ইভ্যালি নিয়ে ইদানিং দারুণ হইচই হচ্ছে। পক্ষে বিপক্ষে অনেক পোস্ট, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা সোচ্চার! কেউ বলছেন, ইভ্যালিকে বন্ধ করে দেয়া দরকার।
এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা একটু শেয়ার করি। ইভ্যালিতে আমার প্রথম অর্ডার করা ০৬ জানুয়ারি ২০২১, শেষ অর্ডার করেছিলাম ২৬ জুন ২০২১। মোট ১১১ টি অর্ডার করেছি, ৮৫ টা অর্ডার ডেলিভারি পেয়েছি এখন পর্যন্ত, ২ টা ওরা ক্যান্সেল করেছে, বাকীগুলো প্রসেসিং এ আছে। অধিকাংশ অর্ডার ৪৫ কর্ম দিবসের(২ মাস) মধ্যেই পেয়েছি, কিছুঅর্ডার পেতে ৪ মাস লেগেছে। মজার ব্যাপার হল, অধিকাংশ অর্ডারই যে আমরা পেয়েছি এটা আমরা বলি না। আমরা যে কয়েকটা পাই নি সেটা নিয়ে ইভ্যালির ফেইসবুক গ্রুপে মাতম করি! অবশ্যই আমি ইভ্যালির দেরিতে পণ্য দেওয়ার সমর্থন জানাতে এ কথা বলছি না।
কথা উঠেছে, ইভ্যালি টাকা নিয়ে কেন সময়মত পণ্য দিতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট এবং ইভ্যালি সিইও'র ব্যাখ্যায় আমরা বুঝতে পেরেছি, তারা ই-কমার্স মার্কেট তৈরি এবং গ্রাহক সংগ্রহ করতে টাকাগুলো খরচ করেছেন অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে পণ্য বিক্রি করে। ফলশ্রুতিতে তারা এখন প্রায় ৪’শ কোটি টাকা লস এ আছেন। আর এই পুজিটা তারা বিনিয়োগ করেছেন গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রির টাকা দিয়ে। তিনি যে মডেলে বিজনেস প্ল্যান করেছিলেন এবং সে অনুযায়ী তার ব্যবসায় লাভে ফিরে আসার পরিকল্পনাও আমরা জেনেছি সিইও’র লাইভ এবং ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে।
তার এই বিজনেস মডেল লিগ্যাল না ইলিগ্যাল, এথিক্যাল না আনএথিক্যাল, স্ক্যাম নাকি পঞ্জি স্কিম সে প্রসংগে এখন যাচ্ছি না। কিন্ত, আমি মনে করি ইভ্যালিকে মনিটরিং এ রেখে তার বিজনেসটাকে সাসটেইনেবল করার সুযোগ দিতে হবে। ইভ্যালি থেকে ক্রেতাদের কেনাকাটা বন্ধ করে ফেলা বা ইভ্যালিকে বন্ধ করে দেয়া মানে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে পথে বসিয়ে দেয়া। ইভ্যালি ছাড়াও ইফুড, ইজবস, ফ্লাইট এক্সপার্টসহ যেসব ভেঞ্চার তিনি শুরু করেছেন, আমি মনে করি তার ৩/৪'শ কোটি টাকার ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা খুব একটা অসম্ভব হবে না। আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রীইতো বলেছিলনে, ৪০০০ কোটি টাকা কোন টাকাই না! তাহলে এই লোক কেন পারবে না?? নাকি তাঁকে আমরা পারতে দিতে চাই না??
ইভ্যালি কান্ডে হলুদ সাংবাদিকতা আর বুদ্ধিজীবীদের (সম্ভবত টাকা খেয়ে) লেখালেখি আরেকবার দেখার সুযোগ হল। The Business Standard নামে এক পত্রিকা ইভ্যালি’র বিরুদ্ধে লেখা সংবাদগুলোকে আবার ফেইসবুকে পয়সা দিয়ে বুস্ট করায়, তার বক্তব্য অনুসারে সাংবাদিকতা একটা ব্যবসা, ৩০ বছর ধরে তিনি এ করেই খাচ্ছেন!!
গতকাল স্বনামধণ্য এক পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করল, ইভ্যালি’র অফিস বন্ধ! এরপরে ইভ্যালির এক কর্মকর্তার লাইভ থেকেই আমরা দেখলাম যে তাঁদের ওয়্যারহাউসে পণ্য প্যাকেজিং এবং ডেলিভারির কাজ চলছে। আর কোভিড এর কারণে তাদের একটা বড় অংশই বাসা থেকে অফিস করছে যেটা মহামারীর এই পরিস্থিতিতে খুবই স্বাভাবিক!
কিন্তু কেউ বলছে না যে এত বড় এই ব্যাবসাটাকে কিভাবে sustainable মডেলে নিয়ে আসা যায়! কেউ না! কারণ, টাকা কথা বলে!
এটা হয়তো ঐতিহাসিকভাবেই আমাদের জাতিগত দৈন্য! আমরা কখনো অন্যের ভাল সহ্য করতে পারি না, বিদেশেও বাংলাদেশীরা নাকি ৩ জন একত্রিত হলে দুইটা দল করে ফেলে! আমরা নিজের দেশের উৎপাদিত জিনিসের বদলে বিদেশী পণ্য বেশী পছন্দ করি। সেই জায়গাটা থেকে বের হয়ে এসে, অন্যকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে আনার যে জাতীয় প্রচেষ্টা চলছে সেটা না করে রাসেল সাহেবকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে উতরে যেতে সহায়তা করাই বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় হবে বলে মনে করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৪১