কবিতার শিরোনাম
কবিতারা এমন যাদের কোনও শিরোনাম হয় না। যাঁরা শিরোনাম লিখেন, ভুল করেন আমার মতোই। বস্তুত কবিতাদের এমনই হবার কথা; কবিতারা স্মরণীয় বাণী। যে কোনও ভাবে যে কোনও জায়গায় এরা শুরু হতে পারে; শেষও হতে পারে যে কোনও জায়গায়; এমনকি অকস্মাৎ। কবিতারা একটা ট্রেনের মতো; কবিতার একেকটা পঙ্ক্তি ট্রেনের একেকটা বগির মতো; একটা বগিকে যেমন ইচ্ছেমতো, যখন-তখন, যেখানে-সেখানে জুড়ে দেয়া যায় সুদীর্ঘ ট্রেনের- সামনে-পেছনে, মাঝখানে, কবিতার পঙ্ক্তিগুলোকেও তেমনি বসাতে পারো- তোমার শেষ লাইনটা শুরুতে বসাও, শুরুরটা কিছু পরে, বাকিদেরও ভীষণ উল্টে-পাল্টে ফেলো- দেখবে কবিতারা একটুও বদলায় নি, অর্থে ও অবয়বে। কবিতার শুরু কিংবা শেষ খোঁজো না; তেমনি তার অর্থ : যেসব অর্থহীনতা অহরহ অনর্থ মনে করো, তারও জেনো গভীর গূঢ়ার্থ কবির গাঁথুনিতে।
কবিতারা এমন যাদের কোনও রং থাকে না, অথচ কবিতার মতো বাঙময় রং আর কোথাও পাবে না তুমি। কোনও সুগন্ধিজাত নয় কবিতারা, অথচ কবিতার সুঘ্রাণ প্রেমিকার শরীরের চেয়েও তুমুল সুরভিমুখর। কবিতারা তীব্র কথা বলে। যেমতি ভূগর্ভে অতিশয় নিভৃতে ঘুমোয় বীজলাভা, কবিতার কন্দরে বিদ্রোহবারুদ সেমতে মূকময়।
বিষমাখা ঠোকর মারে যে, তাকে বলা হয় কাঁকড়া। তেমনি যে গাছ বড্ড ঝাঁকড়া হয় তাকে আমরা মানুষ বলি; আর যে মানুষের মন নেই তাকে বলি পাখি। তুলনাগুলো মোটামুটি এমনই যদি হয়, দেখবে খুলে গেছে জগতের সকল বিস্ময়। এবং এমতে এসবের অর্থ খোঁজো না সতীর্থ কমরেড। কবিতারা এমনই চিরকাল। এককোষ কমলা কিংবা কাঁঠালে ভিন্নতর সুমিষ্ট স্বাদ, তেমনি আম্র এবং আনারে। তেঁতুল কিংবা কুলে; বাতাবি কিংবা নেবুতে; বিচিত্র অম্লস্বাদ।
তোমার সবগুলো কবিতার ছেঁটে ফেলো শিরোনাম। ট্রেনের বগির মতো পরস্পর বসাও। চরণগুলোও আরেকবার এলোমেলো সাজিয়ে নাও। কী অবাক দেখো, তোমার সমগ্র কবিতা এক অখণ্ড সত্তায় দাঁড়িয়ে, অভিন্ন অর্থের ভেতর।
একজন কবি একজনমে একটি কবিতাই লিখে থাকেন।
*২৩ নভেম্বর ২০০৮
কবিতাঘর
কবিতার জন্য দীর্ঘ শীতঘুম চাই বিশ্রামের। উলের বুনন, আঙুলের ঠুকোঠুকি, জেগে উঠে ফের। পামট্রি’র বাবুইবাসা নিখুঁত কবিতাঘরের মতো খাসা। প্রেমাহত নরনারী, জেনে রাখো, কবিতার বিদগ্ধ ঘরবাড়ি।
সব শুনে তোমার মুখে ফোটে কথা : নাহ্, এতো কি তরলপ্রদ, আয়েশি যজ্ঞ তা! কবি এক শ্রমসার শব্দপুরুষ, রুক্ষ নিদাঘে ঘামঝর কর্ষণ; আজীবন দেখি তার ঘুমছেঁড়া প্রত্যূষ।
আলোকবর্ষের ওপারে কবিতাঘর। তুমি বললে, নাহ্, জানালার পাশে! নাহ্, আরও কাছে, বুকের ভেতর!
১৬ অক্টোবর ২০০৮