somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেলাই দিদিমনি

২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ (এক )

ভাঙাচোরা টয়লেটের সামনে জনা পাচেক মহিলার একটা লাইন ।ওদের মাঝে একটাই প্রতিযোগিতা কে আগে যেতে পারে , কিন্তু সে সুযোগ একজন আরেক জনকে দিচ্ছে না । সময় হাতে মাত্র ৪০/৪৫ মিনিট । নিজের ঘরের আধখোলা দরজার চৌকাঠে বসে দুই পা দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে সে দৃশ্যই দেখছে সিমা । বয়স বড়জোর ২৫/২৬ হবে । চেহারাটা মোটামুটি পরিস্কার । মুখের আকার চোঁখে পড়ার মত । তবে না খেয়ে খেয়ে শরীরের বারোটা বাজিয়েছে আগেই । শরীরে যেটুকু মাংশ আছে সেটা শুধুমাত্র ঐ হাড়টাকে ঢেকে রাখার জন্য । ওড়নাটা ঠিক করতে করতে বলল :
- এই তোগের হল ? এবার কিন্তু আমি যামু ।
- জি আপা হয়ছে , আপনে আইতে পারেন । বলল সিমার পাশের ছোট ঘরটার বাসিন্দা পারুল ।

সবাই সিমাকে একটু হলেও সম্মান করে । এখানে চারটা ঘরে মোট আটজন থাকে । সিমা একা থাকে এক ঘরে । সবাই অশিক্ষিত আর এক্কেবারে মূর্খ। সিমা একটু লেখাপড়া করেছে । অষ্টম শ্রেনিতে পড়ার সময় কোন এক অজানা অসুখে বাবা মারা যায় , তারপর রোগা পাতলা মা অসুস্থ শরীর নিয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে আরো দুবছর লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে । চালিয়েছে বলতে সরকারী খরচে যে কদিন পেরেছে আরকি ।মেধা ভালো ছিল বলে সবাই মোটামুটি সাহায্য সহযোগিতা করেছে । কিন্তু এ গ্রেড পেয়ে এস এস সি পাশ করার পরও কলেজে ভর্তি হতে পারেনি ভর্তি খরচ জোগাড় করতে পারেনি বলে । স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাকে ভর্তি খরচ দিবে বলেও আর দেয়নি । তাই লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে সংসারে মন দিতে হয়েছে । লেখাপড়া টা আর হয়নি । তবুও এই চার ঘরে যারা থাকে তাদের মধ্যে ঐ আবার লেখাপড়া জানে । আর সবাই কখনোও স্কুলের বারান্দায় যায়নি । তাই সিমাকে সবাই সমিহ করে কথা বলে ।

- ভাতের হাড়ির ফ্যানটা ফেলে আইতাছি ,- বলল সিমা ।

বলেই ঘরের মধ্যেই গ্যাসের চুলায় ভাতের হাড়ির দিকে নজর দিল । ফ্যান ফেলবে কি ? ফ্যান তো আগেই শুকিয়ে গেছে ! টয়লেটের সামনে ওদের তামাসা দেখতে দেখতে ভাতের কথা আর মনে ছিল না । তার পরও যেটুকু ছিল সেটা নিংড়ানোর একটা চেষ্টা করে দেখলো । এক ফোটা ফ্যানও পড়লো না । ব্যর্থ হয়ে হাড়িটা নামিয়ে রাখলো পাশেই রাখা ছোট্ট পিড়িতে ।

বাইরে এসে দেখে ধুন্দুমার কান্ড ! পারুলের সাথে ঝগড়া লেগে গেছে নয়নের মার । ঝগড়ার কারন টা বড়ই হাস্যকর । নয়নের মা নাকি পারুলকে বলেছে- “ তোর আর সাবান ঘসা লাগবি না । এমনেও তোর ঐ কালো চামড়া কেউ সাদা করতে পারবো না ।” এতেই পারুলের রাগ হয়ে গেছে “ আমি না হয় ইট্টু বেশি কালো তাবলে রোজ রোজ কওনের কি আছে ? তোমার যে সাদা চামড়াতেই ময়লা বোঝাই ।”
সিমা এসে ওদের ঝগড়া থামাতে বলে – এসব বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতে নেই । আল্লায় ওরে কালো বানাইছে ও কি ওর দোষ ? নয়নের মাকে লক্ষ করে বলে – আর তুমি যে অপরিস্কার থাক এটা কিন্তু তোমার দোষ । নয়নের মা এবার কথা বলে – পয় পরিস্কার থাকবো ক্যামনে ? ঠিকমত প্যাটটাই ভরাতে পারি না ! তার উপর নয়নের আবার স্কুলের …………
নয়নের মা কথা শেষ করতে পারে না , সিমা বলে-
- থাক , তোমার আর ফিরিস্তি দেওয়া লাগবে না । তোমার ফিরিস্তি পরে শুনবো । এখন সুমায় নাই । অফিস যাতি হবে , তুমি অফিস যাবা না ?
- হ যামু তো । পারুলই তো সব ঝামেলা বাধায় দিল । ও যদি…………
- আবার শুরু করছো ? যাও তো ! একটু ধমকের সুরে বললো সিমা ।
নয়নের মা আর কথা না বাড়িযে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো ।

পারুল এতক্ষন কোন কথায় বলেনি । সিমা থাকলে পারুল কোন কথা বলে না । সিমাকে খুব ভয় পায় । যদিও সিমা কখনো পারুলকে একবারের জন্যও জোরে কথা বলেনি । তার পরও সিমাকে পারুল ভয় পায় । হয়তো অনেক সম্মান করে । পারুল কোনদিনও স্কুলে যায়নি । কোন অক্ষরও ঠিকমত চেনে না । নিজের নাম সই করতে পারে না । আর সিমা ম্যাট্টিক পাশ । পারুলের কাছে সিমা অনেক শিক্ষিত । তাইতো এই ভয় বা সম্মান । সিমা এবার পারুলকে বলল -
:– কিরে তোর এখনো হয়নি ? তুই না বললি হয়ে গেছে ?
- হ আপা হয়ছিল তো । ঐ নয়নের মা এসেই তো …………
- হয়ছে ... হয়ছে …..তুই শুধু শুধু ওর সাথে লাগতে যাস কেন ? জানিস না ওর কামকাজ ?
- আমার হয়ে গেছে । আপনি আসেন ।
- আচ্ছা ,যা রেডি হ । সময় নাই ।
পারুল চলে গেলে সিমা গোসলটা সেরে নিল । গোসল করে ঘরে যাবে এমন সময় পাশের ঘরে শেফালির কান্নার শব্দ । শেফালির ঘরে গিয়ে দেখে বালিশে মুখ গুজে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে । কারনটা জানতে চাইলে বলে
– আফা পোলাটা মার কাছে রয়ছে । ওর নাকি ভিষন অসুখ করছে । মায় কয়ছে আইসা দেখে যা ।কিন্তু ক্যমনে যামু ।মোর লগে তো এট্টা টাকা নাই । পোলাটা শুধু মা মা করতাছে । এমাসের আর মাত্র দুই দিন । এখন যদি কামায় করি তয় হাজিরা বোনাস কাটা যাইবো ।
- হজিরা বোনাস আগে না তোর পোলাই আগে ?
- আফা কম বেতনে চাকরি করি । হাজিরা বোনাস পাইলে কাঁচা বাজারের টাকাটা হয়ে যাই । কি যে করি ? বুজবার পারতাছি না ।
- তোর কিছু বোঝা লাগবো না । আজ রাতের লঞ্চে বাড়ি যাবি । আর দাড়া আমি টাকা দিতাছি ।
বলে সিমা ঘরে আসলো । জামা কেনার জন্য যে টাকাটা রেখেছিল তার পুরোটাই শেফালির হাতে দিল আর বললো – আমি এসে যেন তোরে বাড়ি যেতে দেখি ।
- আফা আপনে মানুষ না ………আপনে ……..
- হয়ছে আর গীত গাওয়া লাগবে না । আমি গেলাম ।
বলে দু এক লোকমা ভাত কোন রকমে মুখে পুরেই অফিসের উদ্দেশ্যে ছুটলো ফিরবে আবার রাত ৮ টা বা ৯ টা । এই পারুল হয়ছে তোর ?
- হ চলেন । বলে হাটা লাগালো ।
অন্যেরা ইতিমধ্যে চলে গেছে । পারুল আর সিমা একসাথে যায় । যাওয়ার আগে আরেকবার শেফালিকে তাগাদা দিল । সেই সাথে ঘরে ভালো করে তালা দিতে বলে গেল । এটা সিমার রোজকার অভ্যাস । সব কাজে সবাইকে সবসময় সাবধান করা ।

চলবে

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ ভোর ৬:৩৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×