১.
- ওরা ক'জন?
- তিন জন, জনাব। উত্তরদাতা মাথা নিচু করে জবাব দিলো।
মাথায় হ্যাট পরা লোকটা ভেতরে ঢুকে পড়লো। হাতে একটা ত্রিকোনাকৃতির লাগেস। সম্ভবত লাগেজটি উনি বানিয়ে নিয়েছেন। আবছা আলোর লম্বা গলি ধরে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। তার সাথে উত্তর দেয়া লোকটিও আছে। গলি পেরিয়ে একটা বিশাল কক্ষ। কক্ষের সিলিংয়ের একটু নিচে লম্বালম্বি মোটা আকৃতির একটা রড লাগানো। রড়ের মাঝ বরাবর ফাঁকা ফাঁকা করে নিচের দিকটা বাঁকা করা কিছু রড ঝুলানো। রডগুলো ঠিক মাংসের দোকানের মাংস ঝুলানোর রডগুলোর মত। এই রডগুলোতে মাংসের মত করে তিনজন বিবস্ত্র মানুষ ঝুলে আছে। বুকের উপর দিয়ে বোগল পেরিয়ে একটা মোটা রশি গলার পেঁছন দিক দিয়ে উঠেছে। সেটা বাঁকানো রডগুলোর সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
লোকটা হ্যাটটা খুলে টেবিলের উপর রাখলেন। হাতে সার্জিক্যাল গ্লভস পড়তে পড়তে চিতকার করে বললেন, এনি উইশ? ঝুলন্ত লোকগুলো কেঁপে উঠলো।
২.
- কে আপনি?
- এক গ্লাস পানি হবে? লোকটার ঠোঁট কাঁপছে। শরীর ঘামে ভিজে গেছে।
প্রশ্নকর্তা উত্তর এড়িয়ে ঘর থেকে পানি এনে দিলো। লোকটা পানি খেয়ে বললো,
- ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য নিশ্চয় বিশেষ উপহার রয়েছে। একথা বলে লোকটা হাঁটতে শুরু করলো। প্রশকর্তা হাতে খালি গ্লাসটা নিয়ে লোকটার চলে চাওয়া দেখছে।
পরদিন দুপুরে মসজিদ প্রাঙ্গণে একটা জানাজা হচ্ছে । সেই লোকটা প্রাঙ্গণের এক কোণায় দাঁড়িয়ে জানাজায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো লোকগুলোকে দেখছে।
৩.
রিশি মাত্র ঘর থেকে বের হলো। একজন ভিক্ষুক তার সামনে হাত পেতে বসলো, ভাই সকাল থেকে কিছু খাই নাই, কটা টাকা দেন। রিশি মানি ব্যাগ থেকে দশটাকা বের করে দিলো। এরপর রিশি কিছুদূর গিয়ে রিকসা ডাকবে তখন দেখে রাস্তার পাশে ছোট একটা মেয়ে শুয়ে আছে পাশে একটা থালা রাখা, তার মধ্যে কিছু খুচরা টাকা। মেয়েটা তার দিয়ে তাকিয়ে আছে। রিশি ইগনোর করতে পারে নাই। মানিব্যাগ থেকে দশটাকা বের করে থালার মধ্যে রেখে দিলো। রিশি রিকসায় উঠে গেলো। রিকসা থেকে নামার পর রিকসাওয়ালা বললো, ভাই কিছু বাড়ায়া দেন,এখন ভাড়া কম পাই। রিশি রিকশাওয়াকেও দশটাকা বাড়িয়ে দিল। এভাবে সে আরো অনেক মোড়ে, বাসে গেইটে টাকা দিয়ে গেলো। এখন তার মানিব্যাগ শূন্য। সে মানিব্যাগের ভেতরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তার মনে হলো সে একা কোথাও দাঁড়িয়ে আছে। সে চারপাশে চোখ ফেরায়। সে খেয়াল করলো, সে দাড়িয়ে আছে একটা ছোট শুকনো জায়গার মধ্যে আর চারপাশে শুধু পানি। চোখ যতদূর যায় ততদূরই পানি। পানিগুলোর কোন আওয়াজ নেই, কোন নড়াছড়া নেই