somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কথা : নভেম্বরের পাঁচ দরজা

১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নভেম্বর মাসটা আমার জন্য অন্যরকম। খুবই অন্যরকম। কেন—সেটা বলার আগে ছোট্ট একটা ঘটনা বলি।

তারিখটা ৩ নভেম্বর, ২০২৫।
প্রকাশক থেকে সেদিন ফোন এল—
“আপনার বই আমাদের হাতে এসেছে। একটু সময় হলে সৌজন্য কপিগুলো নিয়ে যান।”

আমি তখন অকারণে খুব ব্যস্ত থাকার ভান করে বললাম—
“আসবো… তবে ৫, ১০, ১৩ বা ১৭ নভেম্বরের একদিন।” আরও বললাম—
“ইচ্ছে আছে ১৩ বা ১৭ তারিখেই নিব।”

প্রকাশক হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন—
“তারিখগুলো এমন সাজানো কেন?”
আমি হেসে বললাম—
“এমনি… মনে হল।”

কথাটা আসলে সত্যি নয়। এসব তারিখের পেছনে কারণ আছে। এক এক করে বলি—

৫ নভেম্বর—আমার আব্বার জন্মদিন।
আমরা কোনোদিন সেটা পালন করিনি। আমার মনে হয়, আম্মাই হয়তো মনে মনে আব্বাকে উইশ করতেন। ঘরের ভেতরে, নরম গলায়।
---------------------------------------------------------------------------------------

১০ নভেম্বর—আব্বার মৃত্যুদিন।

এই একই দিন নূর হোসেনও শহীদ হয়েছিলেন।

নূর হোসেনকে আমি ছোটবেলা থেকেই অদ্ভুতভাবে ভালোবাসতাম। বুকের ওপর, হাতে–পায়ে কলম দিয়ে লিখতাম — “গণতন্ত্র মুক্তি পাক”–জাতীয় কিছু। বড়রা বকা দিতেন। তবু লিখতাম।

এরশাদ পতন আন্দোলনের সময় আমার আব্বা আমাকে নিয়ে রাস্তায় যেতেন। খুব ছোট ছিলাম, তেমন কিছু বুঝতাম না, তবু মিছিল করতাম। যখন ক্লান্ত হয়ে যেতাম, আব্বা কোলে তুলে নিতেন। আব্বার কথা আর লিখব না… লিখলেই চোখে পানি এসে যায়। পরে লিখব।

সেই সময়কার বাংলাদেশ আর্মি নিয়ে একটা মজার স্মৃতি আছে, বলতে ইচ্ছে হচ্ছে—

আমরা এলাকার ছেলেরা রাস্তায় খেলা–ধুলা করতাম। তখন আর্মি দেখলেই কেমন যেন খেপানোর চেষ্টা করতাম। যখনই আর্মিরা আমাদের ধাওয়া দিত, আমরা দূরের একটা স্কুলের দেয়াল টপকে লুকিয়ে থাকতাম। একটু পর আবার বের হয়ে হাসাহাসি করতাম। বলতাম—‘ওওরা আমাদের ধরতেই পারে না!’ আরও অনেক কথা ……..

সেই বয়সে সত্যিই তাই মনে হতো। এখন বুঝি—ওরা চাইলে দু’মিনিটেই ধরে ফেলতে পারত। কিন্তু ধরে নি। কেন ধরেনি? কারণ তারা রাগী মানুষ নয়—হৃদয়বান মানুষ ছিলেন। শুধু একটু ভয় দেখাতে চাইতেন।

আমি এখনো বিশ্বাস করতে চাই—সেই দিনের হৃদয়বান আর্মিরা এখনও এই দেশে আছে।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

আজ বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হবে। সেই দিন আমি এলিফ্যান্ট রোডে এক বন্ধুর বাসায়। অ্যাপার্টমেন্টের ওপরের তলায় থাকতেন একজন লেখক—যিনি আমাকে বই পড়তে শিখিয়েছেন।

নাম তাঁর—হুমায়ূন আহমেদ।

সেদিন তিনি নিজে সবার বাসায় গিয়ে বলছিলেন—
“আজকের দিন গাড়িগুলো একটু অন্যখানে রাখেন।”

তিনি যখন আমার বন্ধুর বাসায় এলেন, আমি প্রথমবার তাঁকে দেখলাম। আর সেই দেখাটাই শেষ দেখা। কিন্তু বইয়ে তাঁকে এখনো দেখি। কিছু কিছু বই বার বার পড়তে ইচ্ছে করে। তিনি আমার প্রিয় লেখকদের একজন।

আর তাঁর জন্মদিন—১৩ নভেম্বর।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

এবার আসি আমার আরেক অনুভবের জায়গায়—

আমার আব্বার প্রিয় নেতা মওলানা ভাসানী। আমার নানারও তাই। আমি যতটুকু জানি, নানা সরাসরি তাঁর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আম্মা আর খালারা খুব বেশি জানেন না—শুধু শুনেছেন। উনিও আমার বাবার আর নানার মতোই—আমার প্রিয় নেতা।

তাঁর মৃত্যুদিন—১৭ নভেম্বর।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

এই নভেম্বরের তারিখ গুলোর ভেতর একটা তারিখ আছে—যেটা আমারও জন্মদিন। হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি এসে… একটা সংখ্যাকে আমি হয়তো পার করে দিয়েছি, কিংবা করতে যাচ্ছি।

আব্বার জন্মদিনের দিনই আমি অফিসিয়ালি আমার বই হাতে পেয়েছি। নিজ হাতে বই তুলেই মনে হলো— আমরা আসলে মৃত্যু নয়, স্মৃতি নিয়ে বাঁচি।

বইটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
এখন রকমারি ছাড়াও আরও অনেক অনলাইন বুকশপে পাওয়া যাচ্ছে। রকমারির লিংকটি নিচে দিচ্ছি।

যাদের জীবনে প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণা আছে— এই বই হয়তো তাদের পাশে বসে গল্প বলতে পারবে, এক বন্ধুর মতো।

যদিও এটি আমার প্রথম লেখা— আমার বিশ্বাস,

বইটি আপনাদের নিরাশ করবে না।

কয়েকটা পাতা পড়ুন… মনে ধরলে রাখবেন। না ধরলে হেসে ফেলবেন—সেটাই পাঠকের অধিকার।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×