প্রথম পর্ব
আম কাহিনিঃ বাঙালী ক্রেতা বনাম সুন্দরী থাই আম বিক্রেতা!
ক্রিকেট অথবা আমকাহিনি ২ঃ কট বিহাইন্ড
আজকাল একটু গরমেই হাসফাঁস অবস্থা হয়ে যায়। একটা সময় ছিল যখন মাথার উপর রেগে আগুন সূর্য্যিমামাকে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা ক্রিকেট খেলতাম। এমন সময়টায় মাঝে মাঝেই ঝড়-বৃষ্টি বা কালবৈশাখি শুরু হয়ে যেত। ঝড়ে আম কুড়ানোর কিশোর অ্যাডভেঞ্চার পরিণত বয়সে এভারেস্ট পাড়ি দেয়ার চেয়ে কম রোমাঞ্চকর না। ঝড়ের সময় বেশিরভাগ লোকজন যেখানে দৌড়ে বাড়িঘরে গিয়ে আশ্রয় নিত সেখানে আমরা মাঠের পাশে সুবিধাজনক আমবাগানের নিচে পজিশন নিতাম। ঝড়ের দিনে মামাবাড়ি আমকুড়াতে সুখ! রাজশাহীতে রুয়েট ক্যাম্পাসটা একরকম মামাবাড়িই ছিল আমাদের। আর সেই মামাবাড়ি ছিল আম,লিচু আর জাম বাগানে ভরা। এক ঝড়ের দিনে আমরা ৫/৬ জনের দল গিয়ে বড়সর এক আমগাছের নিচে ঘাঁটি গাড়লাম। একজন দুজন পিচ্চি ছিল সেখানে। এত লোকের মাঝে আম কুড়িয়ে সুবিধা করতে পারবে না দেখে তারা অন্যদিকে চলে গেল। আম পড়তে শুরু করল একটা দু'টো করে। ঝাঁপিয়ে,মাটি কাঁপিয়ে আম কুড়াতে লাগলাম। এর মধ্যে হঠাৎ দেখি আমাদের এক দোস্ত বজলু উধাও। আশপাশ কোথাও নাই। কোথায় গেল সে? হঠাৎ মাথার উপর শোনা গেল বজলুর আওয়াজ , 'এই তোরা ক্যাচ ধর'। বলেই সে গাছ থেকে টপাটপ আম নিচে ফেলতে লাগল। যেহেতু কোন আম কখন পড়বে জানাই ছিল তাই বাতাসের শক্তি বনাম আমের শক্তির লড়াই নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাতে হরো না। মাটি কামড়ে ছুটে যাওয়া আম ধরার জন্য দৌড়াদৌড়ি,ঝাঁপাঝাঁপিও করতে হলো না। অতি সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশে আমরা আম দিয়ে ক্যাচ প্র্যাকটিস করতে তথা আম কুড়াতে লাগলাম। একটা ব্যাগও ভরে গেল সেই আম দিয়ে। ঝড়টা মোটেও শক্তিশালী ছিল না। এমন ছোটখাট ঝড়ে আমাদের ব্যাগ ভর্তি আম দেখে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আমকুড়ানি ছেলের দল। তাদের অবিশ্বাসী,ঈর্ষাকাতর দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করে আমরা বাড়ির পথে হাটা ধরলাম।
ক্রিকেট অথবা আমকাহিনি ৩ঃ হিটিং ম্যাংগো সিক্স
আমরা যখন মাঠে ক্রিকেট খেলতাম স্কুলের দারোয়ান চাচা প্রায়ই আমগাছের দায়িত্ব আমাদের দিয়ে চলে যেতেন। আমরা খুবই নিষ্ঠা ও দায়িত্ব নিয়ে আমগাছের দেখাশোনা করতাম। মাস্তান বড়ভাই ছোটবোনদের যেভাবে আগলে রাখে তেমনি আমরাও বাইরের পোলাপানদের আমগাছে লোভী দৃষ্টির প্রতি তীক্ষ্ণ খেয়াল রাখতাম। স্কুলের আমগাছ ছিল যেন নিজেদের বাপ-দাদার সম্পত্তি! খেলায় একটা নিয়ম ছিল আমাদের, ব্যাটসম্যান বল মেরে আম ফেলতে পারলে ডাবল ছক্কা অর্থাৎ ১২ রান হবে কিন্তু দারোয়ান চাচা দেখে ফেললে আউট। শুধু তাই না তখন বেচারা ব্যাটসম্যানকে সরি বলে আমটাও দিয়ে আসতে হত। আমগুলা বড় হলে আবার স্কুলের সবাইকে ভাগ দেয়া হত। তখন ছেলেমেয়েদের শুনিয়ে স্যার বলতেন,ওরা সারাদিন ক্রিকেট খেলে আর আমগাছ পাহারা দেয়। এই আমের জন্য শাহরিয়ারদের থ্যাংকস দিয়ে দিস তোরা সবাই! আমাদের সাথে যেহেতু বালিকারাও পড়ত তখন খুশিতে আর ভাবে আটখানা নয়খানা হয়ে যেতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৩১