এক দিন শাশুড়ি আমার কাছে এসে করুণ স্বরে বললেন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে।আমি কিছুক্ষণ তাঁর দিকে
তাকিয়ে থেকে বললাম,‘আচ্ছা মা, দিচ্ছি।’
নিজের মোবাইল নম্বর ইউজ করে একটা জি-মেইল খুললাম। তারপর ফেসবুকে
ফার্স্ট নেইম দিতে যাব—এমন সময় উনি বললেন, ‘নাম কী দিচ্ছিস?’
—কেন মা? আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নামই তো দিচ্ছি। মিলি সামন্ত!
: না না! এই নাম দিস না।
চোখ কপালে তুলে বললাম,
‘তো কি নাম দেব?’
: সুন্দর দেখে নাম দে। যেন নাম দেখেই সবাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেয়।
আমি অঙ্কে কাঁচা। তবু ক্যালকুলেশনে নেমে
গেলাম। কেমন নাম দিলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট
আসতে পারে? বহু কষ্টে ঠিক হলো, ‘প্রিন্সেস মিলি’! প্রিন্সেসটা শাশুড়ির অনুরোধে অ্যাড করতে হলো।
এবার বিবাদ বাধল বয়স নিয়ে। তিনি তাঁর
অরিজিনাল বয়স কোনোভাবেই দেবেন
না। ১৯৬২ সালে জন্ম; কিন্তু এত বয়স জানলে কেউ পোস্টে ভালো কমেন্ট করবে না। আমি অসহায় ভঙ্গিতে বললাম,
‘এমন কিছু না, মা। এত কিছু
কেউ দেখেই না!’
: তোকে কে বলেছে?
পাশের বাড়ির বৌদির ৫০-এর কাছাকাছি বয়স।উনার ফেসবুকের বয়স ২৭।
আমাকে দেখিয়েছে সবাই তাঁর পোস্টে সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করে।
বিউটিফুল, নাইস এসব লিখে। তুই বয়স কমিয়ে দে।ঢোক গিলে জিজ্ঞেস
করলাম, ‘কত বয়স দেব?’
: ২৬ দে।
আমার চোয়াল ঝুলে পড়ল। নিজের বয়সই তো ২৮! তবু বাধ্য হয়ে শাশুড়ির বয়স
২৬ দিতে হলো। বয়স মাথায় রেখে স্কুল, কলেজ ইত্যাদি অ্যাবাউটে দেওয়া হলো। ওয়ার্কে দেওয়া হলো, ‘পাপ্পাস প্রিন্সেস!’
এবার প্রোফাইল পিকচারের পালা। মনে
মনে চিন্তা করছি, অন্য কোনো মেয়ের ছবিই অ্যাড করতে বলে নাকি!
নাকের ওপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে আমার।
শাশুড়িকে দেখেও কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে।
: ছবি সুন্দর না হলে তো লাইক পড়বে না। তাই না বউমা?
উদাস কণ্ঠে বললাম, ‘হুঁ মা।’
গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন শাশুড়ি হঠাত্ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘বউমা,
ইউক্যাম মেকআপ, নাকি কী জানি আছে একটা।ওটা মোবাইলে নামিয়ে
দাও।’আমার মাথা চড়কির মতো
ঘুরছে। কাঁপা হাতে প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটা
নামিয়ে দিলাম। শাশুড়ি খুশিমনে এবার মোবাইল হাতে তাঁর ঘরে চলে গেলেন। আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।রাতে মোবাইল ঘাঁটছি।বরও মোবাইল ঘাঁটছেন।
হঠাত্ চোখ দুটি গোল আলু বানিয়ে আমাকে
জিজ্ঞেস করল, ‘এই রমা!
মাকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে কে?’
এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসলাম, ‘কেন কী হয়েছে?’
ও ফোন এগিয়ে দিল আমার দিকে। দেখলাম শাশুড়ি তাঁর ছেলেকে রিকোয়েস্ট
পাঠিয়েছেন।
তাড়াতাড়ি রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করলাম।ডিপিতে ভালোমতো চোখ পড়তেই চক্ষু চড়কগাছ! চোখে আই লাইনার, ঠোঁটে
লিপস্টিক দেওয়া এক যুবতির ছবি। তাতে ২০০+ লাইক। ৬০+ কমেন্ট। এর
মধ্যে একটা কমেন্ট এমন, ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, এ কি মোর অপরাধ?’
শাশুড়ির রিপ্লাই, ‘খুঁজে পাবে নাকো মোর মতো সুন্দরী, ভেঙে ফেলো দৃষ্টির বাঁধ।’