আমার জন্ম ছিল অপ্রয়োজনীয় ।
দেশে প্রতি মিনিটে ক্ষনিকের
জন্য চোখ মেলা নবজাতকদের মত
আমিও মরে যেতে পারতাম আমাদের
স্যাতস্যাতে শ্যাওলা পড়া
প্রসূতিঘরে ।কিন্ত আমাকে নিয়ে
অন্য প্ল্যান ছিল স্রষ্টার । আমি
আমার জন্মদাত্রীকেও মেরে
ফেলতে পারতাম গর্ভাবস্থায়
নিজের গলায় আম্বিলিকাল কর্ড
পেচিঁয়ে ।কিন্ত সেই অভাগীকে
নিয়েও অন্য প্ল্যান ছিল স্রষ্টার
।তার কষ্ট দীর্ঘায়িত করার
প্ল্যান ।প্রতিবেশীর মেয়ের
সাথে পুত্রের টাংকি মারার
প্ল্যান ।নালার পাশে হেরোইন
খেয়ে পড়ে থাকা পুত্রের প্রতি
পথযাত্রীদের হাস্যরসের
পাত্রীতে পরিনত হবার প্ল্যান ।
পুত্রবধূর হাতে প্রহারিত হবার
প্ল্যান ।
শিক্ষাজীবনে দুরন্তপনার কারনে
আমি খড়কুটোর মত ভেসে যেতে
পারতাম কালের চোরাস্রোতে ।
কিন্ত কোন এক কপালের ফেরে আমি
বুয়েটের একটা তকমা লাগিয়ে
ফেললাম কপালে । বন্ধুদের সাথে
র্যাডিসনে লাল পানি খেয়ে
সেলিব্রেট করতে পারতাম আমি ।
কিন্ত BUET লেখা টিশার্ট গায়ে
প্রতিবেশী ও আত্নীয় স্বজনদের
বাড়িতে ঘুরে তাদের ঈর্ষান্বিত
করাটাই মুখ্য ছিল আমার কাছে ।
চামে যদি মেয়ে পটানো যায় । পটে
গেলও এক ষোড়শী ।ইন্টার ফার্স্ট
ইয়ার পড়ুয়া মেঘার কাছে তখন আমি
ব্যাং ব্যাং ছবির হৃতিকের
চেয়ে কম আকর্ষনীয় নই ।কিন্ত তার
রক্ষনশীল পিতার হলুদ বিষ্ঠাযুক্ত
নোংরা বাঁ হাতের হস্তক্ষেপের
ফলে বিচ্ছেদ ঘটে আমাদের । আরো
দশজনের সামনে আমার পিতামাতাকে
অপমান করতেও ছাড়েননা তিনি ।
পাশ করে বিলাতে কিংবা দেশের
কোন এক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে
উচ্চ বেতনে কামলা খাটতে পারতাম
আমি ।পারলামনা কম সিজিপিএর
কারনে ।বেকার ঘুরি ।খাই দাই ।
হতাশায় দূষিত আমার নেশার জগতে
প্রবেশ ঘটে আমার সিনিয়র ভাইদের
হাতে পড়ে ।ঢামেকের পাশের নালা
থেকে বাবা আমাকে কাধেঁ করে
বাসায় নিয়ে আসেন এক বিকেলে ।
অঝোরে কাদেঁন মা ।নিন্দুকদের
মুখ টিপে হাসি যেন সালফিউরিক
এসিড হয়ে ছিটাঁ দিতে থাকে
অভাগীর পুত্রগর্বে ।মেজর
স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী হয় বাবা ।
জায়গা জমি বন্ধক রাখতে হয় তার
চিকিত্সার খরচ চালাতে । মাথা
ডানে বামে ঝাকাঁই আমি ।এমন তো
না হলেও পারতো ।জীবনের
রেলগাড়িটা বিনা ট্রাফিকে
চলতে পারতো তার ট্র্যাকে । পরে
এক চালবাজ বন্ধুর বুদ্ধিতে
একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড
দেখিয়ে ফেসবুকে পটিয়ে ফেললাম
এক ধনীর আদরের দুলালীকে ।
হেরোইন,ইয়াবার খপ্পড়ে আমার পকেট
তখন জয়নুল আবেদীনের ম্যাডোনা
-৪৩র পটভূমি । আমার দিনগুলো সব
পিকচারটিউববিহীন রঙিন হয়ে গেল ।
প্রিয়ার কন্ডিশনারের
সুবাসযুক্ত চুলে নাক ডুবাতে
