somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৌতিক গল্পঃ নওরীনের হলুদ সন্ধ্যা

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বান্ধবীদের অনুরোধেই নওরীনকে পুকুরপাড়ে যেতে হলো নাহলে গায়ে হলুদের সাজে সেজে জঙলা জায়গার যাওয়ার ইচ্ছা তার মোটেও ছিলনা। নওরীনদের আদিবাস এই গ্রামে হলেও বাবার চাকরীর জন্য নানা যায়গায় ঘুরতে হয়েছে।এখন বসবাস ঢাকার অভিজাত এলাকায়।পড়াশোনাও সেখানেই।

নওরীনের দাদীর শখের কারনেই মূলত পৈত্রিক গ্রামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।গায়ে হলুদ বাদে বাকি সবকিছুই হবে ঢাকায়।গ্রামের বাড়িতে বড়চাচা থাকেন পরিবার নিয়ে আর থাকেন দাদী,বাকি সবাই বাইরে বাইরে। বিয়ে উপলক্ষ্যে অনেক মানুষ একসাথে হয়েছে। ঢাকা থেকে নওরীনের বান্ধবীরা এসেছে।ইংলিশ মিডিয়াম আর প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়া ধনী বাবা-মায়ের সন্তান সবাই।যা দেখে তাতেই মুগ্ধ হয়।আর সেইসাথে সবখানে সেলফি তোলা চাইই চাই।

নওরীনের গ্রাম্য প্রকৃতি নিয়ে কোনো আদিখ্যেতা নেই।সে বরাবর শহরই বেশি ভালবাসে।নওরীনকে নিয়ে তার বান্ধবীরা ঘাট বাধানো পুকুরপাড়ে নানা রকম ভঙিমায় ছবি তোলে।তারপর তাকে ছেড়ে বিশাল ফলের বাগানে এদিকে সেদিকে ছড়িয়ে ছবি তুলতে থাকে।নওরীনের বেশ বিরক্ত লাগে।কিছুক্ষন আগেও তাকে নিয়ে আসার জন্য চাপাচাপি করছিল এখন সবাই তাকে ভুলে বসে আছে।বড়চাচি তো তাকে নিয়ে আসতে দিতেই চাইছিলেন না।হলুদ গায়ের কনে ভর সাঁঝের আগে আগানে বাগানে, পুকুর পাড়ে ঘুরবে কেন?অমঙ্গল হয়।সে অবশ্য এসব বিশ্বাস করেনা।

পুকুরের চারপাশ ঘিরে চাচির হাতে লাগান নানারকম দেশি ফুলের গাছ।ঘাটের পাশে একটা শিউলী ফুলের গাছ।,যদিও এখন ফুলের সময় না তবুও কিছু কিছু ফুল ফুটেছে ,কিছু নিচে পড়ে আছে।নওরীন বাধানো ঘাটের উপর বসে পড়ে।গ্রামে এসে সে ঠিক খুশি হতে পারছেনা।তার ইচ্ছা ছিল ঢাকায় সাজিদের সাথে একই ভেন্যুতে হলুদের অনুষ্ঠান হবে।কিন্ত পরিবারের সিদ্ধান্তের উপরে সে কথা বলতে পারেনি।

এই গ্রামে কোনো পার্লার নেই, সাজ করতে শহরে যেতে হয়েছে।তারা ভালকরে সাজাতেও পারেনি,নওরীনের মুখের লাবন্য অনেকটাই ঢাকা পড়েছে চড়া মেকাপের আড়ালে।নওরীনের মনটা শুরু থেকেই ভার হয়ে ছিল তবে পুকুরঘাটে বসে তার মন খারাপ ভাবটা অনেকটাই মিলিয়ে যায়।মনে পরে ছোটবেলায় দাদির কাছে কত যে গল্প শুনেছে এইখানে বসে তার ঠিক নেই।কিছু গল্পতো রীতিমত গা ছমছমে।তার দু একটা মনে পড়ে যাওয়ায় তার গা কাঁটা দিয়ে ওঠে।আশেপাশে কাওকে দেখা যাচ্ছে না।মেয়েগুলো হয়ত তাকে ফেলেই চলে গেছে।নওরীন ভাবে যে উঠে বাড়ির ভেতরে যাবে কিন্ত যেতে পারেনা।হঠাত করেই একটা বাতাস ভেসে আসে,তাতে কেমন যেন গন্ধ।কাদাপানি শেওলা আর জংগলের পচাপাতার গন্ধের মত।শিউলিফুলের গন্ধটা আরো তীব্র হয়ে ওঠে।নওরীনের মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে।বাড়ির পুরনো কাজের বুয়া ভর সন্ধ্যাবেলা নওরীনকে এভাবে বসে থাকতে দেখে রাগারাগি করতে থাকে।সেই শব্দে তার ঘোর কেটে যায়।নওরীন বেশ অবাক হয়ে ভাবে একটু আগেও তো অন্ধকার ছিলনা।এখন এত আঁধার এল কিভাবে?মনে হচ্ছে যেন অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।
সন্ধ্যার পর শুরু হলো ঘরোয়া পরিবেশে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।গ্রামের বউ ঝি রা এসে নওরীনকে হলুদের ছোঁয়া দিতে লাগল।মাছ-ভাত আর পিঠা পায়েস দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হলো। এইসব দেখে তার বান্ধবীরা খুব খুশি,বাড়ির সকলেও খুশি শুধু নওরীনই কেমন আনমনা হয়ে থাকে।

হাসি গল্প আনন্দে অনেক রাত করেই সবাই শুতে গেল।নওরীনের শরীর খারাপ লাগছে বলে সে আগেই শুয়ে পড়েছে।হলুদের শাড়িটাও তখনও ছাড়েনি,মা জোর করে কিছুটা খাবার মুখে তুলে দিয়েছে। বড় ঘরটার মেঝেতে ম্যাট্রেস বিছিয়ে নওরীনের সাথে সব বান্ধবীর ঘুমানোর জায়গা করা হয়েছে। অন্যমেয়েরা তখনো অন্য ঘরে হইচই করছে।একা শুয়ে নওরীন সাজিদের কথা ভাবতে চেষ্টা করে।খোলা জানালা দিয়ে হঠাত এক ঝলক বাতাস ভেসে আসে।সেই বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধের সাথে কাদাপানির গন্ধ,ঝরা পাতা আর জঙ্গলের গন্ধ।নওরীনের গা কাঁটা দিয়ে ওঠে মনে হয় কেউ যেন তার পেছনে গা ঘেষে শুয়ে আছে।তার ভাবনাচিন্তা লোপ পায়।

পরদিন সকালে কেউ নওরীনকে খুঁজে পেল না।ঢাকায় খোঁজ নেয়া হলো,চারিদিকে খোঁজ করা হলো কিন্ত নওরীনকে পাওয়া গেল না।আনন্দ উতসবের বাড়িতে শোকের ছায়া পরে গেল।প্রতিবেশীদের কেউ কেউ অন্যরকম ইংগিত দিতেও ছাড়ল না।পরিবারের লোক মোটেও এসব কথা মানতে চাইল না কারন নওরীন খুব ভাল মেয়ে,তার এধরনের কোনো ইতিহাসও নেই।
বাড়ির কাজের বুয়া মাথা চাপড়ে বারবার বলতে লাগল-আপামনিকে কত্ত কইরা কইলাম হলুদ গায়ে সাঝের সময় পুকুর পাড়ে বইসা না থাকতে।খারাপ জায়গা,খারাপ জিনিসের কুনজর পরবো।তা গরীবের কথা শোনে কেডাই?

দুইদিন পর পাশে গ্রামের রমিজ মোল্লা সেই গ্রামের বিলের জংলা জায়গায় ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে একটি তরুনী মেয়ের লাশ আবিষ্কার করে।তার পরনের হলুদ শাড়ি কাদাপানিতে মাখামাখি ।মাথাসহ অর্ধেক দেহ কাদায় পোঁতা।দেখে মনে হয় পাশবিক শক্তিতে কাদাপানিতে চেপে ধরে মেয়েটিকে মেরে ফেলা হয়েছে।


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৩৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×