এরকম ভালো ও গুণধর ছেলে বা মেয়ের সংখ্যা কম নেই আমাদের সমাজে ।
“ছেলেটির নাম রাসেল । বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান । অনেক স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে পা রাখা, আর তারপর বাবা-মা’র স্বপ্নপূরণে ব্যস্ত সময় পার । বুয়েট থেকে পাশ করা ইন্জিনিয়ার সে । এরপর আবার বিদেশ থেকে M.S.C করে এসেছে । এরপর আর প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি । এখন কাফকোর সহকারী ম্যানেজার সে । গত মাসে ৩২ বছরে পা দিয়েছে ।
রাসেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে বেশ কিছদিন ধরে । বিয়ের আর তিনদিন বাকি । বিয়ের কথা মনে হতেই কেমন কেমন যান অনুভূতি হচ্ছে রাসেলের । মেয়ের নাম তানিয়া । খুব ভালো মেয়ে । এক কথায় অসাধারণ । সম্ভ্রান্ত মুসলিম এক পরিবারে জন্ম মেয়েটির ।
বিয়ের দিন ।
প্রচুর ধুমধাম হচ্ছে ।
রাসেল ও তানিয়ার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই হাজির বিয়ে বাড়িতে ।
হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল পুরো বিয়ে বাড়ি । কয়েক সেকেন্ড আগের উৎসবের আমেজটাও যেন পালিয়ে গেলো বাড়ি থেকে ।
ভাবছেন কি হলো???
হঠাৎ কোথ্থেকে এক মেয়ে এসে থমকে দিল বিয়ের সমস্ত আয়োজন । মেয়েটির হাতে ছিল তার ও রাসেলের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি ।
আলোকজ্জ্বল বাড়িটি নিমেষেই অন্ধকার হয়ে গেলো । বিয়েটা ভেঙে গেলো রাসেলের । রাসেলের পরিবারে নেমে এলো অশান্তির কালো ছায়া ।
পরে জানা যায়, শুধু এই মেয়ে নয়, অনেক মেয়ের সাথেই রাত কাটিয়েছে ও”
শুধু রাসেলই নয় ,এরকম ভুরিভুরি উদাহরণ আছে ।
এরকম হবার কারণটা কি জানেন???
শুধুমাত্র দেরিতে বিবাহ । যা বর্তমান বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে ।
আমরা সবাই জানি মানুষের দু’টো স্বত্তা রয়েছে । একটি তার দেহস্বত্তা এবং অপরটি রুহ বা আত্মা । এ দুটো স্বত্তার রয়েছে অনেক চাহিদা । দেহস্বত্তাকে বলা হয় নফস এবং রুহকে বলা হয় বিবেক ।
# দেহস্বত্তার চাহিদাগুলো হল : ক্ষিদে পেলে খাবার চাহিদা, পিপাসা পেলে পান করার চাহিদা, যৌন-বাসনা হলে তা চরিতার্থ করা ।
# আর অন্তঃস্বত্তার কাজ হলো, ভাল মন্দের বিচার করা ।
না চাহিদা মোটেই খারাপ না । কিন্তু চাহিদা মেটানোর উপায়গুলো যদি অবৈধ হয়, তাহলে সেটাই খারাপ ।
কারণ, মানুষ ক্ষিদে পেলে খাবে, পিপাসা পেলে পান করবে এবং যৌনবাসনা জাগলে তা চরিতার্থ করবে এটাই স্বাভাবিক ।
কিন্তু সে যদি ক্ষিদে পেলে যা খুশি তা খায়, হালাল-হারামের বাছ-বিচার না করেই খায়; পিপাসা পেলে হালাল-হারামের বাছ-বিচার না করেই পান করে; যৌন-বাসনা জাগলে তা প্রেমিকার সাথে অথবা পতিতালয়ে গিয়ে চরিতার্থ করে তবে তা নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ ।
একটি ছেলে বা মেয়ে যতই তারুণ্যের দিকে ধাবিত হতে থাকে ততই তার নফসের চাহিদা বাড়তে থাকে । তারা যখন তারুণ্যের বয়সে পতিত হয় তখন নফসের তাড়না যেন মনের ভিতর উঁকি দিতে থাকে প্রতিনিয়ত । হ্যাঁ, এটাই স্বাভাবিক । গ্লাসে পানি ঢাললে সেটা উপচে পড়ে যাবেই । তেমনি কেউ পরিণত হলে তার চাহিদা বৈধভাবে পূরণ করতে না পারলে অবৈধ পন্থার আশ্রয় নিবেই যদি তার নফসকে মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সরন্জাম রুহের কাছে না থাকে ।
একটা ছেলে তার বন্ধুদের মাঝে গিয়ে শুধু গার্লফ্রেন্ডের আলাপ শুনে । তার কাছে মনে হতে থাকে, আমারো হয়ত থাকা উচিত ছিল। তার সামনে অকূল পাথার, নৈতিকতার সাথে যুদ্ধ। ক'দিন? শরীর আর মনের এই অমোঘ চাওয়ার সাথে ক'দিন যুদ্ধ? ১৬-১৭ তে পরিপূর্ণ বড় হয়ে যাওয়া ছেলেটি সামনে ১০ বছরের বেশি সময়ের নিরাশার দেখা খুজে পায়। বিয়ে হয় এখন ৩০/৩২ বছরে। আগে তাদেরই কেবল বিয়ে হয়, যাদের সম্পদ বেশি। এবং তারা প্রেম করে ধনী মা-বাবার ঘাড়ে উঠেই খরচা করে বিয়ে করে ।
তাহলে?
১৫ বছর এই ছেলেটা প্রতিটি দিন, প্রতিবেলা যুদ্ধ করে যাবে? আর বাবা-মা কখনই তাদের হয়ে ভাবেন না। আর সম্ভাবনার সীমানা দেখতে না পাওয়ায় তাদের "স্বাভাবিকভাবেই" হতাশা আগলে ধরে।
অপসংস্কৃতির কৃষ্ণছায়া এখন ঘরে ঘরে । হিন্দি নায়িকারা বিকিনি, টপস পড়ে নিজেদের শরীরের ভাঁজগুলো প্রকাশ করে সারা দুনিয়ার সামনে । যতই জ্ঞানীগুণী আর হুজুরের পরিবার হোক, এখনকার কিশোর-কিশোরীরা এগুলো অবশ্য অবশ্যই জানে । এগুলোই তাদের চারপাশ।
একটা ছেলে ভার্সিটি লাইফে ক্লাস করে ফিরে পরের দিন ল্যাব/কুইজ না থাকলে কি করে বাসায় বা হলে ?
তার আশেপাশে তো রয়েছে তার পশুত্বকে জাগিয়ে তোলার সকল আয়োজন । টিভি চ্যানেল, মুভি, নাটক, গান, পত্রিকা, টেলিভিশনের অ্যাড । ঘরে শিক্ষা না থাকলে ইন্টারনেট,ফেসবুক ও মোবাইলে মেয়েদের কাছে পৌঁছাতে চায় । রোমান্স তো আজকাল পথে ঘাটেই দেখা যায় । ধানমন্ডি লেক বা ফার্স্টফুডের দোকানগুলোতে কপোত কপোতীদের নষ্টামী লেগেই থাকে ।
সাবানের গুরুত্ব বুঝাতে মেয়েদের পায়ের প্রদর্শনী, বডি স্প্রের সুগন্ধি বুঝাতে বগলের প্রদর্শনী, কোমরে ব্যাথার মলমের কার্যকারীতা বুঝানোর জন্য কোমর বা পিঠের প্রদর্শনী আজ আমাদের সমাজে পুরোপুরি সহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে । এগুলোকে আমাদের সমাজ আর তেমন কিছুই মনে করে না । অথচ, এটাই যে ধ্বংসের শুরু আমাদের মূর্খ সমাজ এটা হয়তো কখনোই বুঝবে না ।
আর এসব থেকে বছরের পর পছর একটা ছেলে যুদ্ধ করতে থাকবে । তাকে অভিভাবকরা সন্নাসী মনে করে, নাকি নপুংসক মনে করে, কে জানে?
