somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ন্যাড়ার বেলতলা দর্শন

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে ন্যাড়া বেলতলায় আবার গেল; মানে আমাকে আবার যেতে হোল আরকি। তবে একা নয়, দোকা। বিষয়টি বিবাহ ঘটিত। তবে সুখের কথা, আমার যা সর্বনাশ হবার তা দশ বছর আগেই হয়েছে। তাই ঘর পোড়া গরু সিঁদুর মেঘ দেখলে যেমন ভয় পায়, আমিও তেমনি থরহরি কম্পন নিয়েই পুনরায় বেলতলা দর্শনের সাহস সঞ্চয় করলাম। ভরসা এই যে, আমি একা নই। আমি কি ডরাই সখি, ভিখারি রাঘবে; সাথে মোর রয়েছে গোপাল, থুক্কু আমার স্ত্রী পক্ষের বিশেষ আত্মীয়টি। তার জন্যয়ই পাত্রী দর্শনের এই আয়োজন। সাধের বেলতলায় দ্বিতীয় ন্যাড়া তৈরির মহান ব্রত নিয়ে তাই যখন লঙ্কা পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম, থুক্কু ঘটকের দ্বারদেশে উপনীত হলাম, তখন আর কোন রাবণে ঠেকায় মোরে।

ঘটকের প্রথম কথা –পাত্রের ছবি কই? উঁহু ছবি ছাড়া কিছুতেই চলবেনা। আজকাল পাত্রের ছবি ছাড়া নাকি কোন ময়নাই “মুখও নাড়িবেনা, কথাটিও বলিবেনা”। অগত্যা পাত্র সহ রওনা হলাম ধানমণ্ডির বিখ্যাত Photos’ Hut –এ। ফটোগ্রাফার ভদ্রলোক নিতান্তই প্রফেশনাল। ফটো সেশনে একটু মায়া মায়া ভাব আনবার জন্যই হোক বা খাসা শিকার পাবার আনন্দেই হোক –এফডিসির বাঘা পরিচালকের মত ক্যামেরা ডানে বামে উপর নীচে কাঁত করে সারা জীবনের মোক্ষম শটটি ‘কাট’ করতে চান । তার কাছে কালা, বাইট্‌টা, অখাদ্য কোন ব্যাপার না। অবলীলায় তার ক্যামেরা ও ফটোশপ নামক সফটওয়্যারের কল্যাণে ইনপুটে বাঁদরও ডারউইনের থিওরি মোতাবেক, আউটপুটে সাঁচ্চা ‘আমীর খান’ বা ‘ক্যাটরিনা কাইফ’ –এ রূপান্তরিত হচ্ছে। সেই মহাপুরুষ জিজ্ঞাসা করলেন-
“কোনটা চান?” ।
আমি বিগলিত হয়ে বললাম, “ঐ ধরুন সাল্‌মান খান”।

অবাককান্ড, তাই হোল! ছবি হাতে নিয়ে পাত্রের মা-ই তার সবে ধন নাড়িছেঁড়া নীল মানিককে চিন্তে না পেরে মূর্ছা গেলেন, আর আমিতো কোন ছার।

এরপর শুরু হোল বায়োডাটা ও ছবি দেখে প্রাথমিক পাত্রী বাছাই পর্ব। এ এক কঠিন যজ্ঞ। বাছাবাছি কমিটির বিশেষজ্ঞদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন অচল পয়সা স্বর্ণের সিকি বলে পারপাবে এ চিন্তার দুঃসাধ্য কার। যেমন ধরুন “এই মেয়ের নাক খাঁদা”, “কিরম খালাম্মা খালাম্মা চেহারা”, “মেয়ে মোটেই ফর্সা না, কড়া মেকআপ” ( দয়া করে মহিলা বিশেষত বিবাহযোগ্যা পাঠিকারা অপরাধ নেবেন না। সুখের বিষয় হল – নদীর ওপার বলে কথা আছেনা। আমার বিবাহের সময়ই আমার সৌভাগ্য হয়েছিল গুপ্তচর-মারফত জনৈক সম্ভাব্য পাত্রী পক্ষের আশাতীত প্রশংসা বাচক বিশেষণের ফুলঝুরিতে পুলকিত হবার- “ছেলে নিশ্চয়ই বাঁটু”, “এরতো চোরা চোরা চেহারা”, “ওমা এতো চারচোখরে” ইত্যাদি ইত্যাদি।)
অনেক তসবির ঘেঁটে, হাজার সুন্দরীর ছবি ডানে বামে করে, এমনকি থ্রি ডাইমেনশনাল এঙ্গেলে ফেলে, অবশেষে সিদ্ধান্ত হল আগামীকাল প্রথম মেয়েটি দেখা হবে। স্থান রাজধানীর কোন এক অভিজাত রেস্তরাঁ। পাত্রী তার বাবা ও দুলাভাই সহ হাজির হয়েছে। কিন্তু পাত্রীর কই সেই মহনীয় কমনীয় রূপ, বাঙালি ললনার ছলনাময়ী আঁখি? বরং বুক শূন্য করে পাখি উড়াল দেবে দেবে ভাব। পরনে নেই তার ঢাকাই শাড়ী, থুক্কু চোখ ধাঁধান কোন পোশাক (এক কোনা ছেড়া মনে হল)। এলোকেশী চুলে জবজবে প্যারাসুট নারকেল তেলে চুইয়ে পড়ছে যেন।

প্রশ্ন-পর্ব মোটেই জমলনা। যেমন ছেলে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করল
“আপনার নাম”?
“কেন বাবা আপনাকে বায়োডাটা দেয়নি”?
“নানা তাতো দিয়েছেই, স্মরণ নেইতো তাই। কিন্তু বলতে আপনার আপত্তি নেইতো”?
“উম্‌....”।
এইখানে মেয়ের দুলাভাই অনেকটা আগবাড়িয়ে বললেন,
“আসলে অপলার আজ একটা পরীক্ষা ছিলতো, তাই ঠিক কন্সেন্ট্রেট করতে পারছেনা হয়তো”।
“দুলাভাই মিথ্যা বলবেন না, আজ আমার কোন পরীক্ষা ছিলনা”।
স্বাভাবিক ভাবেই এই পর্ব এইখানেই অতিসত্বর ইতি টানতে হল। আমাদের খটকার কারণটা খোলাসা হল রাতের বেলায়, কন্যাটির ফোনে। ইনিয়ে বিনিয়ে মেয়েটি পাত্রকে যা বলল, তার মর্ম কথা হচ্ছে,
“আমি একটি ছেলেকে পছন্দ করি। বাবা মা জানেনা। জানলে খুন করে আজিমপুরের আগেই পুঁতে ফেলবে। প্লিজ, আপনি এই বিয়েতে রাজি হবেন না।“

আমাদের পাত্র মশাই খুন খারাবির ভয়েই হোক, অথবা বিবাহ নামক এরূপ গ্যাঁড়াকলের চাপে পড়বার সম্ভাবনায় দুইদিন নির্বাক রইল। এই ভয়াবহ ঘটনার পর আরো কয়েকটি বিচিত্র পাত্রী দেখার পর্ব পার করতে হল। কিন্তু হলে কিহবে, বিড়ালের ভাগ্যে শিকেও ছিড়লনা, মধুরেন সানাইও বাজল না। পাত্রের চোখে মুখে তখন পাড় আষাঢ় মেঘের ঘনঘটা, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের নাচনের সাথে বজ্রপাত।

এই বাদলের ঘনঘটায় একদিন ঘটক সাহেব ফোনে জানালেন, আজ এক মেয়ে দেখা হবে। মেয়ে পেশায় হবুডাক্তার। কোন ছবি নেই, বায়োডাটা নেই। মেয়ে দেখার উদ্দেশ্যে তাই ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল’।

মেয়েকে সুন্দরিই বলা চলে। এক হারা গড়ন, পদ্মলোচনা। যথারীতি পরিচয় পর্বের পর পাত্র ও কন্যার সুযোগ হল একান্ত নিভৃতে কিছু বাক্যালাপের। পাত্রের মুখ থেকে শোনা সেই কথোপকথনের উদ্ধৃত দিচ্ছি:
মেয়ে জিজ্ঞাসা করল, “ আপনার কি কোন শারীরিক সমস্যা আছে”?
ছেলে রক্তিম বদনে উত্তর দিল, “কেনো বলুন তো”?
“না আপনার হাতের তালু ঘামছে, কথা কেমন জড়ানো, আমি শিওর প্যাল পিটিশনও আছে”।
“ ওটাই আমার রোগ, একটু নার্ভাস আরকি”।
“নার্ভাস কেন”?
“জানেন মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলেই-না আমার এরকমটা হয়। ভুল বললাম। সব মেয়ের সাথে না। বিশেষ বিশেষ কারো সাথে...”।
“’বিশেষ বিশেষ’ জিনিসটা কি”?
“যেমন ধরুন আপনার সাথে কথা বলতে যেয়ে যেমনটা ঘটছে...”।
“ হুম। মনে হচ্ছে এ কেস অব ক্যাট সিন্ড্রম, আঞ্জাইটি অ্যাটাক। এরকম কবে থেকে হচ্ছে”?
“ধরুন এই কিছুক্ষণ আগে থেকে”।
“ আপনার ফ্যামিলিতে কারো এ ধরনের হিস্ট্রি আছে”?
“ বাবার মুখে শুনেছি, বিয়ের আগে তারও এই রোগ ছিল। পরে আর ছিলনা”।
“ হুম। ঘাবড়াবেন না। ঠিক যায়গাতেই এসে পড়েছেন। আমি একটা প্রেসক্রিপশন দিয়ে দেব..না সরি..আমি একজন ডাক্তারের নাম লিখে দিচ্ছি, ওনাকে দেখিয়ে নিয়মিত ওষুধ খাবেন..”।
“ তার আর দরকার কি? আপনি নিজেই যখন দেখলেন..”।

এর পরের অংশ শোনার ভাগ্য আমার আর জোটেনি। তবে যেটি করা ও দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল, তাতে অনেক দুর্মুখের মুখে ছাই দিয়ে ন্যাড়াকে নিয়ে বেলতলাতে আমাকে আবার যেতেই হল। এই প্রজাপতি নির্বন্ধে নটে গাছটি মুড়ল কিনা জানিনা, তবে বেলতলা থেকে পূর্বপুরুষের কোন মহা পুন্যের জরেই হয়তবা সুস্থ সবল দেহেই ফিরেছি এ কথা হলপ করে বলতে পারি।
----------------------------------------------------------
লেখকঃ আমানুস খান ।





সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×