somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘা পর্ব-৩

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘা
পর্ব-৩
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
মনে চাচ্ছিলো কয়েকটা লাগিয়ে দেই। ফালতু কে এবং কারা, সেটা বুঝিয়ে দেই। কিন্তু শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি না থাকায় কিছু না বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলাম।
.
বাসার নিচে এসে ভাবছি, এখন এই সিড়ি বেয়ে চার তলায় উঠবো কী করে? মোবাইলটা বের করলাম। দেখি নাফিজকে আরেকবার কল করে দেখি। সে গিটারটা নেবে কিনা। যদি না নেয়, তবে এই বছর আর পরীক্ষা দেওয়া হবে না।

তার নাম্বারে কল দিতে যাবো। ঠিক সেই মুহূর্তে সে-ই আমাকে কল করে বসলো। আমি রিসিভ করতেই সে বললো, আচ্ছা ভাই আপনি নিয়ে আইসেন। আমি গিটারটা নেবো। তবে পাঁচ হাজার দিয়ে না।
আমি বললাম, মানে?
সে বললো, আপনাকে আট হাজারই দেবো। আপনি কাল গিটারটা নিয়ে আইসেন।

যাক, চিন্তামুক্ত হলাম। এখন শুধু নীলাকে বলে ফর্মফিলাপটা করিয়ে নিতে পারলেই হলো।
.
পরদিন গিটারটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে ক্যাস্পাসে গেলাম। গিয়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে বসে কিছুক্ষণ গান গাইলাম। আজই তো এই গিটারে সুর তোলার শেষ দিন। আর তো কখনো এই গিটারে সুর তুলতে পারবো না।

কখনো শখের কোনো জিনিস বিক্রি করিনি আমি। কিন্তু আজ? আজ আমি নিরুপায়। আমার সাধের গিটারটা আজ অন্যকারো হাতে চলে যাবে, এটা ভাবতেই চোখ দিয়ে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।

হঠাৎই কোথা থেকে যেন নাফিজ এসে আমার পাশে বসলো। বললো, ভাই এই নিন আট হাজার টাকা। আর হ্যাঁ আমাকে কিন্তু এটা বাজানো শেখাবেন। আমি সিক্ত নয়নে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম, অবশ্যই শেখাবো ভাই, অবশ্যই শেখাবো।

তার হাতে গিটারটা দিয়ে আমি নীলাকে খুঁজতে লাগলাম। সে বলেছিল, ফর্মফিলাপের সময় তার সাথে যোগাযোগ করতে। অডিটোরিয়ামের সামনে যেতেই দেখলাম নীলা লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম। সে আমাকে দেখে বললো, কেমন আছেন?
আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
সে উত্তর দিয়ে বললো, ফর্মফিলাপ করেছেন?
আমি বললাম, না করিনি। আজ করবো।
- আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি?
আমি কোনো সংকোচ না করে বললাম, নিশ্চয়ই।
সে আমাকে সাথে করে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের রুমের সামনে নিয়ে গেল। তারপর নিজেই একটা দরখাস্ত লিখে ভেতরে গেল। কিছুক্ষণ বাদে ফিরে এসে বললো, সাত হাজার টাকা দিয়ে ফর্মফিলাপ আর বেতন পরিশোধ করে আসুন।
আমি বললাম, মাত্র সাত হাজার দিয়ে? এটা কিভাবে সম্ভব?
সে বললো, কেন? আরো বেশি দিয়ে করবেন নাকি?
- না না, ঠিক আছে। আমি করে আসছি। আর হ্যাঁ, ধন্যবাদ আপনাকে।

এতদিন আমি সবাইকে দরখাস্ত লিখে দিয়েছি। আর আজ কিনা সেই আমিই অন্যের লেখা দরখাস্ত দিয়ে ফর্মফিলাপ করছি! হায়রে, এটাই বুঝি নিয়তি।
.
ফর্মফিলাপ হয়ে গেল। একটা বড় টেনশন মাথা থেকে নামলো। এখন শুধু মন দিয়ে পড়তে হবে। ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় নীলাকে অনেক খুঁজলাম। কিন্তু পেলাম না। হয়তো বাসায় চলে গিয়েছিল।

রাতে মেসেন্জারে ঢুকতেই দেখি মেঘার বিশাল বড় একটা মেসেজ। হঠাৎ তার এত বড় একটা মেসেজ দেখে বেশ অবাকই হলাম। দেখি কী লিখেছে সে। পড়তে আরম্ভ করলাম।

পড়া শেষ হলে বুঝলাম, সে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে "কথা দিয়ে কথা না রাখতে পারার জন্য।" আমিও "ইট'স ওকে" লিখে রিপ্লে পাঠালাম। সে মেসেন্জারে কল করলে আমি কেটে দিয়ে লিখলাম, লিখে বল। রাতে কথা বলা নিষেধ।

আর এভাবেই তার সাথে রাতে কথা বলা কমিয়ে দিলাম। মন দিয়ে পড়ালেখা শুরু করলাম। সিজিপিএ চারের মধ্যে চার না পেলেও পৌণে চার তো পেতেই হবে। একটা সময় তার সাথে রাতে মেসেজিং করাটাও বন্ধ করে দিলাম। দিনের বেলা মাঝে মাঝে দেখা করতে বললে, গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আসি। কিন্তু তাকে ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেই না যে, তার সমস্ত পরিকল্পনার কথা আমি জেনে ফেলেছি।
.
দেখতে দেখতে পরীক্ষার ডেট চলে এলো। দু'দিন পর থেকে পরীক্ষা শুরু। বিকেলে মেঘা কল করে বললো, শ্রাবণ চল একটু ঘুরে আসি।
আমি বললাম, হ্যাঁ চল।
ঘুরতে গেলে অবশ্য সব খরচাদি সেই বহন করে। আবার ক্যাম্পাসে যাওয়া আসার খরচটাও সেই বহন করতো। তার সাথে সম্পর্ক হয়ে একদিক দিয়ে লাভই হয়েছে।

দু'জনে পুরো বিকেলটা "দিয়া বাড়ি" ঘুরে রাত দশটার দিকে বাসায় ফিরলাম। পুরো রাস্তা সে আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছে। তার মায়া মাখা মুখখানা দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়, এতো সুন্দর একটা মেয়ের মন এমন কুৎসিত হতে পারে কী করে?

তার সাথে হাজার আড্ডা দিলেও পড়ার ব্যাপারটাকে আমি ঠিকই মাথায় রাখি। সে নোট, সাজেশন চাইলে তাকে সেগুলোও দেই। যেমনটা আগে দিতাম।
.
কাল পরীক্ষা। আজ দ্রুত ঘুমাতে হবে। ঘড়িতে আটটা বেজে ঊনপঞ্চাশ মিনিট। আর এক ঘণ্টা পর ঘুমাবো। কাল দুপুর থেকে পরীক্ষা। আজ আর পড়বো না। দশটার দিকে ঘুমিয়ে সকাল সকাল উঠে পড়বো কিছুক্ষণ। এর মাঝে যদি মেঘা কল করে, তবে তার সাথে এই এক ঘণ্টা জমিয়ে আড্ডা দেবো। যাতে সে  মনে করে, তার পরিকল্পনায় সে সফলভাবেই এগোচ্ছে।

যা ভাবছিলাম, হলোও তাই। মেঘা কল করলো। আমি রিসিভ করে তার সাথে প্রেমের আলাপ জুড়ে বসলাম। সে অবশ্য মাঝখানে একবার প্রশ্ন করেছিল, সম্প্রতি তোর না রাতে কথা বলা নিষেধ?
আমি বলেছিলাম, আজ ভাইয়া রুমে নেই। সো, আজ কথা বলতে পারবো।

ঠিক এক ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে দশটা বাজার কয়েক মিনিট আগে কল রাখলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে জমপেশ একটা ঘুম দিলাম।
অবশ্য মেঘা অনুরোধ করছিলো আরেকটু কথা বলার জন্য। কিন্তু এই আরেকটু কথাই অনেকখানি হয়ে যেত।
.
আমি চাই না মেঘা পরীক্ষায় খারাপ করুক। সে যতোই আমার অনিষ্ট চাক। তবু সে তো আমার বন্ধু। তাকে আমার যথেষ্ট সাহায্য করতে হবে। সে হয়তো চেয়েছে, আমি তার থেকে একটু খারাপ রেজাল্ট করি। তার জন্য না হয় এই একটা বছর একটু খারাপই করলাম। অন্ততপক্ষে সে তো কিছুটা খুশি হবে। সামনে আরো তিনটা বছর পরে রয়েছে। মেঘার পরবর্তী আচরণের সাথে পরিচিত হয়ে  তখন না হয় পড়ালেখার বিষয়টা দেখা যাবে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মেঘাকে কল করলাম। সে রিসিভ করে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো, হ্যাঁ হ্যালো।
তার এই ঘুম জড়ানো কণ্ঠের মায়ায় আমি এর আগেও পড়েছি। নিষ্পাপ একটি কণ্ঠস্বর। আমি কিয়ৎকালের জন্য নিজের মধ্যে তার প্রতি আমার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করলাম। নাহ! মেয়েটাকে আমি বড্ড ভালোবাসি।

সে আবার হ্যালো বললো। আমি বললাম, এখনো ঘুমিয়ে আছিস? আজ না পরীক্ষা? ওঠ, দ্রুত ঘুম থেকে উঠে পড়তে বস। আমি কিছুক্ষণ পর তোকে কিছু নোট দিয়ে আসবো। সেগুলো পড়লে কিছুটা কমন পাবি।
সে আচ্ছা বলে একটা 'হাই' তুলে ফোন রাখলো। আমি ফ্রেশ হয়ে পরীক্ষার জন্য তৈরি করা নোটগুলো তাকে দেওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলাম।

রাস্তায় তখন মানুষের আনাগোণা কম। আমি সনি হল পার হয়ে 'আল-নাহিয়ান' স্কুলের কাছাকাছি যেতেই কয়েকজন ছেলে এসে আমাকে ঘিরে ধরলো। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদেরকে আমার অতি সাধের ফোনটা দিয়ে দিতে হলো। সখের জিনিস বলতে এই ফোনটাই ছিল। আমি তাদেরকে বললাম, ভাই সিমটা অন্তত দিয়ে যান। কিন্তু তারা দিল না। বরং ছুড়ি দেখিয়ে ধমক দিলো। সকলের মুখ বাধা থাকায় কারো চেহারা দৃষ্টিগোচর হলো না।

মানুষ বড়ই বিচিত্রময়। জীবিকার তাগিদে তারা কত কিছুই না করে। মানুষ হত্যা করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। আমি নোটগুলো হাতে নিয়ে আবারো হাঁটা ধরলাম মেঘার বাসার দিকে।

বাসার নিচে পৌঁছে তাকে কল করার জন্য পকেটে হাত দিতেই মনে হলো, আরেহ! কিছুক্ষণ আগেই না ফোনটা ছিনতাই হলো। অগত্যা তাদের বাসার গেটে টোকা দিলাম। কিছুক্ষণ বাদে সেদিনের সেই দারোয়ানটা গেট খুলে বললো, কী চাই?
আমি বললাম, আজকে মেঘার পরীক্ষা। সে আমার সাথেই পড়ে। তাই তাকে এই নোটগুলো দিতে এসেছিলাম।
দারোয়ানটা বললো, যান তো মিয়া। এসব পুরান ডায়লোগ বাদ দেন। এইরহম পিরিতের দিন শ্যাষ।
আমি বললাম, দেখুন আপনি যা ভাবছেন। ঠিক তা নয়। চাইলে এই নোটগুলো আপনি নিজেই তাকে দিয়ে আসতে পারেন।
- অতো কথা বাদ দিয়া আপনে ম্যাডামরে ফোন দেন।
- ফোনটা আসার পথে ছিনতাই হয়ে গেছে।
- বাহ! কথা দেহি সাজানোই আছে।
- দেখুন আপনি কিন্তু এবার একটু বেশি বকছেন। আপনি এগুলো ধরুন। যান, এবার আপনার ম্যাডামরে এগুলো দিয়ে আসুন।

লোকটার হাতে নোটগুলো দিয়ে বাসার দিকে হাঁটা ধরলাম। লোকটা পেছন থেকে বেশ কয়েকবার ডাকলো আমাকে। আমি আর দাঁড়ালাম না। কথায় কথা বাড়ে। সম্মান তাতে কেবলই ছাড়ে।
.
ধানমণ্ডি নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজে সিট পরেছে। দুপুর ১ টার সময় পরীক্ষা আরম্ভ হবে। আমি এগারোটার দিকে রওনা দিলাম। রাস্তাঘাটের ব্যাপার বলা যায় না। তাছাড়া আজ প্রথম পরীক্ষা। সিট খোঁজা একটা ঝামেলা। সেজন্য দ্রুত যাওয়াটাই শ্রেয়।

সৌভাগ্যবশত রাস্তায় কোনো যানজট না থাকায় পৌণে বারোটার সময় কলেজের সামনে পৌঁছালাম। দেখলাম, অনেকেই এসেছে। আমি চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম পরিচিতে কেউ এসেছে কিনা।কিন্তু না, পরিচিত কাউকেই পেলাম না।

ফুটপাতের একপাশে এসে দাঁড়িয়ে রইলাম। গেট খুলতে খুলতে সাড়ে বারোটা বাজবে। ততক্ষণ বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আম্মুর কথা ভাবছি। এইতো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় আম্মু আমাকে ডিম রান্না করে ভাত খাইয়ে দিয়ে পরীক্ষার হল পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসেছিলেন। অথচ আজ? আজ কেউ এগিয়ে দিতে আসেনি। কেউ সকালে ডিম রান্না করে বলেনি, বাপ ডিম দিয়ে এই এক থাল ভাত খাইয়ে পরীক্ষা দিতে যাইবি। তাইলে পরীক্ষা ভালো হইবো।

হঠাৎই কেউ একজন পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডেকে বললো, কেমন আছেন?
আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি নীলা দাঁড়িয়ে আছে।
বললাম, এইতো বেশ আছি। আপনি কেমন আছেন?
- আলহামদুলিল্লাহ। আপনার চোখে পানি কেন?

আমি চোখ দু'টো মুছে বললাম, কই? না তো!
সে বললো, আমার কাছে কখনো মিথ্যা বলবেন না। আমি মিথ্যা বলা একদম পছন্দ করি না। বলুন, কী হয়েছে আপনার?
- তেমন কিছু না। আম্মুর কথা মনে পড়ছিল ভীষণ। সেই ছোটবেলা থেকে যত পরীক্ষা দিয়েছি। সব পরীক্ষাতেই আম্মু আমার সাথে পরীক্ষার হল পর্যন্ত এসেছেন। কিন্তু আজ!

চোখ দিয়ে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়তেই নীলা তার হাত দিয়ে সেটা মুছে দিলো। সে বললো, আরে আরে আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি এখন বড় হয়েছেন। মা তো আর সবসময় থাকবে না। জীবন সংগ্রামে আপনাকে একাই লড়তে হবে।

গেট খুলে দিয়েছে। সবাই ভেতরে ঢুকছে। নীলা বললো, চলুন। মন দিয়ে পরীক্ষা দিবেন। এসব কথা ভেবে কান্নাকাটি করবেন না। ঠিক আছে?
আমি 'হ্যাঁ' সূচক মাথা নাড়লাম।
.
পরীক্ষা চলাকালীন সময় আমি নীলাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করলাম। অবশ্য নীলাও কিছুটা সাহায্য করেছে আমাকে। ভাগ্যক্রমে ক্লাস রোলের মতো পরীক্ষার রোলেও সে আমার পিছেই পরেছে।

যথা সময়ে পরীক্ষা শেষ হলে নীলার সাথে একটু আলাপচারিতা শেষে হল থেকে বের হতেই দেখি মেঘা দাঁড়িয়ে আছে। সে আমাকে দেখে দ্রুত পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো, তোর ফোন বন্ধ কেন? কেমন আছিস তুই? কখন এসেছিলি?
আমি বললাম, ফোন হারিয়ে গিয়েছে। ভালো আছি। এসেছিলাম পৌণে বারোটাই।
- ফোন হারালো কিভাবে?
- জানি না। কিভাবে হারালো, সেটা জানলে তো হারাতোই না।
- চল আমার সাথে।
সে আমার হাত ধরে টানতে টানতে রাস্তার ওপারে নিয়ে গেল।
আমি বললাম, কোথায় যাবো? আর ছাড় আমাকে। এভাবে টানলে লোকে কী ভাববে?
- যে যা ভাবে ভাবুক। তাতে আমার কী? আমি কি লোকের খাই? না পড়ি?
- কোথায় যাবো এখন?
- তোর ফোন কিনতে।
- না, ফোন কী করবো আমি? আমার ফোন লাগবে না।
- একদম কথা বলবি না।
- আরে পাগলী মজা করলাম, ফোন বাসাতেই আছে। রাতে চার্জ না দেওয়ায় সকালে ফোনটা অফ হয়ে ছিল। আর হ্যাঁ, তোদের বাসার গেটের দারোয়ানের কাছে কিছু নোট দিয়ে এসেছিলাম। সেগুলো পেয়েছিলি?
- ও হ্যাঁ, সেটার কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম। ওখান থেকে আজ ৮০% কমন এসেছিল। তুই কিভাবে নোট তৈরি করলি? আমাকে শেখাবি?
আমি তার কথায় কিঞ্চিৎ হেসে বললাম, চল বাসার দিকে যাওয়া যাক। হঠাৎই আমার মনে হলো, দু'টো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পাশে তাকাতেই দেখি নীলা। তার চোখ দু'টো জলে ছলছল করছে। কিন্তু কেন, সে সম্বন্ধে আমি অবগত নই। তবে এটুকু বুঝতে পেরেছি, সে চায় না আমি মেঘার সাথে থাকি।
.
সন্ধ্যা সাতটা বাজে। কাছে ফোন নেই। ওদিকে মেঘা হয়তো অনেকবার কল করেছে। আমাকে ফোনে না পেয়ে হয়তো রেগে আছে ভীষণ। মেয়েটাকে দেখে আমার একটুও মনে
হয় না যে, মেয়েটা আমার সাথে অভিনয় করছে।

পরীক্ষার রুটিনটা বের করে দেখলাম, পরশুদিন একটা পরীক্ষা রয়েছে। তারপর তিন দিন ছুটি। অবশ্য ফোন না থাকায় একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। আবার অন্যদিকে একটু সমস্যাও হয়েছে। ভালো বলতে, এখন আর ফেসবুক চালানো হয় না। আর সমস্যা বলতে, ফোনের মধ্যে যেই সিম ছিল। সেই সিমে আমার "রকেট" অ্যাকাউন্ট ছিল। আব্বা বাড়ি থেকে কখনো টাকা পাঠালে ঐ নাম্বারটাতেই পাঠাতো।

হাতে এখন হাজার খানেক টাকা আছে। আগামী শুক্রবার বাইরে ঘুরতে বের হলে একটা ছোটখাটো ফোন কেনা যাবে।
.
আজ হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা। সেদিনের মতো গতকালও মেঘাদের বাসার দারোয়ানের কাছে পরীক্ষার জন্য তৈরি করা কিছু নোট দিয়ে এসেছি। এবার অবশ্য দারোয়ান তেমন কিছু জিজ্ঞেস করেনি। শুধু বলেছিল, আজ আপনারে এ্যামন মনমরা লাগছে ক্যান?
উত্তরে আমি বলেছিলাম, এই নোটগুলো মেঘাকে দিয়েন।
লোকটা অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল আমার দিকে।

আজ বারোটার দিকে রওনা দিলাম। পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ১২:৫০ বেজে গেল।
.
অপেক্ষা করুন চতুর্থ পর্বের।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×