somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষের একটু আগে

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘শীতে এই চরের বালি মাটি শুকিয়ে যায়৷ তারপর সেই বালিতে যদি একটু একটু করে পা ফেলো, একই জায়গায়, তাহলে দেখবে পানি উঠছে৷ আর শব্দ হচ্ছে অদ্ভুত৷’
কথাগুলো আরশাদকে বললো রূপরেখা৷ আরশাদ গ্রামের ছেলে ৷ সে জানে চরের বালুকাবেলায় কি করে পানি আনতে হয়, জানে নৌকার পাল কখন উড়াতে হয়, আর গুণ বাইতে হয় কখন৷ কিন্তু এখন সে এ সবের অনেক কিছুই ভুলে বসে আছে৷ ভুলে বসে থাকার চেয়েছে ভালো হবে বোধ হয় যদি বলা যায়, ধূলোর আস্তর জমেছে, বেশ মোটা করে, সেটা বলা হলে৷
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
সব কিছু ভুলা যায় না৷ যেমন ভুলা যায় না আকাশের মেঘ, কালো রং৷ ভুলা যায় না নীলচে পাহাড়, কারও কারও মুখ৷
এই পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই বয়সে আরশাদ ভুলে গেছে অনেক কিছুই৷ বিদেশে থাকতে থাকতে তাকে ভুলে যেতে হয়েছে রূপ, গন্ধ, রং৷ ফরাসিদের দেশেই সে আছে অনেক দিন৷ প্যারিসের পার্শ্বে ছোট্ট একটি শহরে তাদের বড় অফিস৷ কৃষিকাজে সহায়তার জন্য কম্পিউটার ভিত্তিক সফটওয়্যার বানায় তাদের কোম্পানি৷ সেই কোমলসম্ভার কিনে নেয় ইউরোপ অ্যামেরিকার কৃষকরা৷ কখন বৃষ্টি হলে কী করতে হবে, না হলে কী , পোকার আক্রমণ, মাটির আদ্রতা, জলের কণা- সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল দিয়ে চালিয়ে রাখো কিছুক্ষণ, কিছুক্ষণ পর বলে দেবে কত হতে পারে এই মৌসুমের সম্ভাব্য উৎপাদন! ডিজিটাল কৃষি! এই ধরণের কাণ্ড-কারখানা করে বেশ কামাচ্ছে তারা৷
বছর বিশেক আগে যখন তার বয়স ত্রিশের খুব কাছে, তখন সে এসেছিল প্যারিসে৷ তারপর দিন গেছে অনেক৷ অনেক রাত দেখেছে সে একা একা ঘুরে৷ কিন্তু খুঁজে পায়নি ঢাকাকে, দিনের ঢাকা রাতের ঢাকা৷
বাড়িতে কেউ ছিল না৷ ছিল না বাবা মা, ভাই কিংবা বোন৷ সেই ছেলেবেলা বাবা-মা মারা যাবার পর বড় হয়েছে সে এক মামার কাছে৷ সেই মামাও আজ নেই৷ তাহলে কার কাছে যাবে সে৷ দিনে রাতে ভাবে আরশাদ৷ ভাবতে ভাবতে সময় গেছে কিন্তু দেশে যাওয়া হয়নি৷ ফেসবুক নামক সামাজিক নেটওয়ার্ক তাকে টানে না কখনো৷ অফিসের দ্বিতীয় প্রধান বলে তাকে কিছু কিছু অপ্রিয় কাজ করতে হয়৷ এর মধ্যে ফেসবুক একটি৷ এ জন্য একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছে৷ সেই ফেসবুক দিয়ে তারা জানায় তাদের নিজেদের পণ্যের কথা৷ আলোচনা সমালোচনার জবাবও দেয়৷ স্রেফ অফিসিয়াল৷ তারপরও প্রতিদিন সেই ফেসবুকের পাতায় জমা হয় বন্ধুত্বের আহ্বান, লিঙ্ক, আর হাই- হ্যালো৷
অফিসে সেদিন একটু আগেই এসেছে আরশাদ৷ স্বভাবমত একটি বড় মগে কালো মিশমিশে কফি নিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে খুলে দেয় বদনগ্রন্থ, মানে ফেসবুক৷ ইনবক্সে একটি চিঠি...
‘‘আরশাদ, কেমন আছো? আমাকে চিনতে পারছো? কোথায় হারিয়ে গেলে?’’
শেষ নাম দেয়া নেই৷ প্রয়োজনও নেই৷ প্রেরকের নাম তো আগেই দেয়া আছে৷ একবার দুইবার তিনবার আরও কয়েকবার সে পড়ে চিঠিটি৷ কফি নিয়েছিল আগে, সেটি টেবিলেই পড়ে রইলো৷ হতে থাকলো ঠান্ডা৷ ঠান্ডা কফি আর বিষ- দুটোই সমান আরশাদের কাছে৷
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
সেই রূপরেখাকে নিয়েই পদ্মার চরে হাটছিল আরশাদ৷ হালকা শীতের রোদ৷ সেই শীতের রোদে পিঠটাকে পেতে দিয়ে চরের বালিতে পানি উঠাবার কথা আরশাদকে বলেছিল রূপরেখা৷ এদিকটার বাতাস বেশ হালকা, মোলায়েম৷ আরিচার এই চরটি আসলেও সুন্দর৷ আলুক্ষেত সবুজ হয়ে আছে৷ মৌমাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ আকাশে পাখি, মনে হয় পানকৌড়ি৷ নদীতে হঠাৎ লাফ দিয়ে ডিগবাজী খাচ্ছে শুষক৷ ছেলেবেলায় এরা এই গঙ্গা ডলফিনকে বলতো শিশু!
: তুমি কি জানতে আমি কোথায় আছি? ফেসবুকে কীভাবে খুঁজে পেলে আমাকে? নিরবতা ভেঙ্গে আরশাদ প্রশ্ন করলো রূপরেখা কে৷ রূপরেখা চৌধুরী৷ বছর খানিকের ছোট হবে আরশাদের চেয়ে৷ কিংবা সমান৷ কিন্তু আশ্চার্য, রূপরেখাকে দেখাচ্ছে তার চেয়েও অনেক বড়৷ মেয়েরা নাকি এমনি! জীবন আর সংসার দেখতে দেখতে বুদ্ধি যখন খুব বেড়ে যায়, তখন তারা যায় বুড়িয়ে৷
: সুলেখার জন্য খুলেছি৷ আমার মেয়ে৷ দারুন দারুন সব ছবি আপলোড করে৷ সেগুলি দেখতে পেতাম না৷ অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ায় থাকে সে৷ খুললাম ফেসবুক৷ তারপর একদিন কীভেবে খুঁজতে থাকলাম তোমাকে, যদি পেয়ে যাই৷
: এই বয়সে পেয়ে কী হবে?
: বয়স হলেই কি সব ফুরিয়ে যায়?
: বয়স থাকতেও তো অনেক কিছু ফুরিয়ে যেতে পারে!
: সেটাই তো হয়েছে৷ না হলে সেই রাতে তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে কেন?
: আমি তো ছেড়ে যাইনি৷ তুমি বাধ্য করেছো৷
কথাটি বলেই একটু আনমনা হয়ে যায় আরশাদ৷
ঝড় বাদলের রাত নয়৷ নয় গরম গুমটের রাত৷ তারপরেও সেই রাতটি ছিল অন্যরকম৷ আলো-আঁধারির রাত৷ হালকা বাতাস বইছিল৷ গ্রুপ স্টাডিতে তারা এসেছে চট্টগ্রামের একটি গ্রামে৷ আরশাদ আর রূপরেখা, দুই জনই সেই দলে৷ উদ্ভিদ বিদ্যা নিয়ে তারা পড়ছে৷ গাছ-গাছড়া খুঁজতে খুঁজতেই তারা চলে এসেছে এখানে৷ ছোট্ট টিলা ঘেরা গ্রাম৷ দিনে কাজ শেষ করে সকলে একটু ক্লান্ত৷ গ্রামের একটি স্কুলে থাকবার ব্যবস্থা৷ তখনই ছেলেরা নেমে পড়লো স্কুলের শান বাঁধানো পুরানো পুকুরে৷ সাঁতার প্রতিযোগিতা৷ না আরশাদ তাতে প্রথম হয়নি৷ শেষের একটু আগে ছিল৷ মেয়েরা হেসেছিল ওদের কাজ কারবার দেখে৷ রাতের খাবার পর আড্ডা৷ হাটাহাটি৷
আরশাদের বরাবরই ভালো লাগতো রূপরেখাকে৷ বলতে পারেনি৷ সময় ছিল না বলার৷ নিজের পড়ালেখা আর খরচাপাতি যোগাড় করতেই যার যায় যায় দিন, তার আবার প্রেম৷
সে রাতে গ্রামের পথে রূপরেখার সঙ্গে হাটছিল আরশাদ৷ গ্রামের পথগুলোতে অন্ধকারের মধ্যেও বেশ আলোর দেখা মেলে৷ আলো তারা পেয়েছিল৷ এই কথা ঐ কথা, নানা কথার মাঝে রূপরেখা জিজ্ঞাস করেছিল, কেন আরশাদ তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে৷ আরশাদ এই প্রশ্নে লজ্জা পেয়েছিল৷ বলছিল, ‘তাকিয়েই তো থাকি৷ কিন্তু অন্য কিছু তো করি না, বলি না কিছুই৷ তুমি কি আমার চোখের ভাষায় কোন বাজে ইঙ্গিত পেয়েছিলে?’
এই প্রশ্নের কোন উত্তর দেয় না রূপ৷ তারপর তারা হাটতে থাকে৷ বাতাসে বুনো গন্ধ৷ সেই গন্ধে মাতাল রূপরেখা আলতো করে নিজের হাতটি ছুঁইয়ে দিয়েছিল আরশাদের হাতে৷ আরশাদ সেটিকে অস্বাভাবিক ভাবেনি৷ তারপর এই কথা, সেই কথা৷ ক্লাশের অন্যরা অনেকটাই এগিয়ে ছিল তাদের কাছ থেকে৷ এই আলো-আঁধারের রাতে কি যেন থাকে বাতাসে, গাছে, অন্ধকারে৷ দুরে কোথাও কিছু দেখতে পেলো রূপ, ধোঁয়া ধোঁয়া, ঠিক সময়ই ডেকে উঠলো একটি খেকশেয়াল৷ ভয় পেয়ে রূপরেখা জড়িয়ে ধরলো আরশাদকে৷ আরশাদের বুকে গন্ধ আছে, আশ্চার্য গন্ধ৷ কিছুক্ষণ সেই গন্ধে মিশে যেতে চাইলো সে৷ তারপর খুব কাছ থেকে নিজের ঠোটটি ছুঁইয়ে দিল আরশাদের ঠোটে....৷
না , লেপ্টে ধরে থাকলো না আরশাদ রূপরেখাকে৷ এক ঝটকায় তাকে সরিয়ে দিলো৷ যুবক আরশাদ৷ প্রেম যার বুকে, মনে ভয়, বললো, ‘না, এটা ঠিক নয়৷’ তারপর হাটতে থাকলো সে৷ যতটা দ্রুত সম্ভব৷
আস্তানায় পৌঁছে কোন কথা নয়৷ সকালে উঠেই এক অযুহাতে চলে গেলো সে দ্রুত, ঢাকায়৷ রূপরেখাও জানতো না এই চলে যাবার কথা৷
: কেন তুমি এমন করেছিলে সেদিন? সেই রাতের কথা মনে করে জিজ্ঞাসা করলো সে আরশাদ কে৷
: এই মধ্য বয়সে, কিংবা বয়সের শেষার্ধে এসে বলি, আমি জানি না৷ কেবল এইটুকু জানি, আমি তোমাকে সেভাবে নয়, চেয়েছিলাম অন্যরকম করে৷ চাওয়া এবং তখনকার পাবার মধ্যে হয়তো তফাৎ ছিল৷
: বিয়ে করোনি কেন?
: তোমাকে পাইনি বলে৷
: আমাকে তুমি চাওনি৷ পদ্মার ঘোলা পানির দিকে তাকিয়ে রূপরেখা৷ তারপর বলে, আমাকে চাও না এখন?
অকস্মাৎ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না আরশাদ৷ ভাবে, রূপের জন্য সে বসে আছে এতদিন৷ কিছু ভালো লাগা স্মৃতি নিয়ে সে আছে এখনো৷ এই স্মৃতিটুকু রূপরেখাকে কেন্দ্র করে৷ মেয়েটি তার সঙ্গে দেখা করতে চায়, তাই সরাসরি প্যারিস থেকে ঢাকা৷ একটি মাত্র ইমেলের আহ্বানে সে উড়েছে হাজার হাজার মাইল৷ এই বয়সেও কী সে তাকে আগের মতোই, না বলা প্রেমের মতোই ভালোবাসে সে? রূপরেখার স্বামী গত হয়েছেন অনেকদিন৷ তার সংসার আছে৷ সন্তান আছে৷ কীভাবে পাবে তাকে? এটাও কী সম্ভব! তারপর সাহস করে বলে
: সেই আলো আঁধারের রাতে তুমি আমাকে যেটা দিয়েছিলে, সেটা দেবে....?
ভাবে রূপরেখা৷ পদ্মা আর যমুনা এক সঙ্গ বইছে এখানেই একটু দূরে৷ এক নদীর পানি নীল, আরেকটার ঘোলা৷ মিলছে, আবার মিলছে না৷ সেদিকেই তাকিয়ে সে বলে
: যদি দেই, নেবে?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:১৬
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×