somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলীকদমে অ্যাডভেঞ্চার

২৩ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বান্দরবানের আলিকদমে গিয়েছিলাম কিছুদিন আগেই। আমাদের দলটিতে ছিলাম ৪ জন। উদ্দেশ্য ওখানকার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ভিজিট করা। আজকে আপনাদের শোনাবো, আলীকদমের শ্বাসরুদ্ধকর এক অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনী।

ঢাকা থেকে এ.সি. বাসে করে সরাসরি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কক্সবাজারের আগেই ’চকোরিয়া’ নামের একটি জায়গায় নেমে পড়লাম আমরা। চকোরিয়া থেকে ’চান্দের’ গাড়িতে সরাসরি আলীকদম বাস স্ট্যাণ্ড-এ পৌঁছাতে প্রায় দু’ঘন্টা লেগে গেল। নেমেই দেখি অফিস সহকারী রফিক আমাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। মাল-পত্র নিয়ে সরাসরি গিয়ে উঠলাম আলীকদম জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজে। এই রেস্ট হাউজটি ছাড়া আলীকদমে থাকার আর তেমন কোন জায়গা নেই। যে ক’দিন ছিলাম, স্থানীয় বাজারের একটি হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেছি।

আলীকদম বাসস্ট্যাণ্ডে চান্দের গাড়ী

আলীকদম জেলা পরিষদ রেষ্ট হাউজ

বিলবোর্ড

বাজারে অবস্থিত বিলবোর্ড

বান্দরবানের অন্যান্য স্থানের তুলনায় আলীকদম জায়গাটি অপেক্ষাকৃত সমতল। এখানে বেশ কিছু জায়গায় যাবার, পাহাড়ী মানুষের জীবনযাত্রা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। দেখার মতো কিছু জায়গা হলো বাবু পাড়া, কলার ঝিরি -এসব জায়গায় ম্রো উপজাতিদের ছবির মতো সুন্দর গ্রাম।

আলীকদমের সৌন্দর্য

আলীকদমের সৌন্দর্য

আজকের লেখায় যে জায়গাটির বর্ণনা আমি দেব সেটি হলো ’আলীকদমের আলীর সুরঙ্গ’। ভয়ঙ্কর একটি জায়গা, যেখানে গেলে গা শিউরে ওঠে। রফিক বলেছিল আলীর সুরঙ্গ দেখতে হলে সকাল সকাল রওনা হতে হবে। কিন্তু দেরী হয়ে গেল। দুপুরের খাবার খেয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা দিলাম আমরা চার অভিযাত্রী। পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা রাস্তার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম আলীর সুরঙ্গ-এর একদম দোড় গোড়ায়। মাঝে একটা ছোট ঝিরি পড়লো। পা ভিজিয়ে পার হলাম। যে ভুলগুলো করেছিলাম আমরা তা হলো, সঙ্গে কোন টর্চ নেইনি, পায়ে ছিল ক্যাজুয়াল জুতা। আর পরে তো পানির তেষ্টায় মারাই যেতে বসেছিলাম। যারা যেতে চান, তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, সঙ্গে করে গাম বুট, টর্চ, পানি, সম্ভব হলে বাঁশের লাঠি নিতে ভুলবেননা।

অভিযাত্রীরা আলীর সুরঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি

আলীর সুরঙ্গের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি আমরা

আলীর সুরঙ্গের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি আমরা

পাহাড় বেয়ে নামার পর হাঁটু পানির ঝিরি

হাঁটু পানির ঝিরি

হাঁটু পানির ঝিরি

ঝিরি পার হচ্ছি অভিযাত্রীর দল
ঝিরি পার হচ্ছি অভিযাত্রীর দল

ঝিরি পার হচ্ছি অভিযাত্রীর দল
ঝিরি পার হচ্ছি অভিযাত্রীর দল

ঝিরি পার হয়ে

আলীর সুরঙ্গ-এর কাছাকাছি যাবার উদ্দেশ্যে পাহাড় বেয়ে উঠলাম। সাংঘাতিক পিচ্ছিল রাস্তা। একজন আরেকজনকে ধরাধরি করে এগুলাম।

