somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বিজ্ঞাপন : বাস্তবতার আয়নায়"

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টিভি দেখার সময় বিজ্ঞাপনে চোখ পড়ে না এমন লোক খুব কমই আছে । কারণ, টিভিতে যে কোন অনুষ্ঠান দেখানোর সময় যত সময় না অনুষ্ঠান সম্প্রচারে সময় ব্যয় করা হয়, তার চেয়ে বেশি সময় ব্যয় হয় বিজ্ঞাপন সম্প্রচারে । দেখা যায় নানান ধরনের, নানান জাতের, নানান পণ্যের বিজ্ঞাপন । তার ভিতর অনেক বিজ্ঞাপন আছে যেগুলো সৃষ্টি করে হাস্যরসের । তেমনি এক বিজ্ঞাপনের কাহিনীটা এরকম-

“নায়ককে বেঁধে রাখা হয়েছে শিকল দিয়ে । নায়িকা তার সামনে বসে চাবুক দিয়ে নিজের শরীরে আঘাত করছে । হঠাৎ করে নায়িকার পিছনে মেঝেতে আগুন লাগলো । নায়ক তা সহ্য করতে না পেরে শিকল ছিড়ে নায়িকার কাছে চলে আসলো । এবং এসে বারবার আগুনকে বলতে লাগলো, “আসিস নে আগুন আসিস নে”

হ্যাঁ, পাঠকবৃন্দ । হয়তো আপনারাও আমার সাথে এ বিষয়ে বলবেন আগুনকে এভাবে নিষেধ করলে তা কখনোই তার দহন প্রক্রিয়া থামাবে না । আর এভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আগুনকে জ্বলতে নিষেধ করা নেহাৎ বোকামি বৈ আর কিছু নয় ।

প্রশ্ন করতে পারেন, কেন এ উদাহরণ দিলাম ?
শিরোনাম :"মেয়েদের শালীন পোশাক পরতে বলে বিপাকে পুলিশ"
অনেকের চোখেই হয়তো পড়েছে খবরটি । ভারতীয় পুলিশ তাদের দেশে ধর্ষণ/ইভটিজিং বন্ধ করার জন্য কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করে:
#০১. শালীন পোশাক পড়া ।
#০২. ভিড়ের ভিতর বাসে/ট্রেনে না ওঠা
#০৩. পিপার স্প্রে কাছে রাখা ; ইত্যাদি ।
এরপরই ভারতের নারীবাদীরা ক্ষেপে যান । শুরু হতে তাদের প্রতিবাদ ।


বিধাননগরের বাসিন্দা শিপ্রা দাশ যেমন বিবিসি-কে বলছিলেন, ‘‘মেয়েদের উত্যক্ত করার ঘটনা পুলিশ ঠেকাতে পারবে না – আর দোষটা চাপানো হবে মেয়েদের পোশাক-আষাকের ওপর, এটা কেমন কথা?’’


মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখার্জি অবশ্য বলছেন – তারা এই নির্দেশিকার সঙ্গে কখনওই একমত ছিলেন না, বরং এই ধরনের ‘মধ্যযুগীয় পরামর্শ’ অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলেন।


তিনি বলেন, ‘‘দেখুন শালীন পোশাক বলে কিছু হয় না। পোশাক হয় প্রয়োজনমাফিক। মাঠেঘাটে, স্কুল-কলেজে বা কারখানায় যে মহিলারা কাজ করেন, প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের পোশাকও ভিন্ন ভিন্ন হবে। পুলিশকে সেটা বুঝতে