somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

***গল্প --“মধ্যদুপুরে জোছনা পান”***

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেম নাকি গাছ থেকে পড়া অন্ধ তালের মত, কখন যে কার
ঘাড়ে গিয়ে পড়ে তা আগে ভাগে বুঝতে পারা যায় না। আর, তারুণ্য
থেকে যৌবনে পা দিয়েছে অথচ প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।আমি সাধারনের দলে,তাই আমিও ভালবেসেছিলাম।

ভালবাসার ক্ষেত্রে নানা জনের নানা মত।কেউ টাকা দেখে, কেউ দেখে মন।কেউ বা আবার শুধু রূপ দেখেই ভালবাসে।

রূপবতী মেয়ে অনেক দেখেছি।মুগ্ধ করা রূপ ছিল সকলের।কিন্তু সেই রূপ আমার চন্দ্রমুখীর উজ্জল কিরনের তুলনায় একদমই ফিকে।তার নাম চন্দ্রমুখী।সত্যিই,চন্দ্রের ন্যায় মুখ তার।
সে সুন্দর, পবিত্র, সাদামাটা, অতি সাধারন।নেই রূপচর্চার চাকচিক্য।তথাকথিত সুন্দরীদের কাতারেও কেউ তাকে ফেলবে না। কিন্তু এই সাধারনত্বের মাঝেই তার অসাধারনত্বটি লুকিয়ে আছে।আমার মতে রূপ আর সৌন্দর্যের মাঝে একটা সুক্ষ পার্থক্য রয়েছে।রূপের মাঝে পবিত্রতা বিষয়টি ঐচ্ছিক, থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে।কিন্তু সৌন্দর্য মাত্রই তা আবশ্যকীয়। সেই নিষ্পাপ, পবিত্র সুন্দরের দেখা পেলাম একদিন,একরকম হুটাৎ করেই।

সময়টা ছিল মধ্যদুপুর। ক্লাসে সমাস নির্ণয়ের ওপর পরীক্ষা চলছিল। প্রস্তুতি নেই। প্রশ্নের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাই কিছুই করার ছিল না। প্রশ্নপত্রে কেবল একটা শব্দের সাথেই পরিচিত ছিলাম, চন্দ্রমুখ। অর্থ- চন্দ্রের ন্যায় মুখ। ঝটপট উত্তর লিখে বসে থাকলাম। আচ্ছা, চন্দ্রের ন্যায় মুখ কি সত্যিই আছে? নাকি এটি শুধুই উপমা। উত্তর না লিখে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে সময় কাটাতে লাগলাম। হটাৎ আমার দৃষ্টি তার দিকে এসে থমকে গেল।
সে লিখছিল। মধ্যদুপুরের কড়া রোদ জানালার থাই গ্লাস ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল যেন ঘরময় জোছনার জোয়ার বইছে। পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। এক মূহুর্তের জন্য দ্বিধান্বিত হয়ে পরি এই ভেবে, সূর্যের আলোয় ঘরটি আলোকিত হচ্ছে নাকি তার চন্দ্রমুখের কোমল কিরনে উদ্ভাসিত হচ্ছে আমার মন? দুটোই সত্য ছিল।

সেদিনই প্রথম মধ্যদুপুরে জোছনা পান করেছিলাম।

এরপর থেকে তার প্রতি অদ্ভুত এক ভাললাগার শুরু। জোছনা পান যেন অভ্যাসেই পরিনত হয়ে গেল।
কলেজে প্রথম থেকেই তাকে দেখে আসছিলাম। ক্লাসরুমে কিংবা গেটের বাইরে। দেখতাম, বড়জোর একপলক বা তার কিছু বেশী। কিন্তু ভাবতেও পারিনি, সেই কয়েক পলক দৃষ্টিপাতই বছর দুয়ের ব্যাবধানে এভাবে পলকহীন দৃষ্টিতে বদলে যাবে।ভেবে অবাক লাগে, যে সুন্দর আমি জগত্ জুড়ে খুঁজে বেরিয়েছি তা অতি নিকটেই ছিল।তাই হয়ত কবি বলেছেন,

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দু পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপর
একটি শিশির বিন্দু।

শিশিরের মতই শুভ্র সে।সমগ্র মুখ জুড়ে যেন এক নিবিড় পবিত্রতা। যেমনটি ছিল অপুর হৈমন্তী। তবে পার্থক্য, হৈমন্তী ছিল অপুর সম্পদ। আর সে? আমার অবচেতন মনের ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে হ্যাঁ,হয়ত অনেক কিছু হতে পারত। কিন্তু কিছু বিষয় আছে যার শুরু হওয়ার আগে সমাপ্তি ঠিক করে ফেলা উচিত। যে আপন হবার নয় তাকে আপন ভাবতে গেলে শুধু কষ্টই পেতে হয়।

সে সময় দু-চারখানা অকবিতা লিখে বন্ধুমহলে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলাম। মনের কথা প্রকাশের পন্থা হিসেবে তাই কবিতাকেই বেছে নিলাম।লিখে ফেললাম একখানা অকবিতা-

"উদাসী মন বারংবার করে জ্বালাতন
পলকবার তার দর্শন বাসনা শুধায়,
হৃদয়ে যথা চিত্রাংকনের প্রয়াস নিরন্তর
অন্তর দৃষ্টি তথা মেতে ওঠে ছলনা খেলায়।"

কবিতা পর্ব শেষ। এবার তা যথাযথ ব্যাক্তির নিকট হস্তান্তরের পালা। শেষবর্ষের ছাত্র ছিলাম। কলেজের দিনগুলোও ফুরিয়ে আসছিল দ্রুত। প্রতিদিনই ভাবতাম, আজই দেব! কিন্তু একধরনের ভীতি কাজ করায় কিছুতেই হচ্ছিল না।
কলেজের শেষ দিনটির কথা এখনও মনে পরে।সহপাঠীরা পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলাম।কষ্ট লাগছিল এই ভেবে, এদের অনেকের সাথে এটিই হয়ত শেষ দেখা। তেমনটিই হয়েছিল।এরই মাঝে সহপাঠীদের ভীড়ে ব্যাকুল দু'চোখ কেবলই তাকে খুঁজতে লাগল। দেখলাম, কোনে দাঁড়িয়ে বান্ধবীর সাথে কথা বলছে। এক মুহুর্ত ভাবলাম। আজ বলতেই হবে। কবিতার পাতা হাতে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু তা আমার হাতেই রয়ে গেল,দেয়া হল না। কবিরা সাধারনত নিরবেই ভালবেসে যান।

ভালবাসা গোপনে রেখে অনেকেই তো পথ চলছে। তাদের জীবন থেমে নেই। যান্ত্রিক জীবনের যান্ত্রিক মনে হয়ত তা অতি ক্ষীণ প্রভাব ফেলে, হয়ত নয়।

আর কবিতাটি? আমার মধ্যদুপুরে জোছনা পানের স্মৃতি হিসেবে আজও মানিব্যাগের কোনে স্বযত্নে রাখা আছে। ওখানেই থাকুক,কিছু স্মৃতি লালনের মাঝে অদ্ভুত আনন্দ আছে
----------------------------***----------------------------
সোহেল মাহামুদ(অতি ক্ষুদ্র একজন)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×