somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু বরেষু (প্রথম পাঠ)।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিনের ইচ্ছা আমার বন্ধুদের নিয়ে লিখব কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও লিখতে পারিনাই।আজকে শুরু করলাম আমার প্রানের ভাষা বাংলায়।বাস্তবিক প্রয়োজনে অনেক জায়গায় আসল ঘটনাকে রুপক অরথে ব্যবহার করতে হয়েছে...যায় হক শুরু করি...


শাহ নেওয়াজ আলম তালুকদার সেতুঃ আমার বিশ্ব বিদ্যালয় জিবনের প্রথম বন্ধু।পরিচয়ের শুরুটা অন্নরকম ভাবে ...ও ছিল ক্লাসে সব থেকে প্রিয় সবার কাছে আর আমি ছিলাম সবার জন্নে চখখুশুল একজন। কেন জানি কেও ই দেখতে পারতনা আমাকে।ক্লাসে যাই হক সব দোষ আমার। রাতের বেলা সিনিওর ভাইএরে কাউকে ধরে নিয়া গেছে পাংগা দিতে, দোষ হবে আমার।তবে আমি কাউকে ধরিয়ে না দিলেও মনে মনে সায় দিতাম হয়ত এটাই আমার দোষ ছিল। যাই হোক যখন ভাবছি আর বোধহয় এই জন্মে বন্ধু পেলাম না তখন্ই সেতু আর আমার বন্ধুত্তের শুরু।সেতু কে বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবেনা।ছোটোখাট গোলগাল সেতু একজন অসাধারন মানুস।মানুস কে কিভাবে হাসাতে হবে ওর চাইতে ভাল কেউ জানত না।আমাদের ডিসিপ্লিনে এর আন্দলনে সেতুর সাথে আমার বন্ধুত্তের শুরু।একদিন সাহস করেই বললাম চল আমার মেসে যাই (বিতরকিত ছিলাম বলে কেউ যেতে চাইত না)।কিন্তু সেতু এসেছিল।সারারাত গল্প করে কাটালাম...আমার প্রেমের কাহিনি, সেতুর ভালবাসার কাহিনি...(বন্ধু সরি...)।

একসাথে অনেক দিন ছিলাম একই মেসে।প্রথমে আমার চকি কেনা হয়নি বলে ওর বেডে ঘুমাইছিও।মাঝে মাঝে কঠিন ঝগড়া লেগে যেত।আর ওর একটা জিনিসের উপরে আমার আজিবনের রাগ তা হল একবার ঝগড়া হলে সে কখনই এগিয়ে আসবেনা যেতে হবে আমাকেই।ও একমাত্র আমাকেই সব খুলে বলত ওর সব কথা ।কত রাত যে গল্প করে কাটাইছি তার কোন ঠিক নাই।আমি আর ও শেয়ার করে পেষ্ট কিনতাম...একসাথে সিগারেট খেতাম...কখনও ও ধরাতো কখনও আমি।আমি শেষ টান্ দিতে পারতাম্ না বলে ও বলত শেষ টান্ টা আমারে দিস (বন্ধু মিস ইউ...)।সেতুর গানের কন্ঠ ছিল অসাধারন...আর আমি ছিলাম ওর তবলা বাদক...গামলা,জগ,গ্লাস,...এইসব ছিল আমার ইন্সত্রুমেন্ট।আমাদের এই প্রতিভা কে আমাদের আর এক মামা সাব্বির এক কথায় শেষ করে দেয়...আর কোন্ দিন বাজনার সাথে গান হয়নাই।বেপারটা আসলে সেরকম না...আমাদের ই আর গাওয়া হয়নি।

খুব সাধারন এক্ মানুষ সেতু...কখনও অতিরিক্ত কিছু করতো না।খুব সাধারন ভাবেই চলাফেরা ওর।কখন্ও খাবার ব্যপারে খুব আগ্রহ দেখিনাই...শুকনা মরিচ পুরায় দিলে আর কিছু লাগেনা ওর।আমি মাঝেমাঝে ইয়ারকি করে বলতাম তুই আসলে ভাত খেতে বসিস সিগারেট খাবার জন্নে।ঝটপট ভাত খাবার পরে আয়শে এক্তা চিগারেট ধরান ওর একটা অদ্ভুত খেয়াল।আর বিকেলে ঘুম তার লাগবেই...সারা ঘর অন্ধকার করে ঘুমাতাম আমি আর সেতু।বন্ধু এইটা এখনও বাদ দিতে পারিনাই।


পড়ালেখাতেও সেতু খুব ভাল ছাত্র।এক্সাম এলে সেতুকে আর বাইরে বের করা যেত না।ও আর আমি এক সাথে পড়াশুনাও করছি অনেকদিন।আমাকে খুশি করার জন্নে কিনা জানিনা...ও বলত আমার সাথে পড়লে নাকি ওর খুব মনে থাকে।খুব দারুন ছবি আকায় সেতু।ক্লাসে মাঝেমাঝে ও কারটুন আকায় আমাদের মজা দিত খুব।একদিন একটা টাকলু কারটুন আকায় বলে এইডা আমার বাপ।ওর পরিবারটাও খুব মজার।চাচি,চাচা,মৌরি,শিপা ভাই,ভাবি ,রিদি...সবাই খুব ফ্যমিলিয়ার।ঢাকা থাকলেও অনেকদিন পরপর দেখা হত ওর সাথে।প্রায় ফোন দিয়ে বলত..."ভাল লাগতিছেনা...চইল্লা আয় মাম্মা..."।বাইরে যাবার আগে একটু হতাশ্ও হয়ে পড়েছিল যাবার বেপারটা নিয়ে।


আনদলনের পরে আমি আর সেতু একদিন কুষ্টিয়া গেছিলাম ট্রাকে চড়ে...সারাপথ সেতুর গান আর আমার মাছের হাড়ি বাজিয়ে তাল দেওয়া।এতমজা আর কোনদিন ও কি আসবে?হয়ত সেতু ছিল তাই এত মজা হয়েছিল।ওর ৪১৮ নাম্বার রুমে আমি,নভেল,সাব্বির অনেক পিকনিক করেছি।


সেতুর ভাব ছিল এমন যে ও খুব শক্ত কিন্তু ও সব চাইতে নরম্ মনের একজন। আমার বন্ধু বরেষু প্রেম হয়ে গেল আমার বিয়ানের সাথে ।মিরাকল বেপারটা...লোপা ছিল চিটাগং আর সেতু খুলনা।বিধাতা মিলাবে তাই প্রেম সম্ভব।অসাধারন এই প্রেমের সমাপ্তি হয় বিয়ের ভিতর দিয়ে।


আমি আর সেতু মাঝেমাঝে আজেবাজে খেতাম আর কি...আর খেলেই সেতুর কি কান্না...এটাই ছিল সব চাইতে হাসির বেপার।একবার আমি,সেতু,লিটূ,সুমন...আর্ও কয় একজন এর কি অবস্থা ...মজার সেই দিন গুলি আর ফিরে আসবে না।


এরপর এসেছিল সেই ভয়াবহ দিন।জিবনটাকে কিছুদিনের জন্নে এলোমেলো করে দিয়াছিল।সারারাত জেগে থাকতাম আমরা।এরি মাঝে আমি করতে চাইলাম সুইসাইড।সেদিন কারও কাছেই খুব বেশি টাকা ছিল না তাই সেতু তার গলার লকেট খুলে দোকানদার কে দিয়ে বলেছিল ওষুধ দিতে...আসলে অনেকেই সেদিন আমার জন্নে অনেক করেছে এটা সেতুর গল্প তাই তারটা বলা।আমার খুব কঠিন সময়ে সেতু বলেছিল চিন্তা করিস না প্রয়োজনে একলগে ভাত শেয়ার করে খামু...আর...(টাকা পয়সার কথা থাক...)।


বন্ধুর বিয়ে হয়ে গেল তরিঘরি করে।ওর বিয়েতে থাকার ইছছেটা আল্লাহ জানত তাই খুব কাছে থেকেই বিয়েটা দেখতে পেরেছি।খুব সুন্দর ও লাগতেছিল ওকে।আর ওর হাসি হল সব চাইতে সুন্দর হাসি।


সেতু চলে গেল জারমানিতে...সেদিন টা আমি কোন দিন ই ভুলব না।আমরা কোন কথা বলতে পারিনাই বিদায় মুহুরতে।শেষ যে দুজনকে দুজনা বুকে জড়ায় ধরে রেখেছিলাম ওটা ছিল আমার জিবনের সব চাইতে কঠিন একটা সময়। বন্ধু সেদিন বাসে কুষ্টিয়া ফিরতে ফিরতে অনেক কেঁদেছি।আজকে সেতু অনেক দুরের দেশে আছে।অনেক ব্যস্ত সেতু তার পড়ালেখা আর জব নিয়ে।


এই হল আমাদের সেতু আর বিশেষ ভাবে আমার বন্ধু বরেষু সেতু।যাকে কিছু কথার মাঝ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব না।বন্ধু ভাল থাক।তোর জন্নে আমার ভালবাসা থাকবে সবসময়।

ফিরে আসব আমার আর কোন এক বন্ধুর কথা নিয়ে......(চলবে)

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×