আমার কখনো ভাল কোন বন্ধু ছিলনা ।বেস্ট ফ্রেন্ড কি জিনিস আমি জানিনা ।অন্যদের নিজের স্বার্থে বনেছি অথবা আমি নিজের স্বার্থে বন্ধু বানিয়েছি ।
আমার কখনো ভালো প্রেমিকা ছিলনা ।কারন,এখানেও স্বার্থ ।আমার জীবনটা খুব ম্যাড়মেড়ে ।তবে হ্যা!আমার একটা ভালো বাবা আছে ।যার রক্ত শরীরে নিয়ে ঘুরছি আমি । যার সাথে আমার সম্পর্কটা স্বার্থের নয় ।
আশ্চর্যের বিষয়! কখনো তার চোখে পানি দেখিনি আমি।আমাদের দুই ভাইয়ের রোগে,পরীক্ষায় ব্যর্থতায়,অভিযোগে তার চোখে সবসময় ফুটে উঠত হতাশা ।আমি সেই হতাশ চোখ তাকিয়ে দাতেঁ দাতঁ চেপে প্রেরনা খুজঁতাম ।পরক্ষনেই উদ্যম নিয়ে ঝাপিঁয়ে পড়তাম আবার ।
ক্লাস এইটে পড়ালেখার দুরবস্থা দেখে বিদ্রুপ করতেন ।তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম রোল দশের ভেতরে থাকবো বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্টে ।ছিলাম । ক্লাস নাইনের বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে দুপুরে না খেয়ে ছিলাম ।ফেল করেছি ।বাবা এসে একটা কথাই বলেছিল-
"ভাত কি দোষ করলো?"
কলেজে ছোটখাটো একটা কেলেঙ্কারিতে বাবার ডাক পড়লো প্রিন্সিপালের অফিসে ।আমাকে টিসি না দেয়ার জন্য বাবাকে সেদিন হাত জোড় করতে দেখেছিলাম । সারারাত ঘুমাতে পারিনি ।তার পায়ে হাত রেখে কেদেঁছি ।দরজা বন্ধ করে বাবার একজোড়া পুরনো জুতা পালিশ করেছিলাম সারারাত কাদঁতে কাদঁতে ।আমার জন্য তার মাথা হেটঁ হয়েছে ।সেটা উচুঁ করাও আমার দায়িত্ব ।কিন্ত না ,আমি দুই মাস পর আবার তাকে ছোট করলাম অন্যদের কাছে ।
কি হতাশা নিয়েই না বললেন আমাকে প্রাইভেটে পড়ানো সম্ভব নয় ।ন্যাশনালে পড় ।প্রথমবার ভার্সিটিতে না টেকার পড় ।কিন্তু আমি যে হেরে যেতে শিখিনি ।লড়ে গেছি আপ্রান । এখন বাড়ি গেলে মায়ের কাছে শুনি সে কিভাবে কলারে হাত দিয়ে বন্ধুদেরকে বলে তার বড় ছেলে এখন চবিতে পড়ে ।গর্বিত হই ।তাকে গর্বিত করতে পেরে ।
অভাব কি জিনিস দেখিনি কোনদিন ।বলতে পারবোনা কখনো সে একবেলা না খাইয়ে রেখেছে ।এমন পিতা দুর্লভ ।সে আমার সংগীত শোনার রুচিতে পরিবর্তন এনে দিয়েছে ।আমার হাটাঁচলা, ব্যক্তিত্ব,পড়ালেখায় ফাকিঁবাজি সবই তার ডিএনএর কল্যানে (দাদি আর বড়ফুফু বলেছেন ।
মজার কাহিনি বলতে মনে পড়ে কাপ্তাই গিয়েছিলাম গত ডিসেম্বরে আমি আর বাবা ।তার পকেট প্রহারিত হলো ।অতঃপর আমার পকেট থেকে লাঞ্চ করলাম হাসঁ আর মুরগীর মাংস দিয়ে ।গাড়িভাড়া দিলাম ।চা ,পান, সিগারেট খাওয়ালাম ।চেহারা দেখার মত হয়েছিল সেদিন ।
বাড়ি গেলেই বলেন তিনি আমার কামাইয়ের টাকা চাননা ।আমি যাতে নিজে খেয়ে পড়ে সুখে থাকি । শুধু একজন ছেলেই বুঝতে পারে তার পিতার মনের কথা ।
তাকে নিয়ে বন্দনা একহাজার পাতায়ও শেষ হবেনা ।মাথার উপর ছায়াটা যদি না থাকতো এতদূর আসা হতোনা ।আমি ধন্য । আজ প্রায় একুশ বসন্ত পার করেছি ।কোনবারই তাকে বলিনি হ্যাপি ফাদার্স ডে কিংবা আই লাভ ইউ বাবা ।তিনি আশাও করেননা ।আমিও প্রয়োজন মনে করিনা ।এসবের আসলে দরকার পড়েনা ।
ভার্সিটিতে গন্ডগোলের খবর শুনলেই উদ্ধিগ্ন হয়ে ফোন দেন ।এমনকি পত্রিকা টিভি দেখে আমার চে বেশি ধারনা রাখেন ভার্সিটির রাজনীতি নিয়ে ।বিরক্ত হই ।আবার হাসি তার বাতুলতা দেখে ।
এই কথাগুলো তিনি কখনোই জানবেননা ।ফেসবুকে পোস্ট করার উদ্দেশ্য লাইক কমেন্ট পাওয়া নয় ।অন্যদের দেখানো যে !
দেখো আমার বাবা কত অসাম ! :*
হয়তো কোন এক বাবা দিবসে এই লিখাটা প্রিন্ট করে তার হাতে গুজে দেবো !
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৩