লাইলাতুল ক্বদর, মহিমান্বিত এক রাত । হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এ রাতেই নাযিল করা হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন । মাহে রমযানের এত মর্যাদা শুধুমাত্র এই কুরআনের কারণেই । এ রাতটির ফযীলত অনেক ।
রাসূল (স বলেছন,
"যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব লাভের আশায় ক্বদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত
জেগে ইবাদত করবে আল্লাহ্ পাক তার পূর্বের সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দিবেন ।" (সহীহ বুখারী)
শেষ দশ রাতে শবে ক্বদর তালাশের ব্যাপারে রাসূলে কারীম (স) বলেছেন-
“রমযানের শেষ দশ দিন তোমরা ক্বদরের রাত তালাশ কর।” (বুখারী)
মহানবী (স) আরো বলেছেন-
“তোমরা রমযানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে ক্বদরের রাত
খোঁজ কর।” (বুখারী)
আব্দুল্লাহ বিন উমার থেকে বর্ণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :-
“যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমযানের
২৭ রজনীতে অনুসন্ধান করে। (আহমাদ)
লক্ষ্য করুন, হাদীসে কিন্তু ২৭ শে রমযানেই লাইলাতুল ক্বদর হবে এ কথা বলা হয়নি । কিন্তু আমরা শুধুমাত্র ২৭ শে রাতেই ইবাদাত করি । অথচ আল্লাহর রাসূল লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধানের জন্য ই'তিকাফে বসতেন ।
#লাইলাতুল ক্বদরের বৈশিষ্ট্য :-
১) রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না ।
২) রাতটি হবে নাতিশীতোষ্ঞ ।
৩) মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে ।
৪) সে রাতে ইবাদাত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে ।
৫) কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে হয়তো আল্লাহ্ স্বপ্নে জানিয়ে দিতে পারেন ।
৬) ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে ।
৭) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে । যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত ।
(সহীহ বুখারী:২০২১, মুসলিম:৭৬২)
আর মাত্র ২ টি রোযা । এর পরেই শুরু হয়ে যাবে লাইলাতুল ক্বদরের দশক । আসুন আমরা ইবাদাতের মাধ্যমে বরণ করে নেই সেই মহিমান্বিত রাতটিকে ।
রাসূল (স) যেভাবে এ রাত কাটাতেন এর পূর্ণ অনুসরণ করাই হবে আমাদের প্রধান টার্গেট । এ লক্ষ্যে আমাদের নিম্নেন বর্ণিত কাজগুলো করা আবশ্যক :
(ক) নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং নিজর অধীনস্থ অন্যদেরকেও জাগিয়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা।
(খ) লম্বা সময় নিয়ে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়া । এসব সালাতের কিরআত ও রুকু-সিজদা লম্বা করা। রুকু থেকে উঠে এবং দুই সিজদার মাঝে আরো একটু বেশী সময় অতিবাহিত করা, এসময় কিছু দো‘আ আছে সেগুলো পড়া ।
(গ) সিজদার মধ্যে তাসবীহ পাঠ শেষে দু‘আ করা । কেননা সিজদাবনত অবস্থায় বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকেট চলে যায় । ফলে তখন দু‘আ কবুল হয়।
(ঘ) বেশী বেশী তাওবা ও ইস্তিগফার করা । সগীরা ও কবীরা গোনাহ থেকে মাফ চাওয়া । বেশী করে শির্কী গোনাহ থেকে খালেছ ভাবে তাওবা করা । কারণ কোন শির্কের গুনাহ থাকলে নেক আমল কবুলই হবে না ।
(ঙ) কুরআন তিলাওয়াত করা । অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যয়ন করলে ভালো হয় । তাসবীহ তাহলীল ও যিকির-আযকার করতে পারেন । তবে যিকির করবেন চুপিসারে, নীরবে ও একাকী এবং কোন প্রকার আওয়ায করা ছাড়া। এভাবে যিকির করার জন্যই
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন :
“সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার রবের যিকির কর মনে মনে, বিনয়ের সঙ্গে ভয়ভীতি সহকারে এবং জোরে আওয়াজ না করে । এবং কখনো তোমরা আল্লাহর যিকির ও স্মরণ থেকে উদাসীন হয়ো না।” (আরাফ : ২০৫)
অতএব, দলবেধে সমস্বরে জোরে জোরে উচ্চস্বরে যিকির করা বৈধ নয়। এভাবে সম্মিলিত কোন যিকির করা কুরআনেও নিষেধ আছে নবীজি (স) ও তা করেন নি । যিকিরের শব্দগুলা হল: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি ।
(চ) একাগ্রচিত্তে দু‘আ করা । বেশী বেশী ও বার বার দু‘আ করা । আর এসব দু‘আ হবে একাকী ও বিনম্র চিত্তে, কবুল হওয়ার আশা নিয়ে । দু‘আ করবেন নিজের ও আপনজনদের জন্য. জীবিত ও মৃতেদর জন্য, পাপমোচন ও রহমত লাভের জন্য,
দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য । তা ছাড়া নবী (স) এ রাতে নিচের এ দু‘আটি বেশী বেশী করার জন্য উৎসাহিত করেছেন:
“ হে আল্লাহ ! তুমি তো ক্ষমার আধার, আর ক্ষমা করাকে তুমি ভালবাসো । কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী)