-আচ্ছা ।এই চল্লিশ টাকা ভাঙিয়ে এখন মোড়ের হোটেল থেকে চা পরটা নিয়ে আসো যাও ।সকালে ভাতের পর কিছু খাওয়া হয়নি সজীব রাজীবের ।
ঘুমন্ত আধপেটা ভুক্ত পুত্রযুগলের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে যায় সৌরভ । কাপাঁ কাপাঁ হাতে বিল মিটিয়ে নাস্তা নিয়ে বাড়ির পথ ধরে সে । সদ্য চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর থেকে সংসারে এই দুরবস্থা ।প্রেম করে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে বলে প্রিয়াংকার বাপের বাড়ি থেকেও কথাবার্তা আসে যায় না ।নিজের অদৃষ্টের কথা ভাবতে ভাবতে অন্ধকার গলিটাতে ঢোকে সৌরভ ।
----------
পিরিচ ছাড়া কাপ দুটো কাবার্ড থেকে বের করে ধুয়ে আনল প্রিয়াংকা । কাপের চেহারা দেখেই ঘরের হালত অনুমেয় । বাচ্চা দুটোকে ডিম পরটা ভাগ করে দিয়ে দুজনে কাপ ভরে চা নেয় ।
-ঘরের চাল বাড়ন্ত-আর?
-নুন ,মরিচ, মশলা ,তরকারী কিচ্ছু নেই ।
-অনেকদিন মাংস খাওয়া হয়না ।
-পেটের চেয়ে হা একটু বড় হয়ে যাচ্ছেনা ?
মিষ্টি হাসে প্রিয়াংকা ।চোখ জুড়িয়ে যায় সৌরভের । এই টোল পড়া হাসির প্রেমে পড়েই তো মজেছিল প্রিয়াংকার ভালবাসায় ।
-কেন গো সুন্দ্রী ? আর কিসের অভাব আমাদের ?বিশ টাকা যখন বানাতে পারলাম এক হাজার টাকাও বানাতে পারব ।বিস্ময়ে বিস্ফারিত হল প্রিয়াংকার আখিঁযুগল ।
-সত্যি?
-এখনো ট্রাই করিনি ।থাকনা ।
সজীব রাজীবকে পাশের বাসায় টিভি দেখতে পাঠিয়ে দিয়ে তালুর ভেতর একমনে পিষতে থাকে বিশ টাকার নোটটা । টেবিলে জমতে থাকে নোটের বান্ডিল । প্রিয়াংকা পাশে দাড়িঁয়ে ভাজ করছে টাকাগুলো ভাজ করছে ।
-হবে তো এতে?
-বোধহয় । ঠিকাছে ঘুরে আসি ।
ঘন্টা দুয়েক পর দুহাত ভরা বাজার করে ঘরে ফিরল সৌরভ । ইলিশ, খাশির রান ,পালং শাক ,টুনা মাছ আর ফুলকপিতে ব্যাগ টাইট ।পথে আসার সময় বোস ব্রাদার্স থেকে দু কেজি মালাই আর মিষ্টি দই নিয়ে এসেছে ।আজ আর খানা শেষ হবার ভয় নেই । পেট ঠেসে ভাত খাওয়ার পর যখন তিন বছরের রাজীব আরেকটা মালাই খুজল চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এল সৌরভের ।প্রিয়াংকার আপত্তি সত্ত্বেও ছেলেকে আবার বাটি ভরে মিষ্টি দিল বাপ ।-খাক না!জীবনে প্রথমবার ।কিছু না বলে পাশ ফিরে বাম হাতের চেটোয় চোখ মুছে নিল প্রিয়াংকা ।আট বছরের দাম্পত্য জীবনে দাওয়াত ছাড়া কেবল হাতে গোনা কয়েকবার বাসায় এরকম জম্পেশ খাওয়া হয়েছে । বুকটা ভারি হয়ে এল সৌরভের অতৃপ্তিতে । বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করার মত বোকামি আর হয় না ।হয়ত মানুষটা ভালবেসে খাপ খাইয়ে নেবে দুরবস্থার সাথে ।কিন্ত তাকে অসুখী দেখলে বুক এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় । গত কয়েক বছরে নতুন শাড়িও দেয়া হয়নি প্রিয়াংকাকে । পকেট থেকে ডানহিলের প্যাকেটটা বের করে একটা শলা ধরাতে ধরাতে ভাবে সৌরভ ।চোখটা লেগে এসেছিল । প্রিয়াংকার ডাক তন্দ্রা ছুটে গেল ।
-ওগো শুনছো?
-কি?
-কেউ সন্দেহ করেনি তো নোটগুলো নিতে?
-উহুঁ ।
-কাজটা কিন্ত জালিয়াতি । ধরা পড়লে কি হবে ভেবেছ?
-কোন কাজটা জালিয়াতি?
-টাকা জাল করাটা ।
-জাল কেমনে?নিজের চোখেই তো দেখলে কেমন নিখুঁত ।যাও ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে এসো ।
গ্লাসে পর্যবেক্ষন করেও শংকা কাটেনা প্রিয়াংকার ।
-অভাব কাটবে তো আমাদের?
-নিঃসন্দেহে ।উপরওয়ালার দৃস্টি পড়েছে এতদিনে আমাদের উপর ।
-বাড়িভাড়া বাকি, রেশনকার্ড রিনিউ, বাচ্চাদের স্কুলের বেতন সব বাকি ।
- হয়ে যাবে ।পরম ভরসায় সৌরভের বাহুডোরে হাত রাখে প্রিয়াংকা । রাতটা স্মরনীয় হয়ে থাকবে প্রিয়াংকার জীবনে । পরম সুখে ঘুমাচ্ছে বাচ্চারা ।নতুন কেনা টেবিল ফ্যানটার ঝিরঝিরে বাতাস পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে ভ্যাপসা গরমে । অকপটে দুজনে দুজনার কাছে মেলে ধরে মন ।কত কি আশা,স্বপ্ন,মনেরগোপন কথা সব ব্যক্ত করে দুজনে ।পরদিন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে টাকা বানাতে বসল স্বামী স্ত্রী ।একের পর এক বান্ডিল জমা হতে থাকল । বিশ হাজারের আগে থামল না সৌরভ ।উফফ!ঘেমে নেয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে ।গোসল শেষে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে দুজনে বেরিয়ে পড়ে শপিংয়ে । আজ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে !দুপুরের আগে বাড়ি ফিরল তারা । সি এন জি বোঝাই শাড়ি,ডিনার সেট,কসমেটিকস,খেলনা,জুতো দেখে চোখ কপালে উঠল প্রতিবেশীদের । সবার সন্দেহ হবার আগেই একটা নিরিবিলি দেখে ভাল বাসায় উঠার তাগিদ অনুভব করে সৌরভ । সপ্তার পর সপ্তা লাগাতার শপিংয়ে ঠেসে যায় ঘর ।এক পড়ন্ত বিকেলে সৌরভ গিয়ে হাজির হয় তার পুরনো আড্ডার আখড়ায় ।টাকা পয়সার টানাটানি শুরু হবার পর থেকে এদিক আর আসা হয়নি । ডানহিল একটা ধরিয়ে চায়ের অর্ডার দেয় সৌরভ রেস্তোরায় । আস্তে আস্তে উপস্থিত হতে থাকে সৌরভের পোংটাকালের বন্ধুরা ।হাইস্কুলের ক্লাসমেট অনঘ ইতিমধ্যে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় দালাল হিসেবে সুনাম করেছে ।আড্ডায় ঠাট্টায় চায়ে সবার নজর কাড়ে সৌরভ ।গায়ের ফিনফিনে হাওয়াই শার্ট,এপেক্সের চকচকে চপ্পল নজর কাড়ে সবার । কিছু বলতে গিয়েও বলেনা কেউ চক্ষুলজ্জায় ।আজ কুছ পরোয়া নেই । দেদারসে খরচ করতে করতে সবাইকে দুই রাঊন্ড চাপের মাংস আর তেহারী খাইয়ে ফেলে সৌরভ ।আড্ডা শেষে অনঘকে এক কোনায় টেনে বসে সৌরভ
-মামা !পরিচিত কোন ডুপ্লেক্স বাংলো আছে ?
-কেনার জন্য?
-তাইলে কি প্রিয়াংকা চোপড়ার সাথে রামলীলা করার জন্যে?
-তোমার বউ প্রিয়াংকা কিন্ত টাইট ।চোখ টিপে অনঘ ।
-ধুস শালা ।কিনব বাংলো
-তর পকেট হঠাত্ সালমা হায়েকের মত হট হয়ে উঠল কেমনে মামা?
-শেয়ারের ব্যবসায় বাজি জিতেছি ।
-আচ্ছা দেখি কথা বলে ।যাওয়ার সময় হাজার পাচেঁকের একটা বান্ডিল গুজে দেয় দালাল অনঘের হাতে । রেস্তোরা থেকে বেড়িয়ে বাড়ির পথ ধরে সৌরভ ।সি এন জির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে যাত্রী ছাউনিতে ।হঠাত্ পেপার স্ট্যান্ডে রাখা গতকালের দৈনিকের হেডিংয়ে চোখ আটকায় সৌরভের । তাড়াতাড়ি ক্লিপ খুলে হাতে নেয় পেপার ।
::::বিশ টাকার জালনোট::::
এতদ্ধার জনসাধারনের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে একই ক্রমিক সংখ্যার একাধিক বিশটাকার ব্যাংক নোট বাজারে চালু হয়েছে ।নিপুন দক্ষতার সাথে জালিয়াতি করা নোটগুলোতে ক্রমিক নং ছাড়া শনাক্ত করার উপায় নেই ।ক্রমিক নং- ছ৬৭৬১৮২০৪ । কারো হাতে এই সিরিয়ালের নোট দেখিলে তত্ক্ষনাত পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগের অনুরোধ রইল । অনুরোধক্রমে- বাংলাদেশ ব্যাংক ।
হাত থেকে সিগারেট পড়ে গেল সৌরভের । ভাগ্যিস বসে ছিল ।নাহলে মাথা ঘুরে পড়ে যেত ।নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে সৌরভ সে কি অপরাধ করছে?কারো ক্ষতি করছে?সরকার টাকা ছাপছে,ব্যাংকের মাধ্যমে পাবলিক পাচ্ছে,একসময় নোটগুলো পুরনো অচল হয়ে পড়লে ব্যাংক তা পুড়িয়ে ফেলছে । এরমধ্যে কিছু টাকা কৃপনরা পুতেঁ ফেলছে,কিছু পুড়ে যাচ্ছে অগ্নিকান্ডে ।তারমানে এক লাখ টাকা ছাপলে তার মধ্যে পাচঁ হতে দশহাজার টাকা ব্যাংকেই আসছে না । এ অভাব সৌরভ পূরন করে দিলে ক্ষতি কি? এতে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে না,মুদ্রাস্ফীতি তো হচ্ছেই না বরং সার্কুলেশন চালু থাকছে ।আকাশপানে তাকিয়ে যেন খোদাকেই দুষল সৌরভ । ক্ষমতা যদি দেবে তা সীমাবদ্ধ কেন?সি এনজি একসময় বাসার সামনে এসে থামে আনমনে ভাবতে ভাবতে হঠাত্ আবিস্কার করে সৌরভ ।বাসায় ঢুকে জামাকাপড় না ছেড়েই নতুন কেনা কাউচে গা এলিয়ে দিল সৌরভ ।প্রিয়াংকা তড়িঘরি করে লেবুর শরবত এনে হাতে দিল ।
-চালাকের গলায় এবার দড়ি পড়ল বোধহয় ।
গেলাসে চুমুক দিতে দিতে বলল সৌরভ ।
-কি হয়েছে?
উত্কন্ঠা চাপা থাকে বউয়ের গলায় ।
-বানানো টাকা সবগুলোর সিরিয়াল এক । প্রত্যেকটা নোটের নম্বর যে এক ও অভিন্ন তা চোখ এড়িয়ে গেছে । হয়তো ব্যাংকের কোন টেলারের চোখে ধরা পড়েছে নোটগুলো গুনতে গিয়ে ।
-সাড়ে সর্বনাশ !এখন কি হবে?
-বুঝতে পারছিনা!ভেবে বের করতে হবে । যা করব তারজন্য মাস্টারমাইন্ডেরমত চিন্তা করতে হবে ।
-যাই করো তাড়াতাড়ি কর ।টেনশন আর ভাল্লাগেনা ।
মুখ ঝামটা দিয়ে কিচেনে চলে গেল প্রিয়াংকা ।সিগারেট একটা ধরিয়ে পকেট হাতড়ে গোটা পাচেঁক দশ টাকার নোট আর পঞ্চাশ টাকার নোট পাওয়া গেল । প্রতিটি ব্যবহৃত ও আলাদা সিরিয়াল নংয়ের ।বিশ টাকার নোট বানানো গেলে একশ টাকার ও বানানো যাবে । এবার প্রত্যেক নোটের একেকটা কপি বানিয়ে তারসাথে আরেকটা বড় নোটের কপি একসাথে করে আলাদা আলাদা পকেটে রেখে বেড়িয়ে পড়ল সৌরভ । পান,সিগারেট,চকলেট কিনে টাকাগুলো ভাঙিয়ে আবার বাড়িতে এসে বসল ।এবার দু টাকা ,একশ টাকার আরো কিছু নোট বানিয়ে আবারো আলাদা পকেটে রাখল । পাশের বাসার নুরুদ্দিন ভাই থেকে পাচহাজার টাকার মত ধার আনাল প্রিয়াংকাকে দিয়ে এক হাজার আর পাচঁশ টাকার নোটে । সবগুলোর একেকটা কপি করে আবার টাকাগুলো ফেরত দিয়ে আসল সৌরভ । এক সেট টাকা প্রিয়াংকার কাছে ।আরেক সেট টাকা ডান পকেটে এবং বাম পকেটে আরেক সেট নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সৌরভ ।গট গট করে হেটেঁ সোনালী ব্যাংকে ঢুকলো সৌরভ। বউয়ের একাঊন্টে আট হাজার ছয়শ চল্লিশ টাকা ট্রান্সফার করে দিল সে । টাকাগুলো ব্যাংকে গিয়ে সিরিয়াল ওলটপালট হয়ে যাবে । এরপর পোস্ট অফিসে গিয়ে মানি অর্ডার করল বাকি আরেক সেট ভুয়া প্রেরক নামে নিজের বাসার ঠিকানায় ।এভাবে চট জলদি দ্ধিগুন করে ফেলায় কেউ ট্রেস করতে পারবে না টাকার উত্স । কেনাকাটার সময়ও সতর্ক থাকল সৌরভ যাতে একই দোকানে মাস খানেকের ভেতর যেতে না হয় । নিয়মিত ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ায় ভাল এমাউন্ট জমা হচ্ছে একাউন্টে ।সব হোয়াইট মানি ।অপরদিকে দালাল অনঘ এরিমধ্যে কারিশমা দেখিয়েছে ।ধানমন্ডির তের নং রোডে লেকের উত্তর পারে সুন্দর তেতলা একটা বাড়ি ম্যানেজ করে ফেলেছে । বাড়ির লন,বাগান,সুইমিং পুল দেখে প্রিয়াংকার কিশোরীদের মত উচ্ছাস সৌরভকে অনুভূত করালো আসলেই! টাকা দিয়েও সুখ কেনা যায় । মাস ঘুরতে না ঘুরতেই রেজিস্ট্রি হাতবদল ।এসব কেসে ফাইল বছর পর্যন্ত ঝিমোয় রাজউক কর্মকর্তাদের টেবিলে ।কিন্ত নগদ নারায়ন এখানে উসাইন বোল্টকে হার মানিয়েছে । কমিশন খেয়ে দালাল অনঘের শরীরেও তেল এসে গেছে । প্রতিদিন বিকালে হোন্ডা সিভিক হাকিঁয়ে ধানমন্ডি লেকের আশে পাশে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায় ।কথায় বলে- উপর ওয়ালা যাব দেতাহে ছাপ্পান ফারকে দেতাহে.. কাভি কাভি ব্যান্ড ভি বাজা দেতাহে । জালিয়াত ফ্যামিলিরও ব্যান্ড বাজা বারাত হতে চলল বলে !এক পড়ন্ত বিকেলে সোনালি বর্ডার দেয়া মগে কফি খেতে খেতে লনে সজীব রাজীবের সাথে পাশেল হাঊজিংয়ের বাচ্চাদের দুরন্তপনা দেখছিল স্বামী স্ত্রী ।এসময় খোয়া বিছানো ড্রাইভ ওয়েতে এসে থামল একটা পুরোন মডেলের এম্বাসেডর । দস্তুরমত স্যুট পরা টেকো দুই লোক এসে দাড়াঁল চেয়ারে বসে থাকা সৌরভের সামনে ।আইডি বাড়িয়ে দিল দুজনেই ।ইনকাম ট্যাক্স!
-জরুরি কথা ছিল আপনার সাথে । হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল স্যুটেড অফিসারদের একজন ।
-সেতো বুঝতেই পারছি ।
বাড়ানো হাতটা মুঠোর ভেতর নিতে নিতে বলে সৌরভ । কলজেটা মুখের কাছে উঠে এলেও গলা শান্ত রাখতে আপ্রান চেষ্টা করে ।
-বাড়িঘর তো জম্পেশ সাজিয়েছেন দেখছি ।
- হা হা হা । হেসে উঠল সৌরভ যেন অফিসার একটা জোক বলেছেন । নার্ভাসনেস চাপা থাকল না তাতে ।
-সার্ভিস হোল্ড করছেন?নাকি বিজনেস ?
-ঠান্ডা না গরম? প্রশ্নটা যেন শোনেইনি সৌরভ ।
-গরম প্লিজ । কিছু জানতে চাইছিলাম ।
-বসে বসে খাচ্ছি । বাটলারকে দুটো ল্যাটের অর্ডার দিল ।
-বসে খেলে রাজার ধনও ফুরোয় ।
-যদি রাজার ধন নিত্য মজুদ হয় তবে নয় ।
-উই আর ইন্টারেস্টেড । আগ্রহে পিঠ সোজা হয়ে যায় অফিসারের ।
-নাথিং স্পেশাল । বাতাসে হাত নাড়ে সৌরভ ।
-কিছু তো অবশ্যই ।এই যে আপনার গত তিনমাসের খরচের বিবরন । হাতের HTC sense স্মার্টফোনটা এগিয়ে দেয় একজন । হাতে নিয়ে দেখে সৌরভ মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ডে খুব সুন্দরকরে টুকে রাখা হয়েছে তার গত তিনমাসের আনুষঙ্গিক শপিং বিবরন ।
-কেন এত আয়োজন? গা এলিয়ে দেয় সৌরভ ।
-আপনার উপর স্পাইং করে বের করা হয়েছে আপনি গত তিন মাসে আঠাশ লাখ বত্রিশ হাজারের মত টাকা খরচ করেছেন ।দুইভাবে এরকম উপায়ে বড়লোক হওয়া যায় । এক-জুয়া খেলে ,দুই-ড্রাগস স্মাগল করে । আপনারটা উপায়টা আমরা জানতে চাই ।
-যদি না বলি?
-দেখুন মিঃ সৌরভ! আপনার বেপারে কোন অপরাধের প্রমান নেই আমাদের হাতে ।আপনার গতিবিধি সন্দেহজনক ঠেকেছে ।চাইলে আপনাকে ফাসাঁনো যায় । চ্যালেন্জ করবেন? চালিয়াতি হাসে অফিসার ।পুলিশ ছুলেঁ আঠারো ঘা ,ইনকাম ট্যাক্স ছুলেঁ চিকেন পক্স কথাটা হাড়ে হাড়ে টের পেল সৌরভ ।নিজের কপাল নিয়ে জুয়া খেলবে এবার ঠিক করল সে ।
-ভেতরে আসুন আমার সাথে ।
বউকে কিচেনে পাঠিয়ে দিয়ে অন্দরের দিকে এগোতে এগোতে বলল । ভেতরে ঢুকে অফিসার যুগল মখা হয়ে গেল ইন্টেরিয়র ডিজাইন দেখে । ৫৪ ইঞ্চি OLED টিভি,মখমলের কাউচ,দু টনের এয়ার কুলার,বিদেশী শো পিস দেখে চোখ কপালে উঠে গেল তাদের ।
-আমি টাকা বানাই । বোম ফাটাল সৌরভ ।ঘরে এখন কবরের নীরবতা ।পিন পড়লেও ককটেল ফোটার মত শব্দ হবে ।
-অসম্ভব!
-কেন?
-আপনার ঘরের প্রতিটি ইঞ্চি সার্চ করা হয়েছে ।তাছাড়া টাকা ছাপাতে যেসব জিনিসপাতি লাগে তাও পাওয়া যায়নি ।গাড়ির কোন চালান বাইরে যায় না । ড্রাইভার, মালি ,কাজের লোক যারা সবাই আমাদের স্পাই ।
-ছাপাই কখন বললাম?বললাম বানাই ।
-আচ্ছাহ!মুখ দিয়ে বেরোয়? ব্যঙ্গ করলেন অফিসার ।
-ওরকমই ।পঞ্চাশ টাকা হবে?
বিহবল অফিসারদের একজন ওয়ালেট খুলে নোট একটা বের করে দিল । দুহাতে নোটটাকে চেপে পরিস্কার করে পাশের টি টেবলের উপর রেখে হাতে চেপে ধরে ঘষতে শুরু করে সৌরভ চোখ বন্ধ করে । গুনে গুনে ত্রিশ সেকেন্ড !খড়খড়ে শব্দ ।অতঃপর দুটো নোট ।
-হলি কাউ! ম্যাজেল টোভ! গলা চিরে আর্তনাদ বেরোয় দুজন অফিসারেরই ।ছোঁ মেরে একজন কেড়ে নেয় নোটটা । সুতো থেকে লেখা অবিকল মিল!মায় সিরিয়াল পর্যন্ত ।এটাই সবচে বড় ত্রুটি । -কেমনে সম্ভব?ঢোক গিলতে গিলতে বলল অফিসার ।জবাবে বিনয়ী হাসল সৌরভ । -আপনার সাজা কি হতে পারে জানেন? রাশভারী কন্ঠে বলে একজন ।
-অপরাধ প্রমান করতে পারবেন? কোর্টে লোক হাসবে না আপনাদের বয়ান শুনে ?হাতে চেপে কেউ টাকা বানাতে পারে ? একগাল হাসল সৌরভ । সত্যতা বুঝে অফিসাররাও চুপ মেরে গেল । অকাট্য যুক্তি ।
-কিন্ত আপনাকে তো অপরাধ করতে দিতে পারিনা আমরা ।
-ঠিকাছে ।আর অপরাধ করব না ।আমার পিছে লাগা ছেড়ে দিন আপনারা ।
-আর টাকা বানাবেন না বলছেন?
-জ্বি ।
-আগে আমাদের ব্যাখ্যা করুন মেথডটা ।
-নোটটা দুহাতে চেপে টেবিলে রেখে চোখ বন্ধ করে মনেপ্রানে কল্পনা করুন নোট দুটো হয়ে গেছে । ডিরেশান মানলেন অফিসার ।ফলাফল টাকা দুটো । হা হয়ে গেলেন তারা কেরামতি দেখে ।
-কাউকে বলবেন না আবার । টেবিলটা এক দরবেশ বাবার উপহার । গোমর ফাস করার ঢংয়ে বলে সৌরভ ।
-ও আচ্ছা !তাই বলুন । স্বস্তি ফিরে পায় অফিসার ।তারপর ধাইঁ করে ঘুসি মেরে গুড়িয়ে দেন কাচেঁর টি টেবল । মুচকি হাসি খেলে যায় সৌরভের ঠোটেঁ ।
-আর বানাতে হবে না টাকা ।আমরা এবার আসি । হাত ধুয়ে সাফ হয়ে যেতে চাইলেন অফিসার ।
-আপনাদের মর্জি ।
গাড়িতে চড়ে বিদেয় হন অফিসাররা ।আসলে টাকাটা ওদের হাতে বানালেও মনঃসংযোঘ করেছিল সৌরভ নিজে । ওদের ধোকাঁ দিলেও কথা রেখেছিল সে ।আর টাকা বানায়নি সে । তবে টাকা বানাবে না বলে কথা দিলেও আর কিছু যে বানাবে না এমন কথা তো কাউকে দেয়নি সে ।এই যেমন-দশ লাখ টাকার একটা হীরের আংটি বা নেকলেস অবিকল বানিয়ে নিতে তো কোন অসুবিধা নেই । এইতো বেশ আছে সৌরভ । (সমাপ্ত)