somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাস জীবন - ০২

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রদীপ এর নিচে অন্ধকার, হোমলেস তাঁবু

আবার এলাম কিছু প্রবাস জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে। মানব জীবনের গতিপ্রকৃতি কিভাবে পরিবর্তন হয় তার গল্প!

এন্ড্রো, জাতিতে হিস্পানিক, পুয়ের্তো রিকোর অধিবাসী। তার সাথে পরিচয় হয় ম্যানহাটান এর ৪২ নং স্ট্রিট - গ্রান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন এ। জরুরি দরকার ছিলো বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যাওয়া। আমাদের সব করিৎকর্মা লোক বসে আছেন আর কাজ করছেন খোশমেজাজে এ! তো কাজকর্ম সেরে দুপুর হয়ে গেলো, মনে করলাম যেহেতু আবার একই স্টেশন দিয়ে ফেরত যাবো, কিছু খেয়ে নিলে মন্দ হয় না। একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে চিবুচ্ছি আর বেচারার আগমন।

- তোমার কাছে কিছু খুচরো হবে? বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। আমি বললাম বেশ তো, চলো তোমাকে একটা স্যান্ডউইচ খাওয়াই। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি আমি এরকম করে কেউ চাইলে সাধারণতঃ আমি খুচরো দেয়ার চেয়ে তার প্রয়োজনটুকু পূরণ এর চেষ্টা করি সাধ্যেমতো। যাহোক খাওয়া শেষ করে আমার কিছু সময় ছিল আর তার সাথে গল্পে মত্ত হলাম। কথাবার্তা শুনে কিছুটা শিক্ষিত মনে হলো। জিজ্ঞেস করতে বলে হাই স্কুল পাশ করে নি। চার ভাই, তিন বোন। মা - বাবার কোনো খোঁজ নাই। জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না, তাই ভবঘুরের জীবন বেছে নিয়েছে। আরো জানালো তবে সে কাজ করতে চায় যদি সেটা ভালো লাগে। তার সাথে আরো কিছু গল্প করে ফোন নম্বর নিয়ে চলে এলাম। আমার এক পরিচিত কোম্পানির মাধ্যমে তাকে জেফকে এয়ারপোর্ট এ পরিষ্কারক (Janitor) এর কাজের প্রস্তাব দিলাম। ইন্টারভিউ, সিকিউরিটি চেক সব কিছুতেই সে উৎরে গেলো আর কাজ এ যোগদান করে ফেললো! ব্যস্ততার কারণে আমিও ভুলে গিয়েছিলাম তার কথা সময়ের পরিক্রমায়।

বছর ছয়েক পরে একদিন আবার দেখা হলো এক ম্যাকডোনাল্ডস এর পার্কিং লট এ। আমাকে দেখেই ছুটে এলো আর এতো খুশি যে সে যেন চাঁদকে খুঁজে পেয়েছে। অনেক কথা হলো আর যা বললো তাতে আমি সত্যিই বিমুগ্ধ। সে পরিষ্কারক এর কাজ এর পাশাপাশি পড়াশুনা করে ব্যাচেলর সম্পন্ন করে ফেলেছে। তারপর ইন্টারভিউ দিয়ে কর্নিং (Corning) কোম্পানি তে সফটওয়্যার ডিজাইনার হিসেবে চাকুরী করছে, বছরে $১৩০,০০০ এর মতো তার উপার্জন! আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে সে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো সেও চেষ্টা করে তার কমিউনিটি তে বেশ কিছু যুবক/যুবতী দের কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত করছে যাতে সমাজে বেশ ভালো অবস্থান এ থাকতে পারে। বেশ খুশি হলাম তার এই প্রচেষ্টায় আর ভালো লাগলো যে সে নিজের চেষ্টায় সফল হতে পেরেছে।

ভালো লাগে যখন দেখি মানুষ জীবনে চেষ্টা করে, অধ্যবসায়ে সফলতা আসবেই সেটা যেভাবেই হোক না কেন।

এবার আমার এক স্মৃতি শেয়ার করি। আমি সাধারণতঃ গাড়ি বেশ জোরে চালাই। বেশ কয়েকটা টিকেটও খেয়েছি আর ইন্সুরেন্স তা বেশ উচ্চমূল্যে আমার জন্যে। যা হোক এটি গতি সংক্রান্ত একটি ছোট ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ড্রাইভ করে যাচ্ছি নিউ জার্সি তে। রাত বাজে ৩:৩০ মিনিট। উইলিয়ামস বার্গ ব্রিজ তা পার হলাম ৫৫ মাইল গতি তে। যথারীতি পুলিশ এর সাইরেন আর থামানো আমার গাড়ি।

- তুমি যে ব্রিজ তা পার হলে পঙ্খিরাজ এর মতো, তোমার বান্ধবী অপেক্ষা করছে তোমার জন্যে? গতি সীমা ৩৫ মাইল সে কি তুমি জানো না?

- অফিসার, আরো দুটি গাড়ি তোমার সামনে দিয়ে চলে গেছে ৬৫ মাইল গতিতে অথচ ওদের আটকালে না, আর আমাকে আটকালে? কেন আমি বাদামি চামড়া বলে? তোমার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি আমি একটা জরুরি কাজ (ইমার্জেন্সি) আই - ৮৭ এ হয়েছে আর তুমি সেটা না জানলে টিউন করো চ্যানেল ১৩ এ।

- তো তাতে তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আমি যদি না যাই, পোর্ট অথরিটি কে কোস্ট গার্ড $২৫০০০ জরিমানা করবে প্রতি ঘন্টায়, তুমি কি সেটা চাও? যদি না চাও, তো আমাকে তাড়াতাড়ি বিদেয় করো।

- আগে বলবে তো, তুমি এই জন্যে যাচ্ছ? তোমার ক্লেয়ারেন্স কেন আগে দেখালে না? কোনো সমস্যা নেই, জলদি যাও।

অতঃপর, আমি চলে গেলাম আমার গন্তব্যে!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:১৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×