somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভালো আছি। ইদানীং একটু ভয় পাচ্ছি। তবে কালকে রাতের কিছু ঘটনায় ভয়টা আরও বেড়ে গেছে। ভয় থেকেই আপনাকে একটা ছোট চিঠি লিখলাম। এই চিঠিটা পারতাম আপনার ফেসবুকে দিতে, দিইনি—কারণ “ভারতীয় দালাল” শুনতে ভালো লাগে না।

দাদা, তাহলে শুরু করি—কেন এই চিঠিটা লিখলাম।

অনেক আগে আপনার একটি ফেসবুক পোস্টে আমি একটি মন্তব্য করেছিলাম। হুবহু কমেন্টটি এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না, তাই সংক্ষেপে আবার বলছি—ভাবটা ঠিক এমনই ছিল।
“ আমি নিয়মিত আপনার ভিডিও দেখি। আপনার বিশ্লেষণ ও যুক্তিভিত্তিক আলোচনা আমার ভালো লাগে। কিন্তু একদিন একটি ভিডিওতে আপনি বলেছিলেন— “মজলুমের পাশে দাঁড়াতে হবে”—এই কথাটা আপনি ঢাকায় ব্যাটারি রিকশাওয়ালাদের প্রসঙ্গে বলেছেন।
দাদা, আপনার তো অনেক ছোট ভাই–বোন আছেন। এই কথাটা বলার আগে কি আপনি ব্যাটারি রিকশা নিয়ে ওদের কাছ থেকে বাস্তব কোনো তথ্য নিয়েছিলেন? আমার ধারণা, আপনি কোনো খোঁজ না নিয়েই একপেশে ওদের সাপোর্ট করে কথাটা বলে চলে গেছেন।
আমার ধারণা, রিকশা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি নেই—আপত্তিটা ছিল ব্যাটারি রিকশা নিয়ে। দাদা, আপনার কথা অনেক মানুষ শোনে এবং গুরুত্ব দেয়। আপনি যদি ছোট করে একটা ভিডিও করে দেন এই ব্যাটারি রিকশা নিয়ে, তাহলে আমার ধারণা অনেকেই সেটা শুনবে। ব্যাটারি রিকশা যারা করে ফেলেছে, তাদের তো আর কিছু করার নেই—শুধু মাত্র এটুকু বলে দিন, আর কেউ যেন ব্যাটারি রিকশা না কিনে, এবং যারা কিনে ফেলেছে তারা যেন বেপরোয়া ভাবে না চালায়। আশা করি আমার এই অনুরোধটুকু রাখবেন। আমার ধারণা এই অনুরোধ শুধু আমার একার না—অনেকেরই এই অনুরোধ। ভালো থাকবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। “


এই কমেন্টের বিপরীতে আমাকে যা শুনতে হয়েছে, তা নিচে দিলাম। তার আগে কিছু বলার ছিল—
গতকাল রাতে তিনটি জায়গায় আক্রমণ হয়েছে—এর মধ্যে প্রথম আলো, The Daily Star ও ছায়ানট । ছায়ানট ভবনে আক্রমণ হয় রাত দেড়টার দিকে, এবং সেখানে ভাঙচুর ও লুটপাটও হয়েছে। আসলে সব ভবন থেকেই আপনার ভাই–ব্রাদারেরা আক্রমণের পাশাপাশি লুটপাটও করেছে। ওইখানে আপনার ভাই–ব্রাদারেরা ছিল না—এই কথা বলার কোনো অবকাশ নেই। কারণ আপনার অসংখ্য ভিডিওতেই প্রমাণ আছে, যেখানে আপনি ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের ওপর সরাসরি আক্রমণ করে কথা বলেছেন।

আপনি জানেন—শুক্র ও শনিবার ছায়ানট এ শিশুদের গান শেখানোর ক্লাস হয়। যদি ঘটনাটি সকালে হতো, আর কোনো বাচ্চার ক্ষতি হতো—তার দায় কে নিতো? রাষ্ট্র?
উসকানি দেবেন আপনি, আর দায় ভার নেবে রাষ্ট্র—ব্যাপারটা কেমন না?

The Daily Star এ আক্রমণের সময় আপনি লাইভে এসে বলছিলেন—ভেতরে অনেক সাংবাদিক আটকা পড়েছে, তাদের উদ্ধারের জন্য আর্মিকে ফোন দেওয়ার অনুরোধ করছেন। কিন্তু আপনি তো নিজেই বলতে থাকেন—“এই আমাকে ফোন দেয়, ওই আমাকে ফোন দেয়।” তাহলে আপনি নিজে সরাসরি ফোন দিতে পারতেন না? কিংবা আপনার পরিচিত কারও মাধ্যমে কল করাতে পারতেন। নাকি ওই লাইভ করে বুঝাচ্ছিলেন—আপনি এই ব্যাপারটা সাপোর্ট করেন না?

যেসব সাংবাদিক ওই পত্রিকাগুলোতে কাজ করেন, তাদেরও পরিবার আছে—স্ত্রী, সন্তান, বাবা–মা। এই বিষয়গুলো না ভেবেই যখন প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া হয় , অথচ আপনার ভিডিওর রেফারেন্সের বড় একটা অংশ আসে এই দুই পত্রিকা থেকেই।

আপনার মতো কিছু অনলাইন এক্টিভিস্ট মনে করে, আপনাদের কথায়ই সবাই জুলাই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছে। আমি জানি না সবাই আপনাদের কথা শুনে রাস্তায় নেমে ছিল কিনা। কোনো রাজনৈতিক কারণে না—আমি নেমেছিলাম একজন বাবা হিসেবে। কারণ আমার সন্তানদের ওপর গুলি চলছিল। তাদের নিরাপত্তার জন্য আমি রাস্তায় ছিলাম। কতটুকু পেরেছি সেটা বড় কথা না—বড় কথা হলো, আমি দাঁড়িয়েছিলাম।

আমার ধারণা, অনেক মানুষই এই কারণেই নেমেছিল।

ছায়ানটের ওপর আক্রমণ শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ না—এটা আমার সন্তানের মতো অসংখ্য বাবা–মায়ের সন্তানের ওপর আঘাত। একইভাবে প্রতিদিন ব্যাটারি রিকশার কারণে কত মানুষ দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছে, কত পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে—এর হিসাব কেউ রাখে না। এই বেপরোয়া পরিস্থিতির পেছনে যারা একতরফা উসকানি দেয়, তার দায় আপনাকে নিতে হবে।

আপনার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে—এটা শুনে আমাদের মনও কেঁদেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এইভাবে মব তৈরি করে সাধারণ মানুষের জান–মাল ধ্বংস হলে আপনার মন কি কাঁদে না? সব কিছুকে যদি একটাই চশমা দিয়ে দেখা হয়, তাহলে সমাজ আরও বিপজ্জনক জায়গায় যাবে।

আমি মন থেকে একটা দোয়া করি—আপনি যেন কখনো নিজের চোখে এই ব্যাটারি রিকশার বেপরোয়া ব্যবহারের ভয়াবহ পরিণতি দেখতে বাধ্য না হন। আপনার মতো আমি কোনো বিশেষ ব্যক্তি নই—আমার কথায় হাজার মানুষ রাস্তায় নামে না। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমার হাতে ক্ষমতা নেই, প্রভাব নেই—শুধু প্রশ্ন করার অধিকার আছে, আর প্রতিবাদ করার নৈতিক দায় আছে। তার বাইরে আমার আর কিছুই করার নেই।

সবশেষে একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই—
আমি ভারতীয় দালাল না। আপনার পোস্টে মন্তব্য করার পর আপনার কিছু অনুসারী আমাকে এই অপবাদ দিয়েছিল। আপনি একসময় ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমি সেই বয়কট মেনে চলছি।
আপনিও কি এখনো তা মেনে চলছেন?
আপনার অনুসারীরাও কি মেনে চলছে?
এই প্রশ্নটা করা কি অন্যায়?

লুটপাট আর চাঁদাবাজির মধ্যে পার্থক্য কী—এই প্রশ্নটার উত্তর জানার খুব আগ্রহ আছে আপনার কাছ থেকে। রাজনৈতিক কিছু দল করছে চাঁদাবাজি। আর আপনি করছেন লুটপাট।

আমি এই কথাগুলো লিখেছি কোনো বিদ্বেষ থেকে না—লিখেছি একজন সাধারণ নাগরিক, একজন বাবা, এবং একজন সচেতন মানুষ হিসেবে।
আপনি নিশ্চয়ই বুঝবেন।
শুভকামনা রইল আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×