somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী কি তৈরি হয়েছে মানুষের জন্য নাকি পৃথিবী তৈরী হয়েছে বলেই তাতে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে?

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা যখন সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে ঢেউ দেখতে পাই, তখন এক একটি ঢেউ আছড়ে পড়ে সমুদ্রের তীরে। প্রতিটি ঢেউয়ের সাথে চলে আসে অগণিত ফেনা। সেই ফেনার মধ্যে রয়েছে ছোট-বড় বুদবুদ। এক একটি বুদবুদ উঠতে থাকে এবং অল্প সময়ের মধ্যে তীরে গিয়ে পড়ে। সমুদ্রের বিশালতার মাঝে, একটি বুদবুদ খুবই ক্ষুদ্র। এর তুলনা মহাকাশের সাথে করলে, আমরা দেখতে পাই পৃথিবীও তেমনই একটি ক্ষুদ্র ফেনার বুদবুদের মতো, যা মহাকাশের অগণিত নক্ষত্রের মাঝে অস্তিত্ব ধারণ করছে।

মহাকাশের তুলনায়, পৃথিবী একেবারে কিছুই না। আমাদের এই পৃথিবী, এর সমস্ত মাপ, আকার, প্রকার – সবই ক্ষুদ্র এবং সীমিত। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরে, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে জীবনকে ধারণ করছে, অথচ মহাকাশের সামনে পৃথিবী খুবই তুচ্ছ। পৃথিবী সম্পর্কে চিন্তা করলে, আমরা বুঝতে পারি যে এটি সত্যিই একটি ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্ব, যা মুহূর্তের জন্য সৃষ্টি হয়েছে এবং একসময় শেষ হবে।

এমন একটি ক্ষুদ্র পৃথিবী, যেখানে আমরা বাস করি, সেখানে আমাদের অস্তিত্বের কোন কারণ বা উদ্দেশ্য কী? কেন আমরা এখানে? কেন আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন?

এ প্রশ্নের উত্তর আমরা ইসলামী দর্শনে পাই। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। মানুষের জীবন একটি পরীক্ষার মতো, যেখানে আমরা নিজেদের ভালো-মন্দ, সৎ-অসৎ, ইবাদত-অসাধুতা যাচাই করি। পৃথিবীর এই ক্ষুদ্র জায়গায় আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পথে চলা এবং তার ইবাদত করা।

**পৃথিবী, মহাবিশ্ব এবং মানুষ:**

মহাবিশ্বে প্রতিটি গ্রহ, তারকা, নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সির মধ্যে পৃথিবী যেন একটি খুব ছোট বিন্দু। এক একটি গ্রহ এবং নক্ষত্র কেবলমাত্র এক পিক্সেল বা একটি নূন্যতম বিন্দু, যা মহাকাশের বিশালতায় অদৃশ্য হয়ে যায়। পৃথিবীর আয়তন এবং অবস্থান মহাবিশ্বের তুলনায় একেবারে কিছুই না। একে যখন মহাকাশের সাথে তুলনা করা হয়, তখন তা একেবারে ক্ষুদ্র, নিরর্থক মনে হতে পারে। কিন্তু এর মাঝেই রয়েছে আমাদের জীবন। আমাদের অস্তিত্ব।

**মানুষের উদ্দেশ্য:**

মহাকাশের বিরাটত্বের সাথে পৃথিবীর তুলনা করতে গেলে, আমরা বুঝতে পারি যে পৃথিবী এবং আমাদের জীবন কোন অর্থহীন ব্যাপার নয়। আল্লাহ মানুষকে তার ইবাদত করার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মানুষ, তার ইচ্ছা এবং চেষ্টা দিয়ে পৃথিবীকে সুন্দর এবং সুষ্ঠু করতে পারে। এটাই আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য। একদিকে পৃথিবী তুচ্ছ, কিন্তু অন্যদিকে এটি একটি সুযোগ, যা মানুষের জন্য আল্লাহর ইবাদত ও পরীক্ষা করার জায়গা। আমাদের জীবন কত ছোট এবং ক্ষুদ্র তা জানার পরও, এটি আমাদের জন্য অমূল্য।

এ কথা মনে রাখতে হবে যে, মহাবিশ্বের বিশালতায় পৃথিবী সত্যিই এক ক্ষুদ্র বিন্দু, কিন্তু এই ক্ষুদ্র পৃথিবী এবং এতে বাস করা মানুষ আল্লাহর জন্য বিশেষ মূল্যবান। মানুষ তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করে। ইবাদত ও সৎ কাজের মাধ্যমে আমরা নিজের জীবনকে সার্থক করতে পারি।

**বুদবুদ ও মহাবিশ্বের সম্পর্ক:**

যেমন সমুদ্রের এক বুদবুদ, তার সৃষ্টি হওয়ার কোনো বড় কারণ বা উদ্দেশ্য নেই, তেমনি পৃথিবীও মহাকাশের তুলনায় কিছুই নয়। কিন্তু বুদবুদটির সৃষ্টি তার নিজস্ব প্রকৃতিতে; মহাকাশের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর অস্তিত্বও আল্লাহর ইচ্ছায়। মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছে তার ইবাদত, জীবন পরীক্ষা, এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে। পৃথিবী, মহাবিশ্বের সামনে তুচ্ছ মনে হলেও, আমাদের জন্য এটি অমূল্য এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ।

এটাই আমাদের জীবনের মূল তাত্পর্য, যে আমরা যেন এই পৃথিবীতে আল্লাহর রসূলের পথে চলতে পারি, তার বিধি-বিধান মেনে চলতে পারি এবং পৃথিবীর ক্ষুদ্রতা ও মহাবিশ্বের বিশালতার মাঝে নিজেদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সঠিকভাবে পালন করতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×