দুই মেয়ে আর ওদের মাকে নিয়ে রফিক সাহেবের সংসার। বড় মেয়েটি এবার টেন এ উঠেছে; ছোটটি প্রি-স্কুল এ। নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন গৃহিণীর ভাত কাপড়ের চাহিদা মিটলেই সে সংসার কে মোটামুটি সুখের সংসার বলা হয়। ওরাও সুখেই ছিল।
প্রতিদিন রাতে বাসায় আসার সময় মেয়েদের জন্য হাতে করে কিছু না কিছু না আনলে রফিক সাহেবের ঘুমই হত না। ঘুমটা খুব জরুরি ছিল উনার জন্য। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতেন তার মেয়েরা বড় হয়ে পাইলট হবে, ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, ব্যাংকার হবে; নিদেন পক্ষে টিচার তো হবেই...
খুনসুটি আর হালকা পাতলা অনটনের মধ্যেও ওরা চারজন ভাল ছিল। ভালই।
সংসারের খরচ একটু ব্যালান্স করার জন্য বাসার একটা রুম সাবলেট ভাড়া দিলেন মিসেস রফিক। কোন এক বেসরকারী ফার্ম এ কাজ করা এক মহিলা তাদের সাব ভাড়াটিয়া হলেন। সবাই মিলে সুখে- শান্তিতে থাকতে লাগলেন।
রুপকথার মতো গল্পটা এইভাবে শেষ হলো না।
এক বছর পরের কথা। মিসেস রফিক তার দুই মেয়েকে নিয়ে পালা করে ভাইদের বাসায় থাকেন। বাবা – মা মারা গেলে ভাইরা ভাই থাকে না; অচেনা কেউ হয়ে যায়। লাঞ্ছনা, বঞ্চনা যতই হোক, দুটো ভাত তো পড়ছে পেটে। খিদার জ্বালার কাছে মান, সন্মান, ব্যাক্তিত্তের কোন দাম আছে?
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রফিক সাহেব তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে নিকেতনে সুখে আছেন। তাদের কোলজুরে ছোট্ট একটি ফুটফুটে মেয়ে এসেছে।
_______________________________________________________
উপরের টুকু গল্প ছিল। গল্পের চেয়ে জীবন আরো নাটকীয়। মুল কাহিনী আরো নোংরা। ভদ্রলোক বাসার কাজের মেয়ের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন। কোথায় আছেন জানা যায়নি।
মুল কথায় আসি। বড় মেয়েটার পড়াশুনা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সংগত কারনেই নাম বললাম না। গত জুলাই মাসে কয়েকজনের সহায়তায় আমরা ওকে সিটি কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম। আজ শুনলাম ওর দশ মাসের ফি ডিঊ হয়ে আছে। জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৩০ শে জুন।
আমরা ঠিক করেছি ওর পড়াশুনার খরচ আমরা এরেঞ্জ করবো। ১০/২০ জন লোক ৫০০/১০০০ করে দিলে হয়ে যাবে। কেউ থাকলে আওয়াজ দিবেন।
পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন, খুব সহজেই; যেভাবে সবাই যায়।
জাস্ট সেলফি তোলার সময়টুকু ভাববেন মেয়েটার বয়স, পারিপার্শ্বিকতা, সমাজ আর খিদার জ্বালার সংযোগ। তারপর সেলফি তোলেন। নিজের পরিবর্তনটা নিজের চোখে দেখতে পারবেন...