somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

০২ রা আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ২০০৭ এর মাঝামাঝি। এইচ এস সি পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। কিন্তু জীবনের আসল পরীক্ষা তখনো বাকি। অন্যান্যদের মত আমারো ছুটি নাই। কোচিং এর জন্য রওনা দিলাম আজব শহর ঢাকার অভিমুখে। শেল্টার নিলাম মনিপুরী পাড়ার ১নং গেটে মিলেনিয়াম ছাত্রাবাসের ৫০১ নম্বর রুমে। সঙ্গী অনেকদিনের চেনাজানা কলেজ ফ্রেন্ড এবং মেসমেট সোহেল। আজাইরা এক পাবলিক। তিন জনের রুমে আমাদের সাথে যোগ দিলো শরিফ নামের এক অপরিচিত ছেলে। ওর বাড়ী ছিল ময়মনসিংহ। চরম হাসিখুশি আর ইনোভেটিভ আইডিয়াতে মাথা ভরা। পড়াশোনা বা কোচিং এ আমাদের দু'জনের মত ওরও তেমন মনোযোগ নাই। একই গোয়ালের গরু হওয়াই অল্পদিনেই ও আমাদের খুব ক্লোজ হয়ে গেলো। সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরে-ফিরে, সন্ধ্যায় জিয়া উদ্যানে আড্ডা দিয়ে, আর গভীর রাত পর্যন্ত ২৯ নাইন খেলে সময়গুলো ভালোই কেটে যাচ্ছিল।

দিন আসে দিন যায়। আমাদের সোনার সময় গুলোও কেটে যায় একে একে। তার পর আসলো রমজান। ততদিনে আমরা গৎবাধা রুটিনে হাঁপিয়ে উঠেছি। চলার পথে নতুনত্ব দরকার। আমরা আমাদের দৈনন্দিন রুটিন পাল্টানোর প্লান করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম এই রমজানে দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানাবো। যেই ভাবনা সেই কাজ। আমাদের দিন শুরু হত ইফতারের ১৫ মিনিট আগে। ঘুম থেকে উঠে এক বয়কে দিয়ে ইফতার আনাতাম। এই ফাকে আমরা ব্রাশ করে একটু ফ্রেশ হয়ে নিতাম। তারপর পেট ভরে ইফতার। অত:পর গোসল দিয়ে গন্তব্য চন্দ্রিমা উদ্যান আর সংসদ ভবনের আশপাশ। ওখানে হালিম ফুচকা খেয়ে আর আড্ডা দিয়ে রাত দশটার দিকে রুমে ফিরতাম। তারপর রাতের খাবর খেয়ে বসে পড়তাম তাস নিয়ে। চলত সেহরী পর্যন্ত। তারপর সেহরী খেয়ে ঘুম সেই ইফতারের ১৫ মিনিট আগ পর্যন্ত। এইভাবেই চলছিল দিনগুলি।

কিন্তু আমাদের মত পুংটাদের কাছে এই রুটিনও আর বেশীদিন স্যুট করল না। চিন্তা করলাম নতুন কিছু করার। শরিফ প্রস্তাব করল একটা সংগঠন বানানোর। যে সংগঠনের কাজ হবে প্রতিদিন ১৫০ জন লোককে সেহরীর জন্য ডাকা। সংগঠনের জন্য নামও ঠিক করলাম। যুগান্তকারী নাম "মোবাইল কাফেলা"। আমাদের মিশন শুরু হত রাত আড়াইটা থেকে আর চলত রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। কাজ বেশী কঠিন না। আমাদের মোবাইল নম্বরের শেষ ডিজিটটা পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করে একে একে ৫০ টি নম্বরে ফোন করতাম। ডায়লগ একটাই। একেবারে মুখস্থ "ভাইয়া আমি মোবাইল কাফেলা থেকে বলছি, সেহরীর সময় হয়েছে। সেহরী খেয়ে নিন।" ডিজুসে তখন ছিল ২০ সেকেন্ড পালস্ আর ২৫ পয়সা পার মিনিট। আমরা প্রতিজনের পিছে মাত্র ২০ সেকেন্ডই ব্যয় করতাম। ফলে ২৫ পয়সায়ই করা যেত তিনটা কল। শুধুমাত্র ঐ কথাটুকু বলেই কেটে দিতাম। এই আজব সংগঠনের নাম শুনে অনেই কলব্যাক করত। জানতে চাইতো কি এটা। উত্তরও ছিল গৎবাধা। নরমালি ভাই, আর ভারিক্কি গলার কেউ হলে আংকেল সম্বোধন করতাম। বলতাম, অনেকেই রমজানে সময়মত উঠতে পারেনা। সেহরী খেতে পারেনা। তাই আমরা কয়েক যুবক মিলে একটা সংগঠন খুলেছি আপনাদের সেবায়। যাতে অন্তত কিছু লোকের উপকার করতে পারি। বেশীরভাগ পাবলিকই বাহবা দিত। বলত দারুন কাজ। এভাবে অনেকদিন চালিয়েছি। কয়েকজন আংকেল আমাদের ফ্যান হয়ে গিয়েছিল। তাদেরকে প্রায় প্রতিদিন ডাকতাম। কোনদিন মিস হলে ফোন দিয়ে বলত কি ব্যাপার বাবারা? তোমরা কি আজ তোমাদের কাজ শুরু করোনি?


অনেকদিন পর আজ আবার মোবাইল কাফেলা করতে ইচ্ছা করছে। আননোন নম্বর থেকে ফোন দিয়ে শরিফ আর সোহেলকে চমকে দেব ভাবছি। ;)


বি:দ্র: সংগঠনটা নিরহ টাইপ মনে হলেও এর একটা উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল। সেই উদ্দেশ্যটা কি হতে পারে সেটা পাঠকদের জন্য ধাধা। ;)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:২৩
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×