ডুবাতে আমি মেথাএমফেটামিনের
ফ্লেভার ভুলতে বসলাম ।
আইনস্টাইনের থিওরি অফ
রিলেটিভিটি প্রতিদিন প্রমান
করতে লাগলাম তার হাত ধরে
রেস্টুরেন্টে বসে থাকতে
থাকতে ।অবশেষে পালিয়ে বিয়ে
করলাম আমরা ।লাল টুকটুকে বউ
প্রিয়াকে নিয়ে যখন ঘরে ঢুকলাম
মা বউয়ের সৌন্দর্য্যে বিমুগ্ধ
হলেও বাবা নিঃশব্দে তার রুমে
চলে গেলেন ।সন্ধ্যেয় মার কপাল
চাপড়ে বিলাপের পর জানতে পারলাম
ঘুমের মধ্যে থেকেই বহুদূর
পরপারের লাক্সারি কোচের এসি
টিকেট কেটেছেন আমার অভিমানী
চির মিতভাষী বাবা । সময়ের সাথে
শোক ভুললাম আমরা ।কোটিপতি
তনয়া প্রিয়ার খুবই কষ্ট হল আমাদের
সাথে ডাল আলু দিয়ে আহারকার্য
সারতে ।আমাদের পারিবারিক
অবস্থাকে হেয় করতে সে কথায় কথায়
।নিজেকে ড্রিল মেশিন বানিয়ে
মাটি ফেটে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করত
বউয়ের কাছে ছোট হবার চেয়ে ।একদিন
অশালীন উত্কট সাজগোজের জন্য
কড়া কথা শুনিয়ে দিলেন মা । মাকে
নাকি সে চ্যালকাঠ দিয়ে
পিটিয়েছে ।খবরটা শুনলাম পাশের
বাসার গুজববাজ আন্টির কাছে ।
বিশ্বাস করলাম উনুনের পাশে বসে
অভাগীর চোখের জলে উনুনের আগুন
নেভানোর ব্যর্থ প্রচেস্টা দেখে
।সেদিন প্রিয়ার ওপর রাগ করে ভাত
খেলাম না আমি । মাস ছয়েক পর
প্রিয়ার বাবাও মেনে নিলেন
আমাদের । মাকে তার অন্ধকার
স্যাতস্যাতে ঘরে রেখে আমি
কোটিপতি শ্বশুরের
টেট্রাপ্লেক্স বাড়িতে উঠলাম ।
মানে ঘরজামাই হলাম । গাউছিয়ার দু
তিনশ টাকা দামের শার্ট প্যান্ট
গা থেকে খসিয়ে রেমন্ডের স্যুট
চড়ালাম গায়ে ।ডারবি হলিউড ছেড়ে
ঠোটেঁ উঠল ডানহিল ।হাটঁতে চলার
পর টেম্পোর যাত্রী রাজসিক
গাড়িতে চড়ার আদত করে নিতেই খবর
পেলাম আমার মাও পরবাসী হয়েছেন
ছেলের উপর একরাশ ক্ষোভ নিয়ে ।
শেষরাতে একগ্লাস পানির তৃষ্ণা
নিয়ে দুনিয়া ছেড়েছেন মা ।কলসির
কাছে হাতে গ্লাস নিয়ে পড়ে
থাকা শক্ত ঠান্ডা মৃতদেহ জানতে
পারে সবাই ।অবশেষে স্রষ্টার সদয়
দৃষ্টি গেল তার দিকে ।
মরাকান্নার মত সামাজিক
সৌজন্যতা দেখিয়ে
আনুষ্ঠানিকতা সারলাম । সময়ের
সাথে সাথে রাজভোগও বিস্বাদ
লাগতে থাকে আমার ।মদদ যোগায়
বউয়ের খোটাঁ আর শ্বশুরের
তাচ্ছিল্য ।তাদের শুন্য থেকে
তুলে এনেছি ভাব দেখতে দেখতে
ত্যক্ত আমি ।একদিন প্রিয়ার কাপড়
ধোয়ার সময় তার ফিনফিনে নাইট
ড্রেসের স্ট্র্যাপ ছিড়ে
ফেললাম । কি না শুনতে হয়েছে
আমাকে !ফকিন্নির ছেলে থেকে
শুরু করে বান্দির পুত গালিও
শুনতে হয়েছে ।বাথরুমে ট্যাপ
ছেড়ে কাদাঁ ছাড়া করার কিছুই
ছিলনা । উঠতে বসতে শুতে চলতে
খোটাঁ শুনতাম আমি । এরিমাঝে
শনির উপগ্রহ হয়ে এলো আরিয়ান ।
আমার বীর্য ।আমার ডিএনএ বাহক ।
