চারটা পাঞ্জাবী ছিল। সস্তা। সুতির। আর দুইটা আকাশ রঙের জিন্স। ময়লা। গোড়ালির দিকে ছিড়ে যাওয়া। ক্লাসে, আড্ডায়, প্র্যাকটিসে ঘুরে ফিরে এগুলাই পরতাম। রাসেলের জিন্সটা আরো ময়লা ছিল। ধোয়ার সময়ের অভাবে (!) আমরা ওগুলো উল্টে রোদে শুকিয়ে ঝাড়া দিয়ে পরতাম!
রিপন অবশ্য একটু এডিট করে কাবলি পরত! দুনিয়ার অন্য সবকিছু চুলায় যাক, প্রত্যেকটা নতুন হুমায়ূন না কিনলে চলত না ওর! নতুন বই কিনে মাঝ বরাবর খুলে কাগজের ঘ্রান অথবা হুমায়ূনের ঘ্রান নিতে নিতে ঘুমোতো!
রাসেল আর আমি পাল্লা দিয়ে হুমায়ূন পরতাম... কে কার আগে শেষ করতে পারে! এক একটা বড় হুমায়ূন ২/৩ দিন-রাত ব্যাপী প্রোজেক্ট নিয়ে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে গোগ্রাসে গিলতাম। যতক্ষণ না শেষ হত ততোক্ষণ মাথার মধ্যে প্লট ঘুরত। এমনকি পড়া শেষ হবার পরেও রেশ থেকে যেত। সেই রেশ নিয়ে মাঝরাতে রাস্তায় হাটতাম আমরা। তিন পাঞ্জাবী ওয়ালা। রাসেল, রিপন আর আমি।
নথুল্লাবাদ টু রুপাতলী... রুপাতলী টু ত্রিশ গোডাইন!
শুধু নিরিবিলি বসে হুমায়ূন পড়ার লোভে খালি পকেটে কতদিন নলছিটি, বাবুগঞ্জ গেছি! হেল্পারী করলে বাসে পয়সা নিতো না! আর দুঃখ দুঃখ ভাবে থাকলে দুনিয়ার কোথাও ও খাওয়ার অভাব হয় না! আমাদের মায়াবতী মা’রাও পেট পুরে খাওয়াতেন; আহা বাছারা সারারাত পড়াশুনা করে!
চুরি যাওয়া বিকেলের আলোর মতো কত কিছুই না হারিয়ে যায়! অথবা ঘুমিয়ে যায়; সাবসিডিয়ারী হয়ে যায়! শেষ ও কি হয়ে যায়??
হুমায়ূন স্যার, আপনি আমাদের মাঝে না থাকলেও আপনার বাকের, শুভ্র, মিসির আলী, হিমুরা এখোনো আমাদের মাঝে ঘুমিয়ে আছে। আমরা তাদের কখনো হাড়িয়ে যেতে দেবো না।
বড় হয়ে গেছি তাই হাউমাউ করে কাঁদতে পারি না; ভিতরে উকি দিয়ে দেখেন বাষ্প জমে জমে কি অবস্থা! এটুকু দেখার ক্ষমতা আপনার আছে।
পকেট ছাড়া সুতির পাঞ্জাবী কিনতে হবে একটা। সামনের লালন মেলায় খালি পকেটে নামবো রাস্তায়।
দুনিয়া বদলেছে বদলাক, এ রাস্তায় তো আমি নতুন না...