somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাবা কিংবা একজন অতিমানব

২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার কখনো ভাল কোন বন্ধু ছিলনা ।বেস্ট ফ্রেন্ড কি জিনিস আমি জানিনা ।অন্যদের নিজের স্বার্থে বনেছি অথবা আমি নিজের স্বার্থে বন্ধু বানিয়েছি ।

আমার কখনো ভালো প্রেমিকা ছিলনা ।কারন,এখানেও স্বার্থ ।আমার জীবনটা খুব ম্যাড়মেড়ে ।তবে হ্যা!আমার একটা ভালো বাবা আছে ।যার রক্ত শরীরে নিয়ে ঘুরছি আমি । যার সাথে আমার সম্পর্কটা স্বার্থের নয় ।

আশ্চর্যের বিষয়! কখনো তার চোখে পানি দেখিনি আমি।আমাদের দুই ভাইয়ের রোগে,পরীক্ষায় ব্যর্থতায়,অভিযোগে তার চোখে সবসময় ফুটে উঠত হতাশা ।আমি সেই হতাশ চোখ তাকিয়ে দাতেঁ দাতঁ চেপে প্রেরনা খুজঁতাম ।পরক্ষনেই উদ্যম নিয়ে ঝাপিঁয়ে পড়তাম আবার ।

ক্লাস এইটে পড়ালেখার দুরবস্থা দেখে বিদ্রুপ করতেন ।তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম রোল দশের ভেতরে থাকবো বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্টে ।ছিলাম । ক্লাস নাইনের বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে দুপুরে না খেয়ে ছিলাম ।ফেল করেছি ।বাবা এসে একটা কথাই বলেছিল-
"ভাত কি দোষ করলো?"

কলেজে ছোটখাটো একটা কেলেঙ্কারিতে বাবার ডাক পড়লো প্রিন্সিপালের অফিসে ।আমাকে টিসি না দেয়ার জন্য বাবাকে সেদিন হাত জোড় করতে দেখেছিলাম । সারারাত ঘুমাতে পারিনি ।তার পায়ে হাত রেখে কেদেঁছি ।দরজা বন্ধ করে বাবার একজোড়া পুরনো জুতা পালিশ করেছিলাম সারারাত কাদঁতে কাদঁতে ।আমার জন্য তার মাথা হেটঁ হয়েছে ।সেটা উচুঁ করাও আমার দায়িত্ব ।কিন্ত না ,আমি দুই মাস পর আবার তাকে ছোট করলাম অন্যদের কাছে ।

কি হতাশা নিয়েই না বললেন আমাকে প্রাইভেটে পড়ানো সম্ভব নয় ।ন্যাশনালে পড় ।প্রথমবার ভার্সিটিতে না টেকার পড় ।কিন্তু আমি যে হেরে যেতে শিখিনি ।লড়ে গেছি আপ্রান । এখন বাড়ি গেলে মায়ের কাছে শুনি সে কিভাবে কলারে হাত দিয়ে বন্ধুদেরকে বলে তার বড় ছেলে এখন চবিতে পড়ে ।গর্বিত হই ।তাকে গর্বিত করতে পেরে ।

অভাব কি জিনিস দেখিনি কোনদিন ।বলতে পারবোনা কখনো সে একবেলা না খাইয়ে রেখেছে ।এমন পিতা দুর্লভ ।সে আমার সংগীত শোনার রুচিতে পরিবর্তন এনে দিয়েছে ।আমার হাটাঁচলা, ব্যক্তিত্ব,পড়ালেখায় ফাকিঁবাজি সবই তার ডিএনএর কল্যানে (দাদি আর বড়ফুফু বলেছেন :P

মজার কাহিনি বলতে মনে পড়ে কাপ্তাই গিয়েছিলাম গত ডিসেম্বরে আমি আর বাবা ।তার পকেট প্রহারিত হলো ।অতঃপর আমার পকেট থেকে লাঞ্চ করলাম হাসঁ আর মুরগীর মাংস দিয়ে ।গাড়িভাড়া দিলাম ।চা ,পান, সিগারেট খাওয়ালাম ।চেহারা দেখার মত হয়েছিল সেদিন :D

বাড়ি গেলেই বলেন তিনি আমার কামাইয়ের টাকা চাননা ।আমি যাতে নিজে খেয়ে পড়ে সুখে থাকি । শুধু একজন ছেলেই বুঝতে পারে তার পিতার মনের কথা ।

তাকে নিয়ে বন্দনা একহাজার পাতায়ও শেষ হবেনা ।মাথার উপর ছায়াটা যদি না থাকতো এতদূর আসা হতোনা ।আমি ধন্য । আজ প্রায় একুশ বসন্ত পার করেছি ।কোনবারই তাকে বলিনি হ্যাপি ফাদার্স ডে কিংবা আই লাভ ইউ বাবা ।তিনি আশাও করেননা ।আমিও প্রয়োজন মনে করিনা ।এসবের আসলে দরকার পড়েনা ।

ভার্সিটিতে গন্ডগোলের খবর শুনলেই উদ্ধিগ্ন হয়ে ফোন দেন ।এমনকি পত্রিকা টিভি দেখে আমার চে বেশি ধারনা রাখেন ভার্সিটির রাজনীতি নিয়ে ।বিরক্ত হই ।আবার হাসি তার বাতুলতা দেখে ।

এই কথাগুলো তিনি কখনোই জানবেননা ।ফেসবুকে পোস্ট করার উদ্দেশ্য লাইক কমেন্ট পাওয়া নয় ।অন্যদের দেখানো যে !
দেখো আমার বাবা কত অসাম ! :*

হয়তো কোন এক বাবা দিবসে এই লিখাটা প্রিন্ট করে তার হাতে গুজে দেবো !
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×