somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিয়াং মাই, থাটন লং নেক ভিলেজ ভ্রমন ২০০৬

০২ রা জুন, ২০১২ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পোস্টের লিংকঃ ব্যাংকক, পাতায়া ভ্রমন ২০০৬

চিয়াং মাই যাবার ট্রেনটিতে মাত্র দু’টো বগি ছিল। খুব মজা লাগল। রাতে ট্রেনে খাবার দিল। রান্না বেশ সুস্বাদু, আর স্টিকার মারা আছে “"Halal certification by Central Muslim Authority of Thailand"” ! বেশ স্বস্তিদায়ক একটা ব্যাপার।

চিয়াং মাই থাইল্যান্ডের উত্তর পশ্চিম দিকের শহর, ব্যাংকক থেকে ৭০০ কিমি দূরে। সকালে চিয়াং মাই পৌছে হোটেলে চলে গেলাম, নতুন হোটেল, রুম এর অবস্থা বেশ ভাল। নাশতা করে দুই সহকর্মী বেরিয়ে পড়লাম নিজেরাই একটু শহর ঘুরে দেখব বলে। হেটে বেড়ালাম অলিতে গলিতে।

রাতে হোটেলেই বুফে খাবার খেলাম। দেখি এক গায়িকা গান গাইছে।




রাতের বুফে খাবার...

গান শুনতে শুনতে খাওয়া সেরে রওনা দিলাম “কালারে নাইট বাজার” এর উদ্দেশ্যে। এটা চিয়াং মাই এর একটা আকর্ষনীয় স্থান বটে। এই বাজার রাতেই বসে, পর্যটকদের জন্য হরেক রকম জিনিসের পসরা নিয়ে। ছবিতেই দেখুন।


রকমারি পণ্য সাজানো দোকান...


বাতির দোকান...




কালারে নাইট বাজারে এক শিল্পী ছবি থেকে অবিকল ছবি আকছে !!


জীবন্ত চিংড়ি মাছ সাজিয়ে রাখা, চাইলেই রেধে দিবে...

পরদিনই চিয়াং মাই এ আমাদের আসল ঘোরাঘুরি। প্যাকেজ আগে থেকেই নেয়া ছিল। আমরা সাই নাম ফুং প্রজাপতি খামার এবং অর্কিড নার্সারি, চিয়াং দাও প্রাকৃতিক গুহা দেখে চলে যাব মিয়ানমার সীমান্তের কাছে “Thaton Long Neck Village” এ।

অর্কিড নার্সারিটা আসলেই খুব সুন্দর। কত রঙ বেরং এর অর্কিড! সেসব অর্কিড থেকে আবার অলংকারও বানিয়েছে। ঢোকার মুখেই একজন থাই তরুণী প্রত্যেকের বুকে একটি করে অর্কিড ফুল লাগিয়ে দেয়। ;)


অর্কিড বাগান...


রং বেরং এর অর্কিড...


অর্কিড থেকে তৈরী অলংকার...

আমাদের সাথে ঐ ট্যুর এ বাকী যারা ছিল সবাই ইউরোপিয়ান। দু’জন মধ্য বয়সী ভদ্রলোক এয়ার ফ্রান্সের কর্মকর্তা, দু’জন সুইডিশ তরুণী এ লেভেল শেষ করে ঘুরতে বেরিয়েছে। এর মধ্যে একজন ছিল সুইজারল্যান্ড থেক, নাম এলেক্স। এই তরুণী মূলতঃ একজন নার্স। ঘোরাঘুরির প্রতি নেশা যে কি জিনিস সেটি বোঝানোর জন্য ওর কথা বলার লোভ সামলাতে পারলাম না।

এলেক্স ঘুরতে বেরিয়েছে এক বছরের জন্য। সুইজারল্যান্ডে সে হাসপাতালে নার্স হিসেবে ক্রমাগত রাতের পালায় কাজ করত, কারণ, রাতের পালায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন গুণ বেশী পারিশ্রমিক। বেশ অনেক দিন কাজ করে এবার সে ঘুরতে বেরিয়েছে। প্রথমে সে সম্ভবত আমেরিকা ঘুরেছে এক মাস। এরপর সে ইউরোপ ঘুরে চলে এসেছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া (থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, প্রভৃতি) ঘুরতে। এরপর সে চীন এবং ভারতেও ঘুরবে। আমার সাথে যখন দেখা হয় তখন ওর ঘোরাঘুরির সম্ভবত সপ্তম মাস চলছিল! শুনলাম আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম !!


এলেক্স ও আমি...

অর্কিড নার্সারী দেখে চলে এলাম চিয়াং দাও গুহা দেখতে। প্রাচীন রক ফর্মেশন মোড়ানো একটি প্রাকৃতিক গুহা।


চিয়াং দাও গুহার অভ্যন্তরে...

পুরনো ছবিগুলো দেখে আমার ফিলিপিনসের পুয়ের্তো প্রিন্সেসা ভূ-গর্ভস্থ নদীর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেখানেও এ ধরণের Rock Formation দেখেছিলাম। যারা আমার ফিলিপিনস ভ্রমনের পোস্টগুলো পড়েন নি, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, সম্প্রতি ঘোষিত প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যগুলোর মধ্যে একটি ঘুরে আসার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সেটি হল, ফিলিপিনসের পুয়ের্তো প্রিন্সেসা ভূ-গর্ভস্থ নদী ! ;)

চিয়াং দাও গুহা ছেড়ে থাটন লম্বা গলা গ্রাম দেখতে যাওয়ার পথে একটি বিরাট বুদ্ধ মূর্তি মন্দির দেখে গেলাম।



পথেই একটি রেস্টুরেন্টে আমরা দুপুরের খাওয়া সারলাম...



থাটন লম্বা গলা গ্রাম, চিয়াং মাই থেকে ১৭৬ কিমি দূরে মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত। এই গ্রামে বসবাসরত কায়ান পাহাড়ী উপজাতিটি মূলতঃ মিয়ানমারেই থাকত, কিন্তু মিয়ানমারের সেনা শাসনজনিত সংঘর্ষের পর নব্বইয়ের দশকে এরা থাইল্যান্ডে চলে আসে শরণার্থী হিসেবে। কায়ান মেয়েদের গলায় পাচ বছর বয়স হলেই পিতলের কয়েল জড়িয়ে দেয়া হয়। এতে তাদের কলার বোন নীচে নেমে গিয়ে গলা লম্বা হয়ে যেতে থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর পর কয়েলের আকার পরিবর্তন করা হয়। এই কয়েলটি যথেষ্টই ভারী। মেয়েদেরকে বেশী আকর্ষনীয় এবং বাঘের আক্রমণ থেকে বাচতেই এই গলা লম্বা করা, এ ধরণের কিছু ধারণা সেখানে প্রচলিত। কায়ানরা থাইল্যান্ডে কোন কাজ করতে পারত না, যেহেতু তারা শরনার্থী। পর্যটকদের দেয়া ডলারেই এদের পেট চলত। এদের কিছু হস্তশিল্প পণ্য আছে যেগুলো এরা বিক্রি করে। ছবিতেই দেখুন এদের জীবন।


কায়ান নারী কাপড় বুনছেন...


গলা লম্বা করার শুরুটা এভাবেই...

এভাবেই ২০০৬ সালের আমাদের থাইল্যান্ড ভ্রমন শেষ হয়েছিল। লং নেক ভিলেজ দেখাটা আমার জন্য ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটা স্মৃতি। :D


সময় হলো ঘরে ফেরার...:)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:৫০
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×