সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছিল। সেটা কি বিশেষ কোনো কারণে? কিংবা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে? খবরটা পাওয়ার পর প্রথমে এমনই মনে হয়েছিল আমার কাছে। আমাদের স্বজন আর জনমনের গভীরে স্থান করে নেওয়া কবি মুমিনুল মউজদীন আর নেই। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি স্বপরিবারে (স্ত্রী ও একপুত্র) নিহত হয়েছেন। এমন হৃদয় বিদারক ‘মৃত্যু’ শব্দটি মেনে নিতে বেশ কিছুণ সময় নিতে হয়েছে। মউজদীন ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদটি জীবনে আর কোনোদিন মানিয়ে নিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। কি লিখবো ভেবে পাচ্ছি না। আমি স্তব্ধ, হতবাক। আমার কন্ঠ আস্তে আস্তে রোধ হয়ে আসছে। মউজদীন ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ নিয়ে এভাবে লিখতে হবে সেটা কি আমার কল্পনায় ছিল।
খবরটা প্রথমে শুনতে পেরে কয়েকজন মিনিট দশেকের জন্য একেবারে নীরব হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল মৃত্যুপুরীতে আছি। কিংবা এর বেশি কিছু বললেও অতিরিক্ত হবে না। নীরবে পানি সামলানো চেষ্টা করছি। কিন্তু পারলাম না। ছোট বাচ্চাদের মত কেঁদে ফেললাম অঝোর ধারায়। সিলেট জুড়ে এখনো সুনশান নীরবতা। সুনামগঞ্জে অসম্ভব জনপ্রিয় মানুষটির মৃত্যু সংবাদ মাইকে প্রচার করা হচ্ছিল কেঁদে কেঁদে। অনেকটা অসহায় হয়ে পড়লো সুনামগঞ্জবাসী। শেষ পর্যন্ত মাথার ছায়াটুকুও হারিয়ে ফেললেন সুনামগঞ্জবাসী। সুখে-দুৎখে যিনি ছিলেন সকলের সঙ্গী, শত্রু-মিত্র সবাই যার কাছে সমান সেই মুমিনুল মউজদীন আর নেই। এ বিশ্বাস করবে এই কথা !
এই লেখাটা লিখতে গিয়ে আমার বারবার মনে পড়ছে মুমিনুল মউজদীনের লেখা বিখ্যাত সে-ই কবিতা, এ শহর ছেড়ে আমি পালাবো কোথায়। নিজের শহরকে ছেড়ে পালাতে না চাইলেও শেষপর্যন্ত সবাইকে কাঁদিয়ে পালিয়ে গেলেন মুমিনুল মউজদীন।