আমার পুত্র ।হুবহু আমার বাবার
চেহারা ।কি যে কষ্ট হত পুত্রের
মুখপানে তাকিয়ে থাকতে!ভাবতাম
বাবা হয়তো পুর্নজন্ম নিয়েছে
আমার দুর্দশা দেখতে ।কতনা কষ্ট
দিয়েছিলাম তাকে! আমার চোখের
সামনে বড় হতে লাগলো আরিয়ান ।
আধো আধো স্বরে বাবা ডাক শুনে
ভুলে যেতাম শাশুড়ি বউয়ের
অত্যাচারগুলো । এক্সিডেন্ট ঘটে
গেল হঠাত্ ।গুড়াঁ হলুদ কিনতে
ভুলে গিয়েছিলাম বাজারে গিয়ে
। বাড়ি এসে কিচেনে আটা বেলার
বেলন দিয়ে পিটাচ্ছিলো শাশুড়ি
আম্মা ।বুকের ভেতর ফুসেঁ ওঠা
আক্রোশ দাবানল ছড়ালো আমার
শিরা ধমনীতে ।লাভা হয়ে বেড়োল
আমার হাতে পায়ে । কোমড়ে দশাসই
একটা লাথি মারতেই ককিঁয়ে উঠলেন
তিনি ।চুলের মুঠি ধরে স্টীলের
ওয়াল কেবিনেটে ঠুকেঁ দিলাম
জোরসে ।দরদর করে রক্ত বেরোলো
শালীর কপাল ফেটে ।ভয় পেয়ে
গেলাম ।একি করলাম!হাত ধরে দেখলাম
পালস নেই ।হৃদস্পন্দন ও নেই ।
কমপ্লিট ডেড । দেয়ালে ঠেস দিয়ে
বসলাম আমি । আমি বরবাদ হয়ে গেছি ।
যা হবার হয়ে গেছে । নিজেকেই
বাকিটা করতে হবে ।দেরাজ থেকে
ধারালো বটি দিয়ে কুপিয়ে
স্লাইস করলাম বডিটা ।পলিথিনের
ফিনাইল ভেজানো মপ দিয়ে ফ্লোর
মুছলাম ।মাথায় এখনো মাল উঠে আছে
।বেডরুমে শুয়ে আছে মাগীটা ।
এসির ঠান্ডা বাতাসে কেমন
কেলিয়ে আছে দেখো একবার !
রক্তাক্ত বটি দিয়ে জোরালো এক
পোচঁ দিলাম গলায় ।লাইন খুলে
যাওয়া পাইপের মত গলগল করে রক্ত
ছড়াচ্ছে গলবিল ।সাদা বিছানা
রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে ।বিচ্ছিড়ি
ঘড়ঘড় শব্দ করছে বিচ্ছিন্ন গলা
দিয়ে ।বেডে উঠে কষে এক লাথ
মারলাম আধবিচ্ছিন্ন মুন্ডুটাতে
।কড়াত শব্দে ভাঙলো ঘাড়ের হাড় ।
গড়িয়ে ব্যালকনির দিকে চলে গেল
মাথাটা ।সেখান থেকে নির্নিমেষ
পলকে তাকিয়ে থাকলো প্রিয়া ।
খাটের উপরেই কুপিয়ে প্যাকেট
করলাম প্রিয়াকে কিংবা প্রিয়ার
দেহটাকে ।ঝিঁ ঝিঁও ডাকছেনা
ভয়ে ।কবরের নিস্তব্দতা ।মাগরিবের
আজান দিচ্ছে বাইরে ।সন্ধে
ঘনিয়ে এসেছে ।বেডশিট আর রুমটা
পরিষ্কার করে প্যাকেটগুলো
গাড়ির ট্রাংকে ভরে বেরিয়ে
পড়লাম । বুড়িগঙ্গার পানি কালো ।
যে কোনো জিনিস গিলেও ভালো ।
প্যাকেট গুলোকে টা টা দিয়ে
চলে এলাম আজিমপুর গোরস্থানে ।
মা বাবাকে বড্ড মনে পড়ছে আজ ।
তাদের কবরের মাথার কাছে বকুল
ফুলগাছ ছিল একটা চোখে পড়েনি
আগে ।বকুল ফুলে ছেয়ে আছে কবর ।
হাপুস নয়নে কাদঁলাম অনেক্ষন
কবরের মাটি চাপড়ে ।আকাশে অনেক
তারা আজ ।তবুও নিঃসঙ্গ চাদঁ ।
ঠিক আমার মত ।একা ।নিস্তব্দ ।
লোকালয় থেকে বহুদূরে ।হাজার বছর
ধরে ।সে বিকিরিত করে আলো আর
আমি নিঃসঙ্গতা ।
একাকী রাত
জাগা সে নয় শুধু বাচাঁ
বিবেকের খোলসে আবৃত নয় সে
ঢালাই লোহার
খাচাঁ .....
(সমাপ্ত)