পনের মিনিটের মধ্যে একটি গল্প লিখতে হবে৷
একটু পরেই পত্রিকার সাহিত্য পাতার শেষ কাজটি সম্পন্ন হবে, মানে কম্পিউটার থেকে পুরো ট্রেসিং বের হয়ে যাবে৷ কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো আব্দুস শাকুরের গল্পটি৷ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে গল্প৷ সম্পাদকের বিশেষ পছন্দ হয়নি৷ তিনি শেষ মূহুর্তে ধরতে পেরেছেন যে গল্পটির মধ্যে এমন একটা মেসেজ সুক্ষ্ণভাবে দেয়া আছে, যাতে বড় ধরণের ক্যাঁচাল পড়ে যেতে পারে৷ সম্পাদক সাহেব এখন এ ধরণের ক্যাঁচালে যেতে চান না৷
ঘর্মাক্ত অবস্থায় সচিবালয় থেকে কিছু খবরা-খবর আর দুই তিনটি চোথা নিয়ে অফিসে ফেরা মাত্র মুকুল মালথি, সাহিত্য সম্পাদক, সরাসরি কাদিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, সময় নেই পনের মিনিটের মধ্যে একটি গল্প চাই৷ সম্পাদকের নির্দেশ৷
কাদির গল্প লেখে৷ মাঝে মাঝে সেগুলো কিছু পত্রিকায় ছাপাও হয়৷ বেশিরভাগ সময়ে এই সকল গল্প লিখেই দিয়ে দেন ব্লগে৷ কিন্তু এভাবে সময় বেধে দিয়ে এক্ষুনি গল্প লিখে দেবার ফরমায়েশ কেউ জানায়নি, কখনো৷
কম্পিউটারের মাই ডক্যুইমেন্ট ঘেঁটেই একটিও অপ্রকাশিত গল্প পাওয়া গেল না৷ তাকে লিখতেই হবে, সম্পাদকের কথা সে ফেলতে পারবে না৷
‘ সদরঘাটের সদর দরজা দিয়েই দলটি ভিতরে ঢুকলো৷ এখানে নানা পথে পন্টুনে ওঠায় যায়৷ যাওয়া যায় নৌকা দিয়ে৷ মাঝিরা ময়লা পানি সরিয়ে বৈঠা দিয়ে ধীরে ধীরে বয়ে নিয়ে যায় নৌকা৷ তারপর আনা দুই আনা মানে জনপ্রতি পাঁচ টাকা দিয়ে তাদের তুলে দেয় লঞ্চে৷ কিন্তু সেই কাজটি এবার করলো না কয়েকটি দৈনিকের সাংবাদিক৷ তাদের জন্য বুকিং দেয়া আছে ক্যাবিনের৷ ফলে থার্ড ক্লাসের জায়গা পাবার মতো এবার আর হুটোপুটি নয়৷ লঞ্চের নাম সোনারতরী৷ সন্ধ্যায় যাত্রা৷ একসময় সত্যিই নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা পর ছাড়লো লঞ্চটি৷ সাংবাদিকের দল ভেসে যাচ্ছে৷ সদরঘাট, গেন্ডারিয়া, পাগলা এরপর ধীরে ধীরে নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ৷
এখানেই নদীর বাতাস নির্মল৷ গায়ে গেঞ্জির উপর একটি সার্ট চাপিয়ে রহমান সিগারেট ফুঁকছে৷ নদীর নির্জ্জলা বাতাসে সিগারেট খেতে নাকি বেশ মজা৷ তবে এর প্রিয়জনেরা এটা মোটেই পছন্দ করে না৷ এই জিনিসের নাকি কোন বাপভাই নাই৷
: কেন সিগারেট খান?
প্রশ্ন শুনে একটু ভিমরি খেলো রহমান৷ খেয়ালই করেনি তাদের দলের এক মেয়ে এসে পাশে দাঁড়িয়েছে৷ নতুন এসেছে এই লাইনে৷ মানে সাংবাদিকতার লাইনে৷
: ভালো লাগে তাই খাই৷
: এটা কোন কথা হলো না৷ আপনার মতো সিনিয়র সাংবাদিকরা যদি এই সব পঁচা জিনিস খান, তো জুনিয়র মানে আমরা কি শিখবো?
: এর উত্তর দিতে পারবো না৷ আচ্ছা কি যেন নাম আপনার?
: নি৷
: এটা কোন নাম হলো!
: হয়তো নয়, আবার এর মধ্যে ভালোবাসা আছে৷
: ভালোবাসা?
: আমার মামা আমার নাম রেখেছিল৷ সে নেই৷
: নেই মানে? কোথায় গেছে?
দূরে তাকিয়ে মেয়েটি বললো...
: নেই ৷ মারা গেছে৷
: স্যরি৷
: ঠিক আছে৷ এবার বলুন সিগারেট ছাড়বেন কি না?
: কেন আপনি বললেই আমি ছাড়বো কেন?
: উত্তর দিতে গিয়েও কোন কথা বললো না সে৷
রহমান বললো
: কি হলো? উত্তর দিলেন না?
: আচ্ছা আপনার বয়স তো বাড়ছে? বিয়ে থা করছে না কেন?
: করিনি কে বললো?
: জুনায়েদ ভাই৷
জুনায়েদ তার খুবই কাছের এক বন্ধু৷ এই মেয়েটি তাদেরই অফিসের৷ জুনায়েদেরই আসার কথা ছিল৷ কিন্তু আসতে পারেনি৷ পাবনা যাবে এক রাজনৈতিক দলের সভা কাভার করতে৷ ফলে মেয়েটি এসেছে৷
: কি বলেছে জুনায়েদ?
: নাম রহমান৷ বয়স আটাশ৷ গায়ের রঙ হালকা কালো৷ লম্বা তেমন আহামরি নয়৷ বাড়ি কাপাসিয়া৷ টঙ্গির বাসা থেকে দৈনিক সকালে আগমন রাজধানী ঢাকাতে৷ নিজের ছোট্ট স্টারলেট গাড়ি৷ বাড়িতে কেউ নেই৷ মা, বাবা, বোন বা ভাই৷ নেই বান্ধবী৷ জোটেনি নয়, জোটাননি৷
: অনেক কিছুই তো জেনে গেছেন৷
: জানতে হয়৷
: কেন?
রাতের কালো রঙ ছড়িয়ে পড়েছে৷ লঞ্চের সার্চ লাইটের আলোতে দেখা গেল দুটি পাখি, জোড়া, উড়ে যাচ্ছে৷ রহমান হঠাৎ সরাসরি তাকালো নি এর দিকে৷ মেয়েটিও তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ বন্ধু জুনায়েদ কয়েকদিন আগে বলেছিল তাদের অফিসের এক মেয়ে নাকি তার বেশ ফ্যান৷ বলে রহমান ভাইয়ের রির্পোটে নাকি কোন ফাঁক থাকে না৷ এক টানে খরবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যায়৷
: কারণ আপনি বুঝবেন না৷
রেলিঙে হাত ছিল দুই জনের৷ রহমানের ডান হাতের পাশে নি’র বাম হাত৷ হ্ঠাৎ এক ঢেউ এর কাঁপুনি তে লঞ্চটি দুলে উঠলো৷ তখনই ডান আর বাম হাতের স্পর্শ, সামান্য৷ বিদ্যুত কি এভাবেই সৃষ্টি হয়.....’
কাদিরের গল্পটি শেষ৷ আরও কিছু শব্দের খেলা জড়িয়ে দিয়ে লেখাটি সরাসরি সাহিত্য সম্পাদকের কম্পিউটারে৷
পনের মিনিটের গল্পটিতে শেষ আচড় বোলাতে বোলাতে নিজের ইন্টারকম থেকে ফোন করলেন সাহিত্য সম্পাদক৷
কাদির জানতো ফোন আসবে এটা নিশ্চিত৷ কিন্তু কি যে বলেন!
না, সমালোচনা, আলোচনা, ভালোচনা...কিছুই করলেন না সাহিত্য সম্পাদক৷ কেবল জিজ্ঞাস করলেন
‘‘কাদির তুমি তো গত মাসে ভোলা গিয়েছিলে, তাই না!’’
আলোচিত ব্লগ
বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন
সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?
আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?
রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন