somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তার: কখনও দ্বিতীয় ঈশ্বর, কখনও কশাই ! ব্যক্তিগত কয়েকটি অভিগ্গতার ডায়েরী ।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন ধরেই সবজায়গায় ডাক্তার-রোগী নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, যদিও এতে আসল কাজের কিছুই হবে বলে মনে হয় না । আমাদের ডাক্তাররা তাঁদের মতই রয়ে যাবেন - আর আমাদেরও যা সচারচর হয়, তাই হতে থাকবে । একসময় নতুন ইস্যু তৈরী হবে - সবাই ভুলে যাবে এই চর্বিত-চর্বণ । আসলে সব ডাক্তার যে খারাপ কিংবা সবাই যে ভাল তা নয় । স্বাভাবিক ভাবেই অন্যসব পেশার মতই ডাক্তারদের ভেতরেও ভাল মানুষ-খারাপ মানুষ দুই-ই আছে । তবে ইদানিং কালে ডাক্তারদের ভেতর 'ভালমানুষ' এর সংখ্যা খুবই রেয়ার হয়ে যাচ্ছে বলে হয়তোবা ডাক্তারদের ব্যপারে সাধারন মানুষের অবিগ্গতা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সুখকর হচ্ছে না । নির্দিষ্ট করে ভাল কিংবা খারাপ বলা নয়, বরং ডাক্তারবিষয়ে নিজের কয়েকটি বাস্তব অভিগ্গতা শেয়ার করার জন্যই এই লেখার অবতারণা - কাউকে হেয় কিংবা কাউকে ছোট করার জন্য নয় ।

সত্যিকারের মানসম্মত একটি হাসপাতালের জন্য অনেক অপেক্ষার পর যখন Square Hospital চালু হলো তখন সত্যিই ভাল লেগেছিল এটা ভেবে যে যাক এতদিনে দেশে স্বস্থিতে ভাল চিকিৎসার একটা জায়গা হলো - খরচ কিছুটা বেশী হলেও মান এবং ভাল সিস্টেম দেখে Square Hospital এর প্রতি সবসময়ই একটা ভাল অনুভূতি আছে । এই ভাললাগা আরও বেড়ে গেলো যখন ২০০৮ সালে রাত ১ টায় আমার স্ত্রী'র গলব্লাডার পেইনের জন্য Square Hospital এর Emergency Unit তে চলে গেলাম । অনেক দু:চিন্তা নিয়ে গেলেও গাড়ি থামিয়ে Emergency এর ভেতরে গিয়ে বলতেই যে দ্রুত উনারা আমাদেরকে রিসিভ করে ৫ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করে দিলেন তা দেখে ভরসা আরও বেড়ে গিয়েছিলো । নার্স এবং ডাক্তারদের দারুণ সেবায় Prof. Dr. Sanawar Hossain এর কাছে অপারেশন করিয়ে ২ দিন পর যখন সুস্থ্য বউকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম তখন সত্যি কি যে ভাল লেগেছিল তা বলার নয় !

এর ঠিক ১ বছর পর আবার একই রকম চমৎকার অভিগ্গতা হলো যখন রাতের বেলায় এক বিরল টাইপের টাইফয়েডে ৭ দিন ধরে ভুগতে থাকা আমার ৩ বছরের মেয়েকে নিয়ে স্কয়ারের ইমারজেন্সিতে যেতে হলো । আবারও ১০ মিনিটের মধ্যেই চিকিৎসার শুরু, আধাঘন্টার মধ্যেই কেবিনে স্থানান্তর এবং ডাক্তার-নার্স সবার অসাধারণ চিকিৎসাসেবায় ৬ দিনের মধ্যে আমার সুস্থ্য মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফেরৎ আসা ! ভর্তি হবার পরদিন থেকেই আমার বাচ্চাটার মুখে যখন হাসি ফিরল তখনকার অনুভূতি আসলে শুধুমাত্র আরেকজন বাবাই বলতে পারবেন। সেই তখন থেকেই স্কয়ারের চাইল্ড স্পেশালিস্ট ডাক্তার মাসুদুর রহমান আমার মেয়ের রেগুলার ডাক্তার । আমার মেয়ের জ্বর-পেটে ব্যথা কিংবা এজমার জন্য উনার চিকিৎসার উপর ভরসা করছি সেই থেকে । উনার ব্যবহার, অভিগ্গতা এবং দক্ষতা আস্তে আস্তে উনার সাথে এক অন্যরকম ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরী করে ফেলেছে । ভদ্রলোক এমনকি উনার নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারও আমাদের দিয়ে বলেছেন হঠাৎ বাচ্চার কোন ইমারজেন্সি হলে (বিশেষত: এজমা জনিত কোন জটিলতায়) উনাকে ফোন করতে । দো-মনা করে বেশ কয়েকবার রাত ২টা / ৩ টা তেও ফোন করেছি - সবসময়ই উনি শান্তভাবে একটুও বিরক্ত না হয়ে ফোনেই বলেছেন কি করতে হবে । বাংলাদেশে ডাক্তারদের কাছে যা বিরল তো বটেই । এভাবে আস্তে আস্তে আমরা পুরো ফ্যামিলি স্কয়ারের ভক্ত হয়ে গেছি - বাবা, মা, বোনেরা, ওদের বাচ্চারা আর আমরা তো বটেই । অনেক কলিগ / আত্তিয়-স্বজনকেই তাই স্কয়ার রেকমেন্ড করেছি - বিশেষত বাচ্চাদের জন্য ড: মাসুদুর রহমান কে । একজন ডাক্তার এভাবেই মনে হয় রোগীদের কাছে আপনজন হয়ে উঠেন ।

