দেখতে দেখতে ৩ বছর কেটে গেল । আমার থেকে চার বছরের ছোট হওয়ার পরও ও ছিল আমার বন্ধুর মত ।যখন ঠিক হল ক্লাস ফাইভে স্কুল ভর্তির প্রিপারেশনের জন্য এক বছর ও আমাদের বাসায় থাকবে তখন আমাদের আনন্দ আর দেখে কে।আমরা দুজনেই খেলা পাগল ছিলাম ।বিকালে আসর নামাজ পড়ে খেলতে যেতে হত, কিন্তু এলাকার বন্ধুরা আরও আগেই বের হত । আমরা অপেক্ষায় থাকতাম আজানের ।কত দ্রুত নামাজ শেষ করে খেলার মাঠের দিকে দৌড় দেওয়া যায়।সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিলে শুরু হত গবেষনা, কে কার থেকে ভাল খেলল,কত রান করলাম,কয় উইকেট পেলাম ।আমাদের মধ্যে খুনসুটি লেগেই থাকতো । দুরন্তপনায় ও ছিল সেরা ।আমাদের বাসায় বাঁধাধরা নিয়মে চলতে হলেও ওদের পুরো বাসা ছিল আমাদের জন্য প্লে-গ্রাউন্ড ।সারাদিন ক্রিকেট খেলতাম ।ও ছাদে যেতে খুব পছন্দ করত । ওদের বাসার ছাদের টিনের চালে বসে আঁচার খাওয়া , ঘুড়ি উড়ানো............কি করিনি ।
আমার সব সাফল্যে ও যেন আমার থেকে বেশী খুশি হত ।একবছর পর ও নিজের বাসায় চলে যায় ।পড়াশোনায় প্রথমে অমনযোগী হলেও আস্তে আস্তে নিজেকে গুছিয়ে নেয় ।এরই মধ্যে আমি উচ্চ-মাধ্যমিক পাস করে ২০০৯ এ মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হই । ও তখন পড়ত ক্লাস টেন এ ।আমাকে দেখে ও চাইছিল মেরিন ইঞ্জিনিয়ার
হতে ।কত প্ল্যান ছিল আমাদের ।কথা ছিল সামার ভ্যাকেশানে এসে ওকে পড়াব ।কিন্তু তখনও বুঝিনি আমাদের আর কখনও দেখা হবে না ।আমি একাডেমিতে যাওয়ার দুই মাস পরে ওর আব্বার (আমার ফুফা) ক্যান্সার ধরা পড়ে ।এ সময় কিছুটা মনমরা হয়ে পড়ে ও ।ফুফা চিকিৎসার জন্য ঢাকা যান ।এরই মাঝে এক বিকালে ওর প্রিয় ছাদে বসে মোবাইলে কথা বলছিল ফুফার সাথে । কথা শেষে উদাসীন মনে পা ঝুলিয়ে বসে ছিল নতুন নির্মানাধীন বাসার বারান্দায় । এর খুব কাছেই ১১০০০ ভোল্টের একটি বৈ্দ্যুতিক খুঁটি ।কিভাবে যেন এক সময় ..................।পথচারিরা ওকে প্রথমে দেখে............হাসপাতালে নেওয়া হয়,কিন্তু সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ও চলে যায় না ফেরার দেশে ।প্রিয় ছাদেই জীবনের শেষ সময় কাটে ওর ।
আমি তখন একাডেমিতে ,জুনিয়র লাইফ, তাই যোগাযোগের কোন উপায়ও ছিল না ।আর বাসা থেকেও কেউ চায়নি আমাকে জানাতে ।একাডেমীতে জয়েনিং এর চার মাস পর যখন প্রথম বাসায় আসি তখন আম্মু আমাকে জানায় ............ও নাই। এ কথা এখনও আমি বিশ্বাস করি না ...............।কিভাবে করি...............এমনতো কথা ছিল না..................... ।আগে যে কোন ছুটিতে ওদের বাসা ছিল আমার একমাত্র আকর্ষন। এখন ওই বাসাটি আমার সবচেয়ে অপছন্দের স্থান । ২০১০ এ এস,এস,সি দেওয়ার কথা ছিল ওর । এখন যখন কোন পাব্লিক পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয় তখন ওর কথা মনে পড়ে যায় । আল্লাহ, তুমি আমার ছোট্ট ভাইটাকে দেখে রেখো...............।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:৪২