পিচ্ছিল রাস্তা বেয়ে পাহাড়ে উঠছি আমরা

পিচ্ছিল রাস্তা বেয়ে পাহাড়ে উঠছি আমরা

পিচ্ছিল রাস্তা বেয়ে পাহাড়ে উঠছি আমরা

তারপর গহীন অন্ধকারে আমরা অভিযাত্রীরা ধীরে ধীরে ঢুকে গেলাম। আমাদের দু’পাশে পাহাড় আর বন, মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছি। চারদিকে গা ছমছমে একটা ভুতুড়ে পরিবেশ। চলার পথে কখনো বিশাল পাথরের চাঁই, আবার কখনোবা ছোট খাল। চারপাশে এত বেশি অন্ধকার যে, সামনের রাস্তা ঠাহর করতে কষ্ট হচ্ছিল।

বনের ভিতরে ঢুকে পড়েছি

নিকষ কালো অন্ধকার পথ ধরে এগুচ্ছি

কোমর পানি সমান খাল পার হচ্ছি

হাঁটতে হাঁটতে হয়রান হয়ে বিশ্রামরত আমরা

বিশ্রামরত আমরা

আমাদের গাইড রফিক

যতই ভিতরে ঢুকছি, সূর্যের আলো ততই ফিকে হচ্ছে। ভয়ঙ্কর এক সরু রাস্তা দিয়ে প্রায় ঘন্টা খানের হাঁটার পর অবশেষে পৌঁছালাম সুরঙ্গের মুখে। দেখলাম, একটা লোহার সিঁড়ি দেয়া আছে প্রায় ৩ তালা উঁচু সুরঙ্গে প্রবেশের জন্য। একজন আরেকজনকে ধরাধরি করে উঠে গেলাম সিঁড়ি বেয়ে। অন্ধকারাচ্ছন্ন নিকষ কালো মৃত্যুপুরী আলীর সুরঙ্গতে ঢুকলাম আমরা। রফিক জানালো আরো একটি সুরঙ্গ আছে কাছেই। কিন্তু ওখানে ওঠাটা আরও কষ্টকর।

আলীর সুরঙ্গে ওঠার সিঁড়ি

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রায়। আমরাও আর দেরী না করে সুরঙ্গ থেকে নেমে এসে, ফিরতি পথ ধরলাম। ফেরার সময় কষ্টটা আরও বেশি হলো। সাথে টর্চ না থাকায় সামনের কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। অনেক কষ্টে অবশেষে গহীন বনের সেই ভয়ঙ্কর রাস্তা ধরে বের হয়ে এলাম মুক্ত আকাশের নিচে, প্রাণ ভরে শ্বাস নিলাম সবাই।

আলীকদম সুরঙ্গ থেকে ফিরে বাজারে গুড়ের জিলাপি খাচ্ছি আমরা

আলীকদমে থাকার জন্য জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার খালেদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। খালেদের নম্বর: ০১৫৫৮ ৬০৪০৭৫

আমার অন্যান্য ভ্রমণ কাহিনী গুলো:

রূপসী দাসিয়ার ছড়া: বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে ভারতীয় এক ছিটমহল

চলুন, ঘুরে আসি মুম্বাই

বারিক্কা টিলা: বাংলাদেশের মানচিত্রে যেন ছোট্ট একটি ভূ-স্বর্গ

টাঙ্গুয়ার হাওড়: যার সৌন্দর্যের তুলনা সে নিজেই

কালিমপং-লাভা-লোলেগাঁও: যেন পৃথিবীর বুকে একটুকরো স্বর্গ

সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি বিজড়িত মসূয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১১ রাত ১১:১০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×