এবার এই স্কয়ারেরই একটু ভিন্ন অভিগ্গতার কথা বলি । গত প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে আমার বাবা প্রায়ই বুকের এক পাশে হঠাৎ হঠাৎ সামান্য চিনচিনে ব্যথা অনুভূব করেন - মাসে হয়ত ২ - ৩ বার । গ্যাসের ব্যাথা মনে করে বাবা কখনই পাত্তা দেন নি । বছর ৩ আগে ভাবলাম একটু ভালমত চেকাপ করাই । যথারীতি স্কয়ারের কার্ডিয়াক সেন্টারে গেলাম । ডা: খালেদ মহসিন এর সাথে এ্যাপয়েন্টমেন্ট । সবসময়ই দেখেছি স্কয়ারের বেশিরভাগ ডাক্তারই রোগীর কথা সময় নিয়ে শুনেন, তারপর ব্যবস্থাপত্র কিংবা টেস্ট করতে দেন । কিন্তু ইনি দেখলাম বাবা কথা ভালমত শুনলেনই না - ২/৩ মিনিটে শুনেই বললেন "বুঝেছি, বুঝেছি, এই টেস্ট গুলো করিয়ে আনুন ।" ঘসঘস করে টেস্টের লিস্ট থেকে ইসিজি, ইটিটি, আল্ট্রাসনো সহ আরও প্রায় ৫-৬ টা টিক করে দিলেন । আমরা শুরু করলাম টেস্ট করানো - ৩ দিনে সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ - ২০ হাজার টাকার টে্স্ট করালাম । তারপর স-ব রিপোর্ট নিয়ে গেলাম উনার কাছে । এবারের অভ্যর্থনা আরও ঠান্ডা ! বিশ্বাস করবেন না উনি সবগুলো রিপোর্ট একবারের জন্যও দেখলেনও না - মাত্র ২ টা রিপোর্টের উপর ৪-৫ সেকেন্ডের জন্য চোখ বুলালেন - গরমের দুপুরে আমরা যেমন পুরোনো নিউজপেপারের বিগ্গাপন পাতায় চোখ বুলাই - সেভাবে ! বললেন "যান যান, কিচ্ছুই হয় নি ।" বলেই বেল টিপে এ্যসিস্ট্যান্ট বললেন "পরের জন কে পাঠাও ।" আমরা হতভম্ব: ! আমাদের সাথে ঐ একটা বাক্য "যান যান, কিচ্ছুই হয় নি ।" ছাড়া উনি আর কিচ্ছু বললেন না । বাবার কথা শোনা তো দুরে থাক, একবারের জন্য উনি বাবার দিকে তাকিয়েছেন বলেও মনে হয় না ! আর ২০ হাজার টাকার টেস্ট রিপোর্ট তো দুরেই থাক ! আমি কিছু একটা জিগ্গেস করার উপক্রম করতেই উনি বললেন "বললাম তো কিছুই হয় নি । খোদা হাফেজ ।"
রুম থেকে বেরোবার সময় মনে হচ্ছিল ঘুরে জিগ্গাসা করি "কিভাবে বুঝলেন কিছুই হয় নি ? আপনি তো সেদিনও তেমন কোন কথাই শুনলেন না, আর আজকে তো কোনও কথা বলতেই দিলেন না । আর একগাদা টেস্টই বা করতে দিলেন কেন যদি রিপোর্টগুলো একবারের জন্য নাই দেখেন ?" কিন্তু ঐ যে - ভদ্রতা ! কিছুই বলা হলো না । মাথা নিচু করে বাবা কে নিয়ে বের হয়ে আসলাম ! ভাবলাম অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গত ৩-৪ দিনের দৌড়াদৌড়ি আর এতটাকা কি জলেই দিলাম ? কি চিকিৎসা হলো কিছুই বুঝলাম না ।

স্কয়ারই এর পরের অভিগ্গাতা আরও ভয়াবহ ছিল । সেটা আরেকদিন বলব, শীঘ্রই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×