনেকক্ষণ।

স্থাণুর মত নিশ্চুপ হয়ে কতক্ষণ বসে ছিলাম জানি না। হঠাৎ টেলিফোনের শব্দে সম্বিত ফিরে পেলাম। কোথাও ফোন বাজছে। টলতে টলতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।

ড্রইংরূমে টেলিফোনটা যেন আর্তনাদ করে চলেছে। টেবিলের কাছে গিয়ে ছোঁ মেরে রিসিভারটা তুলে নিয়ে কানে ঠেকালাম। কিছু শব্দজটের পর অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এল সেই লোকটার গলা-
"কাজ শেষ করেছ?"

"ইউ বাস্টার্ড" আমি দাঁতে দাঁত ঘষে উচ্চারণ করলাম।

হা হা হা করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল লোকটা। "সারপ্রাইজটা কেমন হল মিঃ প্রেমিক?"

"হু আর ইউ অ্যান্ড হোয়াই?"

"এখনও বুঝতে পারনি?" চিবিয়ে চিবিয়ে উচ্চারণ করল ও। "আমি তোমার এককালের বেঁচে থাকার অবলম্বন, তোমার ধ্যান-জ্ঞান, জানের জান, তোমার প্রাণপ্রিয় প্রেয়সীর আদি ও অকৃত্রিম স্বামীপ্রবর।"

"কিন্তু কেন, আর আমাকে দিয়েই কেন?"

"সে অনেক লম্বা কাহিনী। তোমার শোনার ধৈর্য্য হবে না" কৌতুকের সুরে বলল লোকটা।

"আমি শুনতে চাই" দাঁতে দাঁত চেপে বললাম আমি।

"ঠিক আছে। তাহলে শোনো" বলে শুরু করল লোকটা-

"ওকে প্রথমবার দেখেই আমি ওর রূপে পাগল হয়ে যাই। দেখেছিলাম তোমাদের এলাকাতেই। আমি তখন নতুন নতুন ঠিকাদারি শুরু করেছি। তোমাদের এলাকার একটি রাস্তার কাজ করতে গিয়ে একদিন ওকে দেখি। সম্ভবত কলেজে যাচ্ছিল। কী বলব? মেয়েটার রূপে যেন সম্মোহনী শক্তি ছিল। দেখামাত্রই আমি ওকে পাবার জন্য পাগল হয়ে গেলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম- এই মেয়েটাকে যেভাবেই হোক আমাকে পেতেই হবে। তারপর খোঁজখবর করা শুরু করলাম। আমার জন্য সোনায়-সোহাগা হল যখন শুনলাম মেয়েটার বাবা সামান্য একজন প্রাইমারি স্কুলমাস্টার। আমার এক কাছের লোককে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম। বাবা রাজি হলেও মেয়েটা প্রথমে কিছুতেই রাজি হয়নি। কিন্তু ওর বাবা সাংঘাতিক চাপ প্রয়োগ করে ওকে বিয়েতে রাজি করায়। তারপর ওকে বিয়ে করে নিয়ে চলে আসি ঢাকায়। কেমন লাগছে মিঃ ব্যর্থ প্রেমিক?"

"বলে যাও" বিড়বিড় করে বললাম আমি।

"বিয়ের রাতেই জানতে পারলাম আমি একটি জীবন্ত লাশকে ঘরে এনেছি। সে আমাকে স্বামী হিসেবে মনপ্রাণ দিয়ে কোনদিনও গ্রহণ করতে পারবে না। ওর বাবা আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে ওকে বিয়েতে রাজি করায়। ও তোমার ব্যাপারে সবকিছুই ওর বাবাকে খুলে বলে। তুমি মেধাবি ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছ, তোমার জন্য ও অপেক্ষা করার অঙ্গীকার করেছে ইত্যাদি শোনার পরও ওর বাবা কোনভাবেই আমার মত ছেলেকে হাতছাড়া করতে রাজি হয়নি। অসম্ভব সুন্দরী মেয়ের বিয়ের চিন্তায় নাকি ওর বাবার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। অত সুন্দরী মেয়ে কখন কী ঘটে যায় এ চিন্তায় আর বিয়ের ব্যাপারে দেরী করার পক্ষপাতি ছিল না।
তোমার ব্যাপারে আমাকেও সবকিছু খুলে বলে ও। ওর কাছে তোমার ছবিও দেখতে পাই। তখনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি আমি এর এমন প্রতিশোধ নেব যেন তোমাদের দু'জনেরই জীবন নরকের চেয়েও ভয়ানক যন্ত্রণাময় হয়ে যায়। তারপর আমি ওকে আর ছুঁয়ে দেখিনি।"

"তারপর শুরু হল আমার প্রতিশোধের পালা। তোমাকে খুঁজে বের করার জন্য আমি বিভিন্ন দিকে লোক লাগিয়ে দিলাম। এদিকে এক রাতে তোমার প্রেমিকাকে খাবারের সাথে নেশাদ্রব্য খাইয়ে আমার এক রাজনৈতিক বসের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করে দিলাম। পুরো ঘটনা ভিডিও করে রাখলাম যাতে পরে ওকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারি" বলে আবারও অট্টহাসি দিল লোকটা।

আমি রিসিভারের মাউথপিসটা মুখের কাছে নিয়ে লোকটাকে অশ্রাব্য ভাষায় কয়েকটা গালি দিলাম।

(বেশি লম্বা হয়ে যাচ্ছে। পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই পর্বে শেষ করার ওয়াদা করা সত্ত্বেও তিন পর্ব করতে বাধ্য হলাম। আশা করি সবাই সঙ্গেই থাকবেন?)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:২৩
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×