সন্নাসী মানেই কি ভালো ??? এরা তো আরো ভন্ড । ভাব নেয় যে বিয়ে করে না । কিন্তু ডুবে ডুবে আকাম কুকাম ঠিকই করে ।
আমার এই লেখা কেউ পড়ুক না পড়ুক। আমি জানি এই ভয়াবহতা কত বেশি। একটা মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের হাল ।
এখন তো একটা ছেলে পাশ করে চাকরি করলেও হয় না । তাকে অনেক অনেক টাকা ইনকাম করতে হবে । এই ছেলের হবু বউ ততদিনে ডজনখানেক প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বসে থাকে। এরপর যখন ছেলেটি ৩০-৩২ বছরে পা দেয় তখন যেন সবার নজরে আসে যে তাদের ছেলেটি বড় হয়েছে । এসময় সবাই ছেলেটিকে বিয়ে দিতে অস্থির হয়ে যায় ।
আর ততদিনে ছেলে বা মেয়েটার চরিত্র কতটা ঠিক আছে কেই বা জানে ??? কেই বা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবে ছেলে বা মেয়েটি যে নফসের তাড়নায় কারো দরজায় কড়া নাড়ে নি???
শারীরিক-মানসিক এই চাওয়া পূরণে তারা যে আগেই কোথাও সাময়িক ঢুঁ মারেনি তাইবা কে জানে?
বিয়ের পবিত্র অনুভূতিটা সে হারিয়ে ফেলে অনেক আগেই ।
আফসোস আমাদের অভিভাবকদের জন্য ।
তাদের কি এ অশ্লীলতা চোখে পড়ে না???
চোখে পড়েনা এখনকার ডিভোর্স রেট???
বিয়ের বয়সটা ছাত্রজীবনে রেখে বাবা মা আরো কিছুদিন (বিয়ের পরেও) ভরণপোষনের দায়িত্ব নিলে কি সমস্যা???
ছেলে ও মেয়ের চরিত্রের চাইতে লোকে কি বলবে সেটাই বড় বিষয় ???
# রাসূল (সা) বলেছেন, “মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে জিনা করে । দেখা হচ্ছে চোখের জিনা,ফুঁসলানো কণ্ঠের জিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের জিনা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের জিনা, কোনো অবৈধ উদ্দেশ্যে পথ চলা পায়ের জিনা, এভাবে ব্যভিচারের যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয়, তখন লজ্জাস্থান তার পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে’ (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)।
আজকাল ছেলেমেয়েরা ফোনে কথা বলছে, পার্কে বসে প্রেম করছে । তবু তারা কি শান্তিতে প্রেম করতে পারছে??? না, তাদের মনের মাঝে সবসময়ই এক অজানা ভয় কাজ করে । কিন্তু যদি তারা ছাত্রজীবনেই বিবাহের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতো তাহলে ছাত্রাবস্থায় এ জিনার হাত থেকে বেঁচে যেতো ।
তাই বলছি, ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিমজ্জ্বিত হবার আগে সন্তানদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত করে এগিয়ে নিয়ে আসুন। ৩০-৩২ বয়েসে ছেলেদের, ২৫-৩০ বয়সে মেয়েদের বিয়ে না নিয়ে তাকে যথাক্রমে ২২-২৫ এবং ১৮-২২ বছরে নামিয়ে আনলে সামগ্রিক ক্ষতি নেই।
পক্ষান্তরে, প্রস্তুত থাকুন নিজের সন্তানের অধঃপতন দেখার !!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:১৩