মৃত্যু এসে উনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের মৃত্যু আমাকে কস্ট দেয়নি, লজ্জা দিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় মৃত্যুই এসে উনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সমস্ত লজ্জার হাত হতে।
পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ছে এক গাদা গৎ বাঁধা শোকবার্তা। কাঁদতে কাঁদতে লুঙি ভেজানোর উপক্রম করছি আমরা। মৃতদেহ দেখতে বা জানাজায় দলে দলে আসা অমুক তমুকের সার্কাস দেখতেও খারাপ লাগছে না। আজ কালকার জামানায় এগুলো স্বাভাবিক। আগামী বছর ধুম ধাম করে উনার মৃত্যবার্ষিকী পালন করা হবে নিয়ম মেনে। পরের বছর আবেগের তোড় একটু কম থাকাতে সেটা একটু কম ধুম ধামের করে পালন করা হবে। আবেগ কমতে কমতে যখন সেটা যখন শুন্যে পরিণত হবে তখন উনার কথা স্মরন করবে শুধুমাত্র উনার পরিবার আর উনার শীষ্যরা। আমরা সুশীল মধ্যবিত্ত মেতে উঠবো অন্য কাউকে নিয়ে। আবেগ হোলো মধ্যবিত্তের ফ্যাশন। ঈদের ফ্যাশনের মতো আবেগও বদলে যায় বছর বছর - আবেগের ব্যক্তি/বস্তুও বদলে যায়।
অনেক সময়ই দেখেছি সিডি বা ক্যসেটের ফ্ল্যাপে গানের সুরকার/গীতিকারের নামের জায়গায় লেখা "সংগৃহিত"। ভেবেছিলাম হয়তো সেই মহান শিল্পী অনেক খেটে খুটে - বন বাদারে ঘুরে ঘুরে গান সংগ্রহ করে বাঙালী জাতির সংগীত সম্ভারকে সমৃদ্ধ করেছেন। পরে শুনেছি, সেটা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের লেখা - সুর করা। চরম অকৃতজ্ঞ এবং চোর সেই শিল্পী বেমালুম চেপে গিয়েছেন। পরে ধরা পরার পর ইয়ে ইয়ে বলে পার পেতে চেয়েছিলেন সেই ভদ্রবেশী চোর। এর পর যা হয় , শাহ আবদুল করিমের ভাগ্যে স্বীকৃতিতো দূরের কথা ; রয়ালটির ক্ষুদ্রাংশ টুকুও জুটেনি।
বেঁচে থাকতে শাহ আবদুল করিম অনেক পদক পেয়েছিলেন, অনেক সম্মাননাও পেয়েছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে উনার পেটে যখন ভাত জুটতো না তখন কোনো সুশীলই তার খবর নেয়নি। এই মানুষটাই একদিন কস্ট নিয়ে বলেছিলেন
"এত সংবর্ধনা, সম্মান দিয়ে আমার কী হবে! সংবর্ধনা বিক্রি করে দিরাই বাজারে এক সের চালও কেনা যায় না"। (প্রথম আলো)
আজকে ফেসবুকের পাতায়, ব্লগের পাতায়, পত্রিকার পাতায় যারা শোকগাঁধা লিখছি ফ্যাশন করে তারাও কোনো খোঁজে নেইনি সেসময়।
এক বোতল ব্লাক লেভেলের দাম দিয়ে কয় সের চাল কেনা যায় সেটা ভাবছি, একটা ডিএসএলআর এর দাম দিয়ে কয় মাস পেট পুরে খাওয়া যায় সেটাও ভাবার চেস্টা করছি। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম যখন ক্ষুদায় কাতর ছিলেন, চিকিৎসার অভাবে ভাঙা কুঁড়ে ঘরে কাতরাচ্ছিলেন তখন অবশ্য এসব হিসেব করার ফুসরত হয়নি আমার বা আমাদের। এখন যা করছি তার সব কিছুই ভন্ডামী। এসব ভন্ডের মাঝে আমিও একজন।
ভাবছি সামনে কার পালা ?
এ লেখাটি সর্বপ্রথম মাহবুব সুমন.কম এ প্রকাশিত।
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।
মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অহমিকা পাগলা
এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
হার জিত চ্যাপ্টার ৩০
তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবনাস্ত
ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে
প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন