কথাগুলো একটানেই বললো সে৷ কাকডুবি নামের একটি গ্রামের মেয়ে নয়না৷ সেই মেয়ে আর ছেলেটি, যার নাম মহিন, ঢাকা শহরের পাশে যে নদী আছে, বালু নদী, সেই নদীতে ডিঙ্গি ভাসিয়ে দুজন কথা বলছে৷
: কাকডুবি তে আর যাওনি?
: না
:এরপর
এর কোন পর নেই৷ তুমি আমাকে ফেলে এসেছিলে সেই কাশ ফুলের কাছে৷ হোগলা গাছে সুন্দর ছোট্ট টুনটুনির বাসার কাছে, কোকিলের কষ্টের ডাকের কাছে৷ আমি থেকে গেছি৷ পরে ঢাকায় ভায়ের বাসায়৷ এরপর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়৷ অনেক খুঁজেছি তোমায়৷ কত যে কষ্ট৷ না ছিলে তুমি, না ছিল অন্য কেউ৷ আর এখন পড়াচ্ছি একটি কলেজে৷ ভালোই৷ তোমার কথা বলো?
: আমার কোন গল্প নেই৷
: গল্প নয়, সত্যটা বলো?
বালু নদীর পানির রঙ কালো৷ একেই কি বলে কাক চক্ষু জল? টঙ্গী থেকে অনেকটা দূরে গাড়ি নিয়ে এসে দুই জনে নেমে এসেছে৷ দুজনের দেখা কতদিন পর, দুই, চার বছর? না আরও অনেক বেশি৷ হতে পারে বাইশ কিংবা তেইশ৷ কলেজের শিক্ষক বলে নয়নার ভারিক্কি এক চেহারা হয়েছে৷ একটু মুটিয়েও গেছে৷ ঘরে দুই সন্তান৷ আর মহিনের? ছেলে নেই, মেয়ে নেই৷ বৌ আছে৷ থাকে অনেক দূরে৷ মার্কিন মুল্লুকে৷ অর্থনীতি কপচায় একটি প্রতিষ্ঠানে৷
: তোমার গল্প বললে না?
: কাকডুবি থেকে চলে আসার পর সরাসরি বিদেশে৷ আস্তে আস্তে সেখানেই ডক্টরেট নামক ডিগ্রি৷ নামের শেষে ড. লাগাতে আমার ভালো লাগে না৷ বৌ-এর বড় শখ ড. লাগাই৷ সে আছে একই প্রতিষ্ঠানে৷ বিদেশিনী৷ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম!
: ভালোবেসে?
: হ্যা সত্যিই ভালোবেসে৷
: পারলে?
: সময়, নদীর স্রোত আর ভালোবাসা কী কারও জন্য অপেক্ষা করে?
: করে, কারও কারও ভালোবাসা করে৷
: কী যে বলো না!
: যাহা বলি সত্য বলি৷ দেখো অনেকে বিয়ে করে৷ অনেকে করে না৷ কেন করে না? ঘর বাঁধে না, ঘর ভাঙবে বলে৷ নাকি নিজের মন নিজে ভাঙ্তে চায় না! তুমি আমাকে ভালোবাসতে?
: বাসতাম৷
: পাস্ট টেন্স!
: ব্যাপারটা ঠিক হলো না৷ আসলে এই হৃদয়ের কোথাও একটি ছোট্ট জায়গা রয়েছে৷ সেখানে কেউ একজন থাকে৷
: কে সে?
: তুমি৷
: বাজে বকছো৷ সত্যি্ই যদি তা হতো তাহলে তুমি ফিরে আসতে৷ আমার কাছে৷ আমি অপেক্ষায় ছিলাম৷
: বাদ দাও৷ যা হবার তা হয়েছে৷
: ঠিক বলেছো৷ আচ্ছা আমাকে মনে পড়ে না৷
: পড়ে৷ খুব৷
নৌকাটি চলছে না৷ এই নৌকায় একটি মাত্র বৈঠা৷ নৌকার মালিকের কাছ থেকে বলে কয়ে নৌকাটি নেয়া হয়েছে৷ না এ জন্য কোন পয়সা দিতে হয়নি৷ লোকটি প্রথমে ভেবেছিল এরা কি নৌকা চালাতে পারবে? শহুরে বাবু-বিবি৷ পরে কাকডুবির শৈশব, সদ্য যৌবনে কাঁকন নদীতে সাঁতার....ইত্যাদি কথা শুনে লোকটি বুঝেছে ওদের দিয়ে হবে৷
নয়নাকে মাঝে মাঝে মনে পড়ে মহিনের৷ এই তো কয়েকদিন আগে এক রাতে সে দেখলো সাত সমুদ্র আর হাজার নদী পেরিয়ে মহিনের বাসায় এসে উপস্থিত মেয়েটি৷ আছে ঠিক আগের মতোই৷ লাস্যময়ী৷ বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে রয়েছে সে৷ ঘরে কীভাবে ঢুকলো মেয়েটি, কে জানে! চমৎকার এক ভালোবাসার হাসি হেসে বললো
: বাবুর যে এখনো ঘুম ভাঙছে না৷ কখন উঠবেন জানতে পারি৷ লেবু চা তো জুড়িয়ে যাচ্ছে৷ মহিন বিছানা থেকে উঠে হাত বাড়িয়ে চা নিতে যাবার সময় দেখলো তার পাশে শুয়ে আছে এপিক্স, তার স্ত্রী৷
না এই গল্পটা নয়নাকে বলা না৷ ও হয়তো ভাবতে পারে বানিয়ে বানিয়ে বলছে৷ এটা অনেকটা বানানো বলে মনে হয় না! নিজেকেই জিজ্ঞাস করে মহিন৷ বিপরিত পাশে বসে তারদিকে অপলকে তাকিয়ে আছে নয়না৷ যাকে সে ডাকতো মাটির মানবী বলে৷
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:০৯