somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইমেলা, বই কেনা এবং বই পড়া বিষয়ক ভাবনা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বসন্তের শুরুর দিন ক্যাম্পাসে উদাশ হয়ে অন্যান্য দিনের মত হাটাছিলাম। হঠাৎ দেখি বইমেলা খোলা। বুঝলাম না, সব সময় তো তিনটা বাজেই খুলে। সেদিন মনে হয় বিশেষ দিন উপলক্ষে আগেই শুরু করেছে। ভাবলাম একটু ডু মেরে আসি। পকেটে তো টাকা আছেই।

হাটতে হাটতে অন্যপ্রকাশের স্টলের কাছে চলে গেলাম। দেখি সেখানে অসম্ভব ভীড়। এই দুপুর রোদে আমি না হয় যেমন তেমন, এই লোকগুলার কি কাজ নেই যে এখনো এভাবে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? তাদের ভিতর আবার বেশিরভাগ মেয়ে। উনাদের ঠেলে ঠুলে ভিতরে যাওয়া নিশ্চই শোভন দেখায় না। তাই পিছন থেকে ফাক ফোকর দিয়ে দুই একটা বই দেখি। সবই সেই হুমায়ুন আহমেদের বই। অন্য কারো বই হাতে গোনা। তা হবেই, মাথার উপর থেকে উনি যেভাবে জানলা থেকে উকি দিয়ে আছেন, বই ডিসপ্লেতে না রেখে উপায় কি? আপাতত অন্য কোথাও ঘুরাঘুরি করলাম। কিন্তু বার বার ফিরে আসতে থাকি। সম্ভবত তিন বারের বার একটু ডুকার সুযোগ হল। কিন্তু চোখের সামনে দেখি দ্য অয়ান এন্ড অনলি হুমায়ুন আহমেদ হাসছে। একজনকে জিজ্ঞেস করি, - আর কারো বই নেই? উনি একটা ক্যাটালগ ধরিয়ে দেয়। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হল না। এ সময় পিছন থেকে কে যেন নামটা উচ্চারণ করল। শেষে মুখে মুখেই বললাম,- "একুয়া রেজিয়া"র বইটা হবে? বইটা ছিল সেল্পে, একটা কপি-ই সম্ভবত। যাক, অবশেষে দর্শণ পাওয়া গেল।

বইমেলায় বই কিনতে গেলে একটা জিনিসের খুব অভাব বোধ হয়। মৌলিক লেখা খুব একটা পাওয়া যায় না, বেশিরভাগই হয়তো দেখা গেল অনুবাদ। আবার কোন কোন বই আছে যেমন ভূতের গল্প, রহস্য গল্প, ইশপ-এরিস্টটলের গল্প, শেক্সপিয়ারের গল্প এসব ওসব। এই জিনিস তো প্রায় যেখানে সেখানেই পাওয়া যায়। অথবা দেখা যায় বিখ্যাত বাংলা সাহিত্যিক আর কবিদের পুরোনো বইয়ে বাজার সয়লাব।

একটা কথা শোনা যায় যে মৌলিক বই খুব বেশি বিক্রি হয় না। নতুন লেখকদের তো মহা টানাটানি অবস্থা। আবার একটু নাম টাম যাদের আছে তাদের তো বিভিন্ন বছরের বই থাকে মেলায় থাকে থাকে সাজানো।

একটা কথা আছে, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। যে যত যাই বলুক বই কেনার ক্ষেত্রে এই দরিদ্র দেশে প্রথমে মাথায় আসে বইয়ের মূল্য কি রকম। এক সময় মোটামুটি একশ' পৃষ্ঠার একটা বই ষাট সত্তর টাকায় বিক্রি হত। এখন এর দাম দাঁড়ায় দেড়শ'র মত।

শুধুই কি কাগজের দাম বাড়ায় এ মূল্য বৃদ্ধি? অথবা বই কম বিক্রি হয় না বলে? আমার মনে হয় আরো বিষয় আছে। যেমন এখন আর আগের মত সাধারণ কাগজে বই ছাপা হয় না, দামী অফসেট কাগজ লাগে, বইয়ের দাম বাড়বে বৈ কি? প্রকাশকদের পলিসি কি জানি না। ইদানিং দেখি আরো ভালো মানের একটু মেটে বা একটু নীল রঙের কাগজে ছাপা হচ্ছে দেশের নামধারী কিছু লেখকের বই, এগুলো এত মোটা, হাত দিয়ে ছিড়তে গেলেও শক্তির প্রয়োজন। মনে হয় এগুলো এত দরকারী বই, ছিড়ে নষ্ট হয়ে গেলে সমূহ ক্ষতি হবে।

পাশাপাশি আবার কি করছে, বইয়ের কলেবর বাড়ানো হচ্ছে। ফন্টের সাইজ কিছুটা বাড়ালে পঞ্চাশ পৃষ্ঠার বই অনন্ত পাচ পৃষ্ঠা বৃদ্ধি পেলেই বা কম কি? অনেক বইয়ে দেখেছি গল্পের ফাকে চিঠি বা এরকম কিছু উপস্থিত হলে দুইপাশ থেকে মার্জিন টেনে লেখাটা কেমন চিপা বানিয়ে ফেলা হয়, হুমায়ুন পাঠকরা এটা সবচেয়ে বেশি খেয়াল করে থাকবেন। সেই পুরোনো জিনিস ঝেড়ে ফেলে কখনো কখনো পুরো বইটাকেই চিপা বানানোর চেষ্টা চলছে। যদি মার্জিনটা দুই এক অক্ষর বাড়ানো যায়, বই তো অনন্ত বিশ পৃষ্ঠা বাড়বেই। সুতরাং, বইয়ের দাম বাড়ছে।

এরপরও সেই পুরানো অপ্তবাক্য রপ্ত করে আমার মত কেউ গাটের পয়সা খরচ করে একখানা বই কিনেই ফেলল, কিন্তু দেড়শ' টাকার বই নিমিষে পড়ে ফেলে যেন আশ মিটে না। আর তার মধ্যে যদি দেখা যায় সেই পুরোনো গল্প, পুরানা প্লট, মোবাইল ফোন-ফেসবুকে প্রেমের লুতুলুতু, আলতু ফালতু গালগপ্প যা নিজেই লিখে ফেলা যায় বলে মনে হয়, তখন পাঠকের চুল ছিড়তে বাকি থাকে কি? আমি একবার এরকম ধরা খেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম একটু মোটা সোটা বই, পড়ে দেখি। কেনার সময় বুঝি নাই স্টলে স্বয়ং লেখক আছেন, নইলে অটোগ্রাফ নিতে পারতাম। এখন মনে হয় তাকে সামনে পেলে অটোগ্রাফ দূরে থাক, তাকে বলতাম, - আমার টাকা ফেরত দে। নামটা বলছি না, শুধু শুধু একজনের ভাত মেরে লাভ কি? হয়তো আমারও বই ছাপা হবে একদিন, তখন যদি পাঠকেরা আমার সাথে এই কাজ করে! বুঝলেন তো ;)

যাই হোক, এতক্ষণ যা লিখলাম তা সম্পূর্ণই আমার নিজের মতামত ও অভিরুচি। কেউ দ্বিমত করলে বা কারো গায়ে লাগলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১০
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×