চৈত্রের এক দুপরে আমি সেই হাটে। হাটের মাঝখানে আছে বড় বট আর পাকুড়ের গাছ এখনো আছে। নেই কেবল সেই সময়, ভালো লাগা। বদলে গেছে সব।
ছেলেবেলায় সেই গাছের দিকে তাকিয়ে থাকতাম আমি। গাছ দুটি এক হয়ে দারুণ এক দৃশ্য রচনা করেছে। শত শত জট সেই উপর থেকে নীচের দিকে নেমে এসেছে। আমি ভাবতাম, এই গাছে এতো পাখি কেন। কখনো সেই জট ধরে ঝুলে এক ধার থেকে অন্য ধারে যেতে ইচ্ছে হতো। এই ইচ্ছেটা কোন দিনই পূরণ হয়নি। হয়তো হবেও না।
হাটে ছিল অনেক দোকান। মুদির দোকানগুলো সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকতো। আর অন্য দোকানগুলো খুলতো কেবল সপ্তাহের দুই দিনের হাটবারে।
হাটের হাটুরে হবার মজাই ছিল আলাদা। আমাদের বাড়ি থেকে সপ্তাহের দুই দিন বিকালে সেই হাটবারে হাটে যেতে হতো খাজা কেনার জন্য। নানা রকম খাজা। আমার অবশ্য ভালো লাগতো সন্দেশ। আর একটি জিনিস বেশ লাগতো। সেটা হলো সিদ্ধ ডিম। সবাই সেই খাজা ওয়ালা যিনি সিদ্ধ ডিম ভেজে বিক্রি করতেন, তাকে ডাকতো কাহা বলে। কেন কাকা না বলে কাহা বলতো? উত্তর জানি না। তবে লোকটি হিন্দু ছিল বলেই নাকি কাকা না বলে কাহা বলা হতো।
হাটের এক কোণে বসতো জেলেরা নিয়ে আসতো মাছ। রুপালি সব মাছ। পদ্মা নদী থেকে, যমুনা নদী থেকে আসতো সেই মাছ। কুচো চিংড়ি, ইলিশ মাছ, রুই মাছ, বোয়াল, শোল, পুটি আরও কত কী! সেই মাছ কিনে, বড় হলে তার গলায় কলা গাছের বাকলের দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো বাড়িতে। আর সেই মাছের দাম যদি পথে মানুষ জিজ্ঞাস না করতো তাহলে কী আর ইজ্জত থাকে! মানুষ ইজ্জত রাখত।
হাটের ঠিক পূর্ব প্রান্তে বসতো কামার আর নাপিতের দোকান। সবই ভ্রাম্যমান। পাশেই সবুজ বাঁশ নিয়ে আসতো মানুষ। সেই বাঁশ বেঁচে মাছ কিনতো, চাল কিনতো, কিনতো আনাজ পাতি, কাঁচা মরিচ, লবন, গুড়।
একটা অদ্ভুত গন্ধ থাকতো সেই হাটে। শশি মালতীর গন্ধ। ঠোট ফাটা দূর করতে ঐ শশি মালতি ঠোটে লাগাতাম আমরা। দক্ষিণ দিকে লিয়াকত ডাক্তারের দোকান। ভিড় লেগে থাকতো হাটবারে।
.....
অনেকদিন বাদে সেই হাটে হাট বারেই গিয়েছি আমি।
না সেই ছেলেবেলার কিছুই নেই। আছে কেবল সেই জটাধারী বট গাছটি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৩