somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাউকে বলিনি সে নাম

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদি আমি জিজ্ঞেস করতাম মেয়েটি কি তার আসল নাম বলত?? খুব সম্ভব, না! এখানে কেও কারো আসল নাম জানে না।কিংবা জানলেও তা বলা নিষেধ।তাই ধরে নিচ্ছি তার নাম পাখি।ওরা সবাই এমন নামই ব্যবহার করে।রাত প্রায় ৩ টার কাছাকাছি হবে।সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ধরে যে রাস্তাটা গেছে সেই রাস্তা ধরে পাখি হাঁটছে।একই সাথে সে বাঁ হাতের কবজি ধরে আছে আর কিছুক্ষন পর পর হাত ঝাঁকাচ্ছে।এই তো কিছুক্ষন আগে দুজন পুলিশ টাকা চেয়ে বসেছে।কিন্তু আজ এখনও পর্যন্ত খদ্দের জোটে নি। টাকা কি করে দেবে সে?ফলাফলঃ হাত ধরে আচমকা টান আর আর...। কোমরে বেশ ব্যাথা পেয়েছে মনে হচ্ছে।হাঁটতে হাঁটতে সে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত এসে পড়েছে।মোড়ে বেশ কিছু রিকশা দাঁড়িয়ে আছে,এই এতো রাতে কি কেও আসলে বের হয় পাখির মত মেয়েরা ছাড়া???তাহলে এত রাতে রিকশা নিয়ে বাইরে দাড়িয়ে থাকার মানে কি???এই রিকশাওয়ালাদের অধিকাংশের আসলে পরিবার নেই,গ্যারেজে থাকার জীবন।রাতে কেউ তাদের বাড়ি ফেরা নিয়ে ভাবে না, যখন তখন গ্যারেজে ঢোকা যায়।তাই হয়ত এত রাতে চত্বরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা।পাখিকে দেখা মাত্রই একজন কুৎসিত একটা শব্দ করলো।বাকিদের মধ্যে কেও কামুক হাসি দিলো আর কেও বা কিছুই না দেখার ভান করলো।এই কামুক হাসি কিংবা শব্দের মানে সে জানে।একদিকে ভয়, কিছুটা স্বস্তি অন্যদিকে সেই চিরচেনা অপরাধবোধ (যেদিন থেকে এই পেশায় সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত এই একমাত্র অনুভূতি যা এই শ্যামবর্ণা তরুনীকে ছেড়ে যায়নি) নিয়ে সে এগুচ্ছে।অন্য সবার ক্ষেত্রে যা হয়না তা তাঁর ক্ষেত্রে কেনো হয় সে প্রশ্নের উত্তরও অজানা। পাখি মাঝে মাঝে ভাবে খুব শিঘ্রি যখন সে এই পেশা ছেড়ে দেবে তখন অবসরে বসে সে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করবে।জীবনে যে কোন প্রশ্নের উত্তর অজানা রেখে দেয়া অপরাধ;ভয়ংকর রকম অপরাধ।মরার আগে তবে আফসোস নিয়ে মরতে হয়।আর আফসোস নিয়ে মৃত্যু মানেই তো যন্ত্রনাদায়ক মৃত্যু।উহুঃ খুব বেশি জটিল হয়ে যাচ্ছে সব কিছু।

ভোর প্রায় সাড়ে পাঁচটার মত হবে,দিনের আলো ফুটবে কিছুক্ষনের মধ্যে।পাখি মাঝে মাঝে খুব অবাক হয়,এ শহরে সবচেয়ে বেশি ভোর দেখা তাও আবার ঠিক খোলা আকাশের নিচে-এই বিষয়ক কোন জরিপ হলে সে নিশ্চয়ই প্রথম অবস্থানে থাকত!অবশ্য সে ক্ষেত্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারত আরো অনেকে।“সুনিয়া” (সোনিয়া নামটিকে কেনো সেই মেয়েটি সুনিয়া বলে উচ্চারন করে তা সে জানে না) নামের নতুন মেয়েটিও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারত!যাক সে কথা।

লোকজন সকালের হাঁটার জন্যে বের হয়া শুরু হয়েছে।জাদুঘরের সামনে পরপর দুটো চায়ের দোকান।তার একটিতে বসে জহির।পাখির গন্তব্য এখন সেখানে।জহির খুব কর্মঠ যুবক।এই ভোরবেলা দোকান খোলা থাকলে দু-চারটে টাকা বাড়তি আয় হয়।সবাই সকালে হাঁটতে এসে এখানে চা খেয়ে নেয়।সে জন্যেই এত ভোরে দোকান খোলা।অবশ্য এই সময়ে জহির তাঁকে দেখলেই রেগে আগুন হবে। “কাষ্টোমার আসার টাইমেই তোর আসতে হয়? মাইনষে যদি দ্যাখে এক মা*র সাথে পীরিত করি কেউ চা খাইতে আইবো?” পাখি হেসে ফেলে ফিক করে।রাজপুত্রের মত দেখতে এই যুবককে কেউ একটা ইস্ত্রি করা শার্ট পড়িয়ে মতিঝিলের ব্যস্ত অফিসপাড়ায় পাঠিয়ে দিলে কে বলতে পারবে ও রাস্তার মোড়ে সামান্য চা বিক্রি করে?পাখি ভেবে পায় না,উপরে যিনি আছেন তিনি কেনো সবাইকেই কোন না কোন ভাবে অভাবগ্রস্থ বা অপূর্ন করে রাখেন।সুদর্শন যুবক (পাখির মতে অন্তত) চা বিক্রি করে আর চামচ নেড়ে অর্ধেক জীবন পার করে দিচ্ছে,কি বিচ্ছিরি ব্যাপার!!!জহিরের সাথে পাখির অবশ্য অন্য আরো একটা সম্পর্ক আছে।সে তাঁর সব সঞ্চয় জহিরের কাছে জমা রাখে।এই শহরে বোধহয় একমাত্র যুবক জহির যার চোখে সে স্বচ্ছতা খুঁজে পেয়েছে।জহির চোখে চোখ রেখে কথা বলে।তাঁর দৃষ্টি কোনদিন বুকের দিকে যায়নি কিংবা কখনো ওড়না সরে গেলে আমতা আমতা করে কথা আঁটকে যায়নি।জহির যখন চোখ লাল করে তাঁকে সকাল বেলা দোকানে আসতে বারণ করে পাখি মনে মনে বেশ খুশি হয়-কেনো তা সে নিজেও ঠিক জানে না।তবে এই গম্ভীর কণ্ঠের প্রতিটি উচ্চারন খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে-চেহারায় সামান্য চিন্তিত ভাব এনে।এ পেশায় কামুকতা,চাহিদা,অট্টহাস্য কিংবা তৃপ্তি সব কিছুই মেকি,তাই অনায়াসে পাখি মুখ গম্ভীর করে ফেলার অভিনয় করতে পারে!

আজ রাতে লঞ্চেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।পাখির বাবা নাকি খুব অসুস্থ।আম্মা ঠিক গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলতে পারেন না।সে জানে তাঁর অসুস্থ বাবা মারা গেছেন।কিন্তু আম্মা হয়তো তখনই খবরটা দিতে চাননি।আম্মা ওপাশ থেকে বলেছেন “অপিস” থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসতে।(হ্যাঁ, বাড়িতে সবাই জানে পাখি কোন এক “অপিসে” কাজ করে)।জহির তাঁর সাথে এসেছে লঞ্চঘাট পর্যন্ত।পুরো রাস্তা সে কোন কথা বলেনি।পাখির খুব ইচ্ছে হচ্ছিল গম্ভীর কণ্ঠটা একবার হলেও শুনতে।কিন্তু বাবার কথা মনে পড়ে তাঁর ভেতরটা উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে।সবকিছু খুব অগোছালো মনে হচ্ছে।পাখি লঞ্চের ভেতর দাঁড়িয়ে অসহায় ভঙ্গিতে একবার হাত নাড়ল।জহিরও কেনো জানি অসহায় ভাবে সে হাত নাড়ার উত্তর দিলো ক্ষীণ কণ্ঠে “গেলাম” বলে।জহির চলে যাওয়া মাত্রই পাখি
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×