somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ি মেলবন্ধনে নাপিত্যাছড়া ঝরনা

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘ফিরে এসে ভাত খাবেন? খাইলে অর্ডার দিয়া যান। এইখানে এসে খাইবেন।’ পথচলা শুরু হতে না হতে এই কথা শুনে যে কেউ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবেন। এই কথা কেন বললো? বলতেই পারে। চলেছেন নাপিত্যাছড়া ঝরণা দেখতে। নাম একটি হলেও একসাথে চারটি ঝরণা দেখতে যে অভিযানে নামতে হবে, তাতে ফেরার পর হয়তো আস্ত একটা ঘোড়া খেতেই মন চাইবে।



চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দর্শনীয় স’ানগুলোর মধ্যে একটি হলো নয়দুয়ারের এই নাপিত্যাছড়া ঝরণা। পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে আপনাকে দেখতে হবে এর সৌন্দর্য। বোনাস হিসেবে একটি নয়, চার চারটি ঝরণা দেখার সুযোগ পাবেন। কুপিকাটাকুম, বাঘবিয়ানি, মিঠাছড়ি আর বান্দরকুম বা বান্দরছিরা।

যারা ঘুরে বেড়ানোর মজা উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ভ্রমণযোগ্য স’ান। গ্রাম্য পথ ধরে হেঁটে চলা, প্রায় পুরো পথ ঝিরিপথের পানিতে আর পাথুরে রাস্তায় হাঁটা এবং পাহাড়ের সংকীর্ণ পথ বেয়ে ওঠা সবই আছে এই ঝরণায়।



গ্রামের রাস্তা শেষে যখন সবে পাথুরে ছড়ায় নামবেন তখন যেতে যেতে চোখে পড়বে আদিবাসী কিছু পরিবার। চট্টগ্রামের এই অঞ্চলে পাহাড়ের গায়ে নৃ-গোষ্ঠী দেখে হয়তো চমকে উঠবেন। কিন’ এখানে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি ত্রিপুরা পরিবারের বসবাস আছে। ঝরণায় যাওয়ার পথেও পানিতে ক্রীড়ারত আদিবাসী শিশু দেখতে পাবেন। পাহাড়ের যে অংশ আপনি পাড়ি দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন, হয়তো সেই অংশেই কোনো আদিবাসী নারীর সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে। মাথায় ঝুঁড়িবা ভারি কিছু বেঁধে নিয়ে দিব্যি সেই পথ পাড়ি দিচ্ছেন।

ছড়া দিয়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটার পরই শুরু হবে ঝিরিপথের রাস্তা। এখানে ছোট ছোট পাথর দেখেই খুশি হওয়ার দরকার নেই। সামনে অনেক বড় চমক অপেক্ষা করছে। তবে হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অনেক পাথরই ধারালো। সাথে থাকা লাঠি দিয়ে দেখে নেবেন পানির নিচে পাথর নাকি গভীর।

ট্রেইল ধরে এগিয়ে যেতে যেতে পাহাড়ের গহীন সৌন্দর্য চোখে পড়বে। কিছুটা ছায়াঢাকা পথগুলোর দুই পাশে পাহাড় আর গাছ। এ যেন পাহাড় আর গাছের সুড়ঙ্গ। আকাশ অনেক দূরেই মনে হবে। দুর্ভেদ্য গাছ-পাহাড়ের দেয়ালও তার বন্য সৌন্দর্যে জন্য ভালো লাগবে।


ঝিরিপথ দিয়ে প্রায় ২০মিনিট হাটার পর পাবেন প্রথম ঝরণা কুপিকাটাকুম। কি অদ্ভুত নাম! অদ্ভুত তার সৌন্দর্য। মনে হবে পাহাড়ের দেয়াল বেয়ে ঝরণার পানি নেমে আসছে। তবে সাবধান। গিয়েই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন না। কারণ ঝরণার সামনে বড় বড় পাথরের চাঙড় আছে। যা পানির জন্য চোখে পড়ে না। পাথরের পাড় থেকে সাবধানে পা নামিয়ে পানিতে নামুন। মাঝের জায়গাটিতে পা রাখার জায়গা নেই। সেখানে গভীরতা অনেক। যারা সাঁতার জানেন না, নিজে নিজে ঝরণার দেয়ালের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। সঙ্গী থাকলে তার সহায়তা নিন।

আনন্দে বাড়তি মাত্রা দেবে কুপিকাটাকুমের এক কোনে থাকা প্রাকৃতিক স্লাইড। মনে হবে কেউ যেন পাথর কেটে স্লাইড তৈরি করেছে। সাবধানে পাথরের গা বেয়ে কিছুটা উপরে উঠে দুই পাশ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে স্লাইডে শরীর ছেড়ে দিন। পাহাড়ি ঝরণার স্লাইডের অনুকরণে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যেসব স্লাইড তৈরি আছে তার চেয়ে কম আনন্দ পাবেন না এখানে।



কুপিকাটাকুম দেখা আর ছবি তোলা শেষ হলে এবার পুনরায় যাত্রা শুরু করতে পারেন। এখনো যে তিনটা ঝরণা বাকি! সব আনন্দ আর সময় এখানে শেষ করে ফেললে যে অপূর্ণতা থেকে যাবে। তবে যারা ঝরণায় গোসল করে গা ভিজিয়ে ফেলেছেন তাদের আগে ভালো করে পানি ঝরিয়ে নেয়া উচিত। কারণ এখানে থেকেই শুরু পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠা। গা ভেজা থাকলে কুপিকাটাকুমের বাঁ দিক দিয়ে উপরে উঠার রাস্তা দিয়ে সাবধানে চলা উচিত। উপরে উঠেই আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে কেউ। কারণ এর ঠিক উপরেই বাঘবিয়ানি ঝরণা।

বাঘবিয়ানির পাশ দিয়ে শুরু পাহাড়ের মূল অভিযান। সরু মাটির রাস্তা ভিজে পথকে বিপজ্জনক করে তুলেছে। কারণ আপনার মতই ভেজা শরীর নিয়ে ওঠা অন্য পর্যটকরা। লাঠি দিয়ে সামাল দিতে না পারলে দুই হাত ব্যবহার করুন। হাত দিয়ে মাটি বা গাছ খামছে উপরে উঠুন। ভাগ্য ভালো থাকলে সরু এই পথের উপরের দিকে ওঠার জন্য কারা বেঁধে রাখা লতার দঁড়িও পেয়ে যেতে পারেন। খাড়া এই পথে দুর্বলচিত্তের লোকেরা ভয় পেতে পারেন। তাই সম্ভব না হলে নিচে থেকে যান। কারণ খাড়া পথটি বেয়ে ওঠার সময় হাপিঁয়ে যেতে পারেন।



৫মিনিটের পথটি শেষে পাহাড়ের সমতল রাস্তায় উঠে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিতে পারেন। বিশ্রাম শেষ হলে সাথে রাখা লাঠি নিয়ে আবার এগিয়ে চলুন। এবার সামনে পাতলা কাঁদার রাস্তা। পাহাড়ের খাদের পাশ ঘেষে যাওয়া রাস্তাটিতে সাবধানে পা গেঁথে গেঁথে চলা উচিত। এসময় কাজে দেবে আপনার হাতের লাঠিটি। তবে আশেপাশের লতা বা গাছের সহায়তা নেবার আগে লক্ষ্য করুন সেটা মজবুত এবং ভার সইতে পারবে কি না।

পথটুকুন শেষ হলে আবার স্বস্তির ঝিরিপথ দিয়ে হাঁটা শুরু করতে পারেন। তবে এইখানে একটা অংশে পাথরের খাঁজে গভীরতা আছে। লাঠি দিয়ে চেক করে নিন। মাঝের রাস্তায় গভীর থাকলে পাহাড়ের কিনারে সাবধানে চলুন। এখানে পাথরের মেঝে দেখতে পাবেন। তবে সামনে আছে ইংরেজী ‘ওয়াই’ অক্ষরের মত দুটি রাস্তা। একটি গেছে বান্দরকুম আরেকটি মিঠাছড়ি। একটি দেখা শেষে আরেকটি দেখতে হলে আবার এই পথে ফিরতে হবে।



মিঠাছড়ির বৈশিষ্ট্য হলো উপর থেকে পানি পড়ার সময় পাহাড়ের দুই ভাগে ভাগ হয়ে নেমেছে। আর বান্দরকুম বা বান্দরছড়া এই সবগুলো ঝরণার মধ্যে উচ্চতম ঝরণা। এখান থেকে ফেরার পথে পাহাড়ের খাদের রাস্তাটি শেষে নিচের দুই ঝরণার উপরে যখন প্যেঁছাবেন সেখানে আরেকটি শর্টকাট রাস্তা পেয়ে যেতে পারেন। যেটা দিয়ে ঝিরিপথের শুরুর রাস্তাতে এসে পড়বেন।



যেভাবে যাবেন

যারা চট্টগ্রাম থেকে যাবেন তারা নগরীর একে খান থেকে সরাসরি বাসে যেতে পারেন। এখান থেকে নয়দু্য়ার পর্যন্ত ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া। নয়দুয়ার নামলেই সিজনভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে গাইড পাবেন। নয়দুয়ার থেকে এক কিলোমিটার পায়ে হাটার পর পাহাড়ের দেখা পাবেন। নয়দুয়ার বাজারে খাবার হিসেবে ভাতের অর্ডার দিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া পাহাড়ের খানিক আগেই একটি দোকান আছে। চাইলে ফিরেও খেতে পারেন। ঝরণায় ভিজলে সাথে বাড়তি কাপড় ও তোয়ালে রাখা উচিত। তবে কাপড় বদলানোর জন্য গ্রামের যে কোনো বাড়িতে যেতে পারেন।

http://suprobhat.com/পাহাড়ি-মেলবন্ধনে-নাপিত্য/
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×