somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প----ফিরিঙ্গি বাতাস

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিরিঙ্গি বাতাস

চৈত্রের ফিরিঙ্গি বাতাস নাসুর মনকে উদাস করে তোলে। টানতে থাকে হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেবনের দিকে। কিন্তু পড়ন্ত বিকেলের এই তাল-লয়হীন উন্মাতাল লু হাওয়াকে বড় ভয় হয় নাসুর। এমনি এক চঞ্চল হাওয়ার দিনে নিজের ভিতরের বসন্তের পুষ্পিত উন্মত্ততার টানে সে হাত রেখেছিল রোমেলের হাতে। মাত্র ছয় মাসের ভালবাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনের আবডালে। সিদ্ধান্তটা নাসুকেই নিতে হয়েছিল। কারণ স্বজন-পরিজন-আত্মীয়-বান্ধব বলতে কেউ নেই ওর এই সংসারে। এতটা পথ সে কিভাবে কার সাহায্যে পার করে এসেছে সেই ইতিহাস নিয়ে এখন আর কেউ মাথা ঘামায়না। তবে জীবনের চৌদ্দতম বসন্ত নাসুর এতদিনের ছন্দময় গতিতে যে বাঁক তৈরী করে দিয়েছিল সেখানেই সে দেখা পেয়েছিল রোমেলের। তার মতো বংশ-পরিচয়হীন রোমেলও এসেছিল ইট-ভাটায় কাজ করতে। দুই জনের মধ্যকার সেতু বন্ধন এটাই। যেন এক নদীর দুইটি ধারা নাসু আর রোমেল। এক ধারায় বইতে সময় লাগেনি ওদের। পরিচয়, ভালবাসা সব মিলিয়ে বছর গড়ানোর আগেই এক চালের নীচে ঠিকানা হয়ে যায় দুজনের। চৈত্রের এমনি এক ঘূর্ণি হাওয়ার বিকালে মালা বদল হয় নাসু আর রোমেলের।

যে চৈতি হাওয়া নাসুর জীবনে রোমেলকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল সেই চৈতি হাওয়াই আজ নাসুর জীবনের অভিশপ্ত ফিরিঙ্গি বাতাস। নাসু একে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। ইচ্ছে করে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে চৈত্র মাসটাকে চিরতরে মুছে দিতে। নাসুর মনে হয় এটা করতে পারলে চৈত্র মাস এলেই পাগলা ঘূর্ণির উদাসী হওয়ায় ওর মনের সাজানো বাগান তছনছ হবে না কোনদিন। রোমেলের বিশ্বাসঘাতকতায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া যে মনটাকে নাসু নিজের মতো করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে বেঁচে থাকার তাগিদে সেই মনটা প্রতি বছর একবার করে গুড়িয়ে যাক এটা নাসু কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।

আজও নাসু অবাক হয়। চৈত্র মাসের যে তারিখে রোমেলের সাথে ওর বিয়ে হয়েছিল এক বছর পর ঠিক একই তারিখে নাসু জানতে পেরেছিল যে রোমেল তাকে ঠকিয়েছে। রোমেল আগেও একটা বিয়ে করেছে এবং সেই স্ত্রীর সাথে এখনও সম্পর্ক আছে। স্বামীর অংশীদারিত্বের প্রশ্নে নারীর চিরায়ত আপোসহীন মন বিদ্রোহ করে উঠে। প্রচন্ড ঘৃণায় সব বন্ধন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে নাসু নিজের সাজানো সংসার ছেড়ে। নাসুর আজ মনে হয় রোমেল এমনটাই বোধহয় চেয়েছিল। তানাহলে নাসুকে আটকাবার এতটুকু চেষ্টা সে করেনি কেন। নিজে নিজেই উত্তর দেয় নাসু। হয়তো স্বামীত্বের অধিকার ফলানোর মতো কোন অহংবোধ আর রোমেলের মধ্যে তখন অবশিষ্ট ছিল না, তাই। তবে পিতৃত্বের অধিকারবোধটা ঠিকই ঐ মুহূর্তে রোমেলের মধ্যে জেগে উঠেছিল। দরজায় শুধু একবার নাসুর পথ আগলে দাঁড়িয়েছিল রোমেল।

মনে রেখ, তোমার পেটের ঐ সন্তান আমার। ওর কোন ক্ষতি হলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিব না।

