somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে---

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুর আর গান।স্নিগ্ধতা আর শুদ্ধতা।কৃষ্টি কালচার আর শিল্পসাহিত্য।এ সবই আত্মার বিশুদ্ধতম সৌরভ আর মানব মনের মধুরতম খোরাক।কিছু কিছু মানুষের প্রতিভা পূর্নিমার চাঁদের মত বিকশিত কিন্ত একই সাথে জ্যোৎস্নার মত স্নিগ্ধ। একটা সময়ে এমনি সব আলোকিত মানুষেরা দলে দলে নেমে এসেছিলেন বঙ্গভূমিতে।তাদের ঐশ্বরিক প্রতিভায় আলো হয়ে উঠেছিল এই সবুজ কোমল আঙিনা। শুধু তাই নয় সেই আলোতেই ভাস্বর হয়ে থাকত এই আঙিনার মানব মনগুলি।তাইতো সুরুচিসম্পন্ন, বিবেকবান মানুষের দেখা মিলতো হাঁটতে চলতে।শিক্ষা আর সংস্কৃতি তখন একে অপরের সাথে জড়িয়ে ছিল নিবিড়ভাবে। বাবা মা কে দেখেছি।তাদের ভাইবোন বন্ধুবান্ধবকে দেখেছি।তাদের কথাবার্তা চলাফেরা দেখে মুগ্ধ হতাম।এক ধরনের মার্জিত শালিনতা ছিল সবার আচরণে। আড্ডার বিষয়বস্ত গুলোও ছিল দারুণ!

সেই সময়ে ভালো লেখা ভালো গান তৈরি হতো।মানুষ তার কদর করতে জানতো।আমরা যখন বড় হলাম তখন সবকিছু অনেক বদলে গেছে।সময়ের সাথে শিল্প সাহিত্যের রূপ বদলায়।এটা স্বাভাবিক। কিন্ত উন্নত মানের সাহিত্য, গান আর সিনেমা এখন যে আর সেভাবে তৈরি হচ্ছে না এ ব্যাপারে অনেকেই একমত হবেন।মানুষগুলোও বদলে গেছে।নতুন প্রজন্ম হিরো আলমকে চেনে কিন্ত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কে চেনে না।

স্নিগ্ধ মিষ্টি বাংলা গানের মাধুর্য সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যেভাবে ধারণ করেছিলেন তার সাথে তুলনা করা যায় খুব অল্প মানুষের।আমি নাম না জেনেও তাকে চিনেছিলাম তার গানের মাধ্যমে। বাবার ক্যাসেটে শোনা মিষ্টি কিছু গান ছোট থেকে কানে লেগেছিলো। এখানে ওখানে এই গানগুলো শুনতাম।তার 'ঘুম ঘুম চাঁদ' গানের আবহে যেন দিনে দুপুরে চাঁদ নেমে আসতো।

'চন্দনে পালঙ্কে শুয়ে' গানটি শুনে সেই কবে এক বিরহিণীর লুকানো ব্যাথা নিজের মনে অনুভব করেছিলাম।'খোলা আকাশ কি এত ভালো লাগত' গানটি আমাকে ভাবনায় ফেলত।মধু মালতী, এ শুধু গানের দিন, এসব গান মুহূর্তেই পরিবেশটা উৎসবমুখর করে ফেলতে পারত।তাইতো এসব গান এখনো আমার প্লে লিষ্ট জুড়ে রয়েছে।আমার শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য যৌবন বাংলা গানের অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে রাখার জন্য তার মত শিল্পীদের কাছে আমি ঋণি

লতা মঙ্গেশকরের পর গতকাল চলে গেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। দুই গানের পাখির বিদায়,যেন একটি আলোকিত যুগের সমাপ্তি!রেশ না কাটতেই আজ চলে গেলেন বাপ্পি লাহিড়ী। এক একটি নক্ষত্র হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের চেনা পৃথিবী থেকে।পৃথিবীটা বদলে যাচ্ছে দ্রুত।

ছোটবেলায় নিভৃতপল্লীর নিঝুম দুপুরে বাবার সৌখিন ক্যাসেটের ফিতায় শোনা মিষ্টি কণ্ঠের গানের দিনগুলো যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে।তার স্থান দখল করছে অস্থির ব্যস্ত দিনরাত।অসহিষ্ণুতা, নির্দয় নির্মমতা এখন সবখানে।পার্থিব আর অপার্থিব লাভ হাসিলের জন্য সবাই ছুটছে।লাইক,শেয়ার,ভিউ পাওয়ার জন্য উদ্ভট থেকে উদ্ভট কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে।এখন লতা,সন্ধ্যা, হেমন্তের মিষ্টি একটা গানে কার মন প্রাণ জুড়ায় জানিনা।তবে আমি সে অভ্যাস ছাড়তে পারিনি।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বৃষ্টিস্নিগ্ধ সন্ধ্যায় কানে হেডফোন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের 'হয়তো কিছুই নাহি পাব' গানটি শুনে মন যেমন হু হু করে উঠত আজও কর্মজীবনে গভীর রাতে ঘুম ভাঙলে এই গান শুনে তেমনি অনুভুতি হয়।তাই অর্নব,শিরোনামহীন,জলের গানের সাথে লতা, আশা,সন্ধ্যা,হেমন্ত, কিশোরের মত কিংবদন্তিদের গান থাকে আমার প্লে লিস্টে।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মত দ্বীপ শিখারা নিভে গেলেও তাদের আলোটুকু থেকে যাবে গানের সুরে সাথে।হয়ত শত বছর পরেও কোনো তৃষিত হৃদয়কে ভরে তুলবে আলোর মিছিলে।





সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×