somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প- নিজের তীরে নিজেই ঘায়েল

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গল্প- নিজের তীরে নিজেই ঘায়েল

বাজার থেকে এসে ব্যাগটা গোলাপজানের হাতে দিয়ে সেই থেকে থুম মেরে বসে আছে নুর আলী। রান্নাঘরে ব্যাগটা উপুর করে ঢেলে এক নজর সেদিকে তাকিয়েই নুর আলীর কাছে দৌড়ে আসে গোলাপজান। নুর ভাই, আজ এই কয়টা মাছ আনলা যে? বিবি সাব কি ট্যাহা কম দিছে?
প্রশ্নটা করে কিছুক্ষণ উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে গোলাপজান। কিন্তু নুর আলী আগের মতোই মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। ব্যাপারটা কেমন যেন খটকা লাগে গোলাপজানের কাছে। নুর আলীকে একটা ধাক্কা দিয়ে আবার বলে
কি? এমন টাসকি মাইর‌্যা গেলা যে? কি অইছে খুইল্যা কও। বিবি সাব মাছের কথা জিগাইলে কি কমু?
কইবি মাছ খাইতে অইলে আগে মাছি বার করতে অইব।
এইডা আবার কেমন কথা? সাধু সন্ন্যাসী অইয়্যা গেলা নাকি আচমকা। আমরা মাছি তাড়াইয়্যা কুলাইতে পারি না। আর হে কয় মাছি খুঁজবার। জিগাইলাম মাছের কথা আর তুমি মাছি লইয়্যা এই সব কি কইতাছ?
কই কি আর সাধে রে গোলাপ! ব্যাপারটা জানলে তুইও আমার মতো টাসকি লাইগ্যা যাবি।
কও শুনি তোমার কথা। তাড়াতাড়ি করবা কিন্তু। আমার রান্না চড়াইতে দেরী হইয়্যা যাইব।
অত তাড়াহুড়ার মধ্যে ত কওন যাইব না। ব্যাপারটার মধ্যে চিন্তা করার বিষয় আছে। তুই যদি নিরিবিলি চিন্তা না করতে পারস তাইলে বুঝতে পারবি না আমি কেন টাসকি মাইর‌্যা গেলাম।
আচ্ছা তুমি কও। আমি রান্না করতে করতে চিন্তা করুম নে।
বলে নুর আলীর পাশে কার্পেট এর উপর বসে পড়ে গোলাপজান। নুর আলী গোলাপজানের দিকে তাকিয়ে বলে,
আমি মাছি লইয়্যা কথা কইতে ছিলাম কেন জানস? যেখানেই মাছ থাকব সেখানেই মাছি আইব এইডাই তো জানস। মাছ যত পচতে থাকব মাছির উড়াউড়ি তত বাড়তে থাকব এইডাও ত জানস। কিন্তু অবাক ব্যাপার কি জানস? আজকাল মাছের বাজারে মাছি দেখাই যায় না। আমরা বাজার গেলে বুঝতেই পারি না কোনটা পচা মাছ কোনটা ভালো মাছ।
আরে বুঝাবুঝির কি আছে? বাজারে এখন কোন পচা মাছ নাই। এইডা ত ভালোই অইল। তাইলে তুমি মাছ কম কইর‌্যা আনলা কেন?
তর যেমন বুদ্ধি! বাজারে পচা মাছ নাই এই কথাডা বিশ্বাস করতে কস তুই আমারে? মাছ পচনের সুযোগ পাইলে ত! ব্যাপার অইল মাছিরা এখন আর মাছের ধারে কাছে আসে না হেদের জানের ভয়ে।
এইডা আবার কেমন কথা?
হ, এইডাই ঠিক কথা। আজকাল মাছের শরীরে নাকি ফরমালিন না কি যেন এক ধরনের ঔষধ মিশানো অয়। ঐডা হইল মারাত্মক বিষ। পেটে গেলে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ অইতে পারে। পোকা-মাকড়-মাছি নাকি সাথে সাথে মইরাই যায়।
আচ্ছা, তুমি যে প্রত্যেক দিন মাছ কিইন্যা আন অইগুলাতে মাছি বসে না?
আরে ঐখহানেই ত আসল সমস্যা। আমি ত এতদিন খেয়াল কইর‌্যা দেহি নাই। কাইল টিভিতে অনুষ্ঠানটা দেইখ্যা আইজ বাজারে গিয়া ভাল কইর‌্যা খেয়াল করলাম। সত্যি, কোন মাছের দোকানে মাছি উড়তে দেখলাম না।
তার মানে আমরা যেসব মাছ খাইতাছি সবগুলানে ঐ বিষ মিশানো! হায় হায়! এখন কি অইব? তুমি এই কথা বিবি সাবরে কইবা না নুর ভাই?
হেরা সবই জানে। নতুন কইর‌্যা কইয়্যা আর কি অইব? আমি ভাবতাছি অন্য কথা।
অন্য আবার কি কথা? যা কথা তা ত কইয়্যাই ফালাইছ।
অইডাই ত আসল চিন্তার কথা। তরে কইছিলাম না যে নিরিবিলি চিন্তা করার বিষয় আছে। হুন, যেডা লইয়্যা আমি ভাবতাছি। ভাবতাছি পোকা-মাকড়-মাছি যে জিনিসটার কাছে গেলেই মইর‌্যা যায় হেইডা দিনের পর দিন খাইয়্যা আমরা বাঁইচ্যা আছি কেমনে? খোদায় আমাদের শরীরের ভিতর কি দিয়া সৃষ্টি করছে।
নুর ভাই, এইবার আমি একটা কথা কই? দেখবা আমার চিন্তা তোমার চিন্তার চাইতে একটু হইলেও উপরে আছে।
ক দেখি তর চিন্তার কথাডা।
খোদায় আমাদের শরীরের ভিতর বিশেষ কিছু দিয়া সৃষ্টি করে নাই। ভেজাল খাইতে খাইতে আমাদের শরীরটাই ভেজালের একটা বড় কারখানা অইয়্যা গেছে। বিষ খাও আর যাই খাও কোন কিছুই আর শরীরের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তুমি খালি মাছ লইয়্যা চিন্তা করতাছ ? দেখলা না শাক-সব্জিসহ সব কিছুতেই ত ভেজাল মিশায় ব্যবসায়ীরা। তুমি কি সব কিছুর খাওন ছাইর‌্যা দিতে পারবা? তার চাইতে ঐসব চিন্তা রাখ। তুমি আমি চিন্তা কইর‌্যা কি অইব? যাদের চিন্তা করনের দরকার হেরাই ত করে না।
হেরা করে না এই কথাই বা কই কেমনে? উত্তর দেয় নুর আলী। এই যে কিছু কিছু ধরা পড়তাছে হেরা ব্যবস্থা নিতাছে বইল্যাই ত।
এই ব্যবস্থাডা আরও বেশী কইর‌্যা জোড়েসোড়ে নেওন যায় না? তাইলে ত এই রকম জালিয়াতিডা এক্কেবারে বন্ধ অইয়্যা যাইত।
হেরাও ত এইসব বিষ খাইয়্যা খাইয়্য আমাগর মতো হজম কইর‌্যা ফালাইছে। কাজেই জোরেসোরে কাজ করনের গরজ তেমন কইর‌্যা নেয় না। পেটের ভিতর যদি বিষের তান্ডব চলত তাইলে দেখতি সব মানুষ রাস্তায় নাইম্যা আইত ভেজালের বিরুদ্ধে শে¬াগান দিতে দিতে।
কি রে গোলাপ রান্না চড়াবে কখন? বসে বসে গল্প করছিস যে? বাজার এনেছে সেই কখন? মাছগুলো যে পচে যাবে।
আম্মা, চিন্তা কইরেন না। এই মাছ পচব না।
পচবে না মানে? তোর জন্য কি মাছের পচন থেমে থাকবে না কি?
আমার লাইগ্যা না আম্মা। ঐ যে মাছের মধ্যে কি যেন বিষ মিশায় ঐডা মিশাইলে নাকি মাছ সহজে পচে না। দেহেন না বৈশাখ মাইস্যা গরমে আমাগর মাথার তালু গইল্যা যাইতাছে তাও মাছের কিচ্ছু হয় না। আচ্ছা আম্মা, আমাদের সাহেবের যে মাছের আড়ৎ আছে না আমরা ত ঐহান থাইক্যা মাছ আইন্যা খাইতে পারি! সাহেবও কি মাছে ঔষধ মিশায়?
প্রশ্ন শুনে তথমত খেয়ে যায় রুদমিলা জোয়ারদার। গোলাপজান আবার বলে
আমি আর নুর ভাই আইজ থাইক্যা কোন মাছ খামু না। যা আনব আপনেরার লাইগ্যা রাইন্ধ্যা দিমু।
কথাটা বলে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে চলে যায় গোলাপজান।
বর্জনের কাজটা তা হলে আমাদের রান্নাঘর থেকেই শুরু হলো! এ যে আমার তীর দিয়ে আমাকেই ঘায়েল করা! ব্যাপারটা আজই সুজাকে জানাতে হবে। এখনই সাবধান না হলে পরে এর মাশুল টানতে হবে অনেকদূর।
নিজের মনের সাথে কথা বলে রুদমিলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×