যেন নাসুকে কোন প্রয়োজন নেই ওর। শুধু ওর পেটের সন্তানটাকেই ভীষণ দরকার।

রাগে-দুঃখে নিজকে সামলাতে পারেনি নাসু। প্রচন্ড তেজে সেও উত্তর দিয়েছিল।

আমি ওকে জন্ম দিলে তবেই তুমি সেই সন্তানের বাপ হতে পারবে। যে পুরুষ একটা ভাল স্বামী হতে পারেনা তাকে আমার গর্বের সন্তানের বাপ হতে আমি দিবনা।

তার মানে তুমি-----।

রোমেলের বাকী কথাগুলো কানে যায়নি নাসুর। হন হন করে সে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।

সেই থেকে দিন-মাস-বছর গড়িয়ে নাসুর মেয়ে হাসুর বয়স আজ চার বছর। রোমেলের সংসার ছেড়ে আসার পর সেই ইট-ভাটার কাজেও আর যায়নি নাসু পাছে রোমেলের সাথে দেখা হয়ে যায় এই আশংকায়। অভাবের টানাপোড়েনে ক্ষত-বিক্ষত হতে হতে এক সময় কাজ পায় নতুন আর একটি ইট-ভাটায়। তবে লোকমুখে সব খবরই পায় নাসু। রোমেল তার পুরানো বউকে নিয়েই আছে। কোন সন্তানাদি হয়নি।
তবে নাসুর পেটের যে সন্তানের জন্য ঐদিন ব্যাকুল আকুতি প্রকাশ করেছিল রোমেল সেই সন্তানেরও কোন খোঁজ এরপর রোমেল করেনি।

কেন?

এর উত্তরও পেয়ে যায় নাসু। নাসুর সন্তান ছেলে হলে যে কোন মূল্যে রোমেল ওকে নিয়ে যেত। রোমেল সম্পর্কে আরও যে খবর পায় নাসু তাতে সে বিস্ময়াহত না হয়ে পারে না। রোমেলের দ্বিতীয় বিয়ের কথা নাকি তার প্রথম স্ত্রী জানত। দুজনে পরিকল্পনা করে শুধুমাত্র একটা ছেলে সন্তানের জন্য নাসুকে বিয়ে করেছিল। ছেলেকে রেখে এমনিতেই তাড়িয়ে দিত নাসুকে। এই কারণেই নাসুর মেয়ে হাসুর প্রতি রোমেলের সামান্যতম আগ্রহ নেই।

চৈত্র মাস এলেই নাসুর স্মৃতির সমুদ্র বার বার ফুলে ফেঁপে উঠে। সেই সময় নাসুর বুকের পাঁজরগুলো বাঁধাহীন উন্মত্ততায় ধাপাধাপি করতে থাকে। তাই তো নাসুর এই চেষ্টা। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে চৈত্র মাসটাকে চিরতরে মুছে ফেলতে পারলেই যেন ওর বুকের কুরুক্ষেত্রে প্রশান্তির ছায়া নেমে আসবে। কিন্তু ছোট ছোট হাত পা ছড়িয়ে মুখে আধো আধো বুলি ঝরিয়ে হাসু যখন নাসুর জরাজীর্ণ ঘরটাকে মুখর করে তুলে তখন মনে হয় এই চৈত্র মাসের মিলন মোহনা থেকেই তো ও খোঁজে পেয়েছে হাসুকে। এই হাসুই তো ওর জীবনে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। চৈত্রের ফিরিঙ্গি হাওয়া ওর জীবনের দুঃখের ভাঁড়াটা ভরে দিয়ে গেলেও রেখে গেছে সুখের এক টুকরো উঠোন। শত দুঃখ-কষ্ট কিংবা দারিদ্রের মাঝে থেকেও এই উঠোনে স্বর্ণালী ফসল সে ফলাবেই। রোমেল একদিন দেখবে মেয়ে বলে যে সন্তানের খবর সে কোনদিন নেয়নি সেই সন্তান তার জ্ঞান-গরিমার গুণে আর দশটা ছেলে সন্তানকে ছাড়িয়ে গেছে অবলীলায়। হাসুর সেদিনের ঐশ্বর্য আর তেজের সামনে রোমেলের পিতৃত্বের দাবী ভেঙে খান খান হয়ে যাবে।

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×