somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনথ্রাক্স নয় মারাত্মক রোগ

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৬:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটি ১৮-০৯-২০১০ তারিখের দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা থেকে নেয়া।



ডা. মো. শহীদুল ইসলাম
পরিচালক, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্ট
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, ঢাকা

বেশ কিছুদিন ধরে দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত অন্যতম বিষয় হচ্ছে গবাদিপশুর তড়কা বা আনথ্রাক্স। মানুষের মন থেকে সংশয়-সন্দেহ দূর করার জন্য সবার উচিত রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা এবং প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার ব্যবস্থা নেয়া।

তড়কা বা আনথ্রাক্স কী

এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। Bacillus anthracis নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে এ রোগের উৎপত্তি। এর জীবাণু মাটি ও বাতাসের সংস্পর্শে আসার পর সাধারণত ৪ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে এদের চারপাশে একটি গোলাকৃতির শক্ত আবরণের সৃষ্টি হয়। এ আবরণকে স্পোর বলে। এরপর শত বছর পর্যন্ত এ জীবাণুটি বেঁচে থাকে- যা খাদ্য, শ্বাসনালী কিংবা চামড়ার কোন ক্ষত দিয়ে প্রাণীর দেহে প্রবেশ করে রোগের সৃষ্টি করে। সাধারণত হঠাৎ বৃষ্টির পর রোদ উঠলে এ রোগের জন্য অনুকূল আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। কারণ, বৃষ্টির ফোঁটার আঘাতে মাটির নিচে থাকা ব্যাকটেরিয়ার স্পোর মাটির উপরে ঘাসে চলে আসে। তখন পশু মাঠে চরার সময় খাবার বা শ্বাসনালী দিয়ে এ রোগের জীবাণু দেহে প্রবেশ করে।

উৎপত্তি ও রোগের বিস্তার

১৭৭৩ সালে প্রথম এ রোগটি শনাক্ত হয়। ধারণা করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে রোগটি প্রথম দেখা যায়। পরে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য, পশমের কাপড়, হাড়ের গুঁড়া ইত্যাদি রফতানির মাধ্যমে এ রোগটি বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করে। আগেই বলা হয়েছে, খাদ্য, শ্বাসনালী কিংবা চামড়ার কোন ক্ষত দিয়ে জীবাণু প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে রোগের সৃষ্টি হয়। সাধারণত চারণভূমিতে ঘাস খাওয়ার সময় খাদ্যের সঙ্গে এ রোগটি গবাদিপশুর শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত গবাদিপশুর সংস্পর্শে থাকা মানুষের শরীরে এ রোগ সহজে আক্রমণ করতে পারে। আক্রান্ত পশুর জবাই করা মাংস থেকেও মানুষের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে। এছাড়া মানুষের মধ্যে যারা চামড়া ও পশম কারখানায় কাজ করে তারা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
তবে মনে রাখা ভালো, এ রোগের জীবাণু মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না কিংবা গাভীর দুধ থেকেও এ রোগ ছড়ায় না।

রোগের লক্ষণ

আক্রান্ত গবাদিপশুর মধ্যে সাধারণত তিন ধরনের তড়কা বা অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা যায়।
প্রথমত : অতীব চরম ধরনের তড়কা। অনেক সময় আক্রান্ত পশুর মধ্যে রোগের কোন লক্ষণই দেখা যায় না কারণ হঠাৎ করে পশুটি মারা যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে আক্রান্ত পশু দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
দ্বিতীয়ত : চরম ধরনের এ রোগে আক্রান্ত পশু ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। আক্রান্ত পশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০৭ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যায়। নাক-মুখ দিয়ে লালা ঝরে, শ্বাসকষ্ট হয়, পেট ফাঁপা দেখা দিতে পারে, শরীর কাঁপতে থাকে এবং চোখ জ্বলজ্বল করে ও পানি ঝরে।
তৃতীয়ত : সাধারণ ধরনের এ রোগে আক্রান্ত পশু ৩-৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। পূর্বোক্ত একই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।
উল্লেখ্য, মানুষের শরীরে এ রোগটি সাধারণ ধরনের হয়ে থাকে। আক্রান্ত মানুষের ত্বকে ফোসকা হয়ে তা গলে চাকতির মতো ঘা হয়।

চিকিৎসা

সাধারণ অতীব চরম ধরনের রোগে আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা করার কোন সুযোগ থাকে না। তবে চরম ও সাধারণ ধরনের রোগে আক্রান্ত পশুকে দ্রুত পেনিসিলিন বা এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করলে পশুটির সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে এ রোগে আক্রান্ত মানুষকে সিপ্রোফ্লক্সাসিলিন দ্বারা চিকিৎসা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে সাধারণ পেনিসিলিনে এ রোগ দ্রুত নিরাময় হয়।

প্রতিরোধ

- আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে।
- দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- অসুস্থ গবাদিপশুকে জবাই করা যাবে না।
- মৃত পশু এবং এর বর্জ্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে কমপক্ষে ছয় হাত মাটির নিচে রেখে মৃতদেহের উপরে কলিচুন বা ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে।
- মৃত পশুর চামড়া যাতে ছাড়ানো না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
- আক্রান্ত এলাকার সব গবাদি পশুকে টিকা দিতে হবে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা

১. প্রাণিসম্পদ বিভাগ ডিজিজ সার্ভিলেন্স কার্যক্রম জোরদার করে আক্রান্ত এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক বর্তমান ও আগের রোগের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে এবং সেগুলো পর্যালোচনা করছে।
২. পর্যালোচনাপূর্বক তথ্যসমূহ প্রচার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৩. প্রতি উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ওই এলাকায় গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণপূর্বক জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে টিকা চেয়ে পত্র প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, গবাদিপশুর মালিক, মসজিদের ইমাম ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকের সহযোগিতায় সভা-ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হচ্ছে। তাছাড়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারে করণীয় বিষয়ে লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হচ্ছে।
৫. প্রতি উপজেলায় পশু জবাইয়ের স্থান চিহ্নিত করে জবাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে সুস্থ পশু জবাই এবং জবাইয়ের স্থান জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
৬. প্রতি জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নিয়মিত পশু জবাই কার্যক্রম মনিটরিং করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং মিউনিসিপালিটি ও পৌরসভাতেও অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
৭. এসব কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে তড়কা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৬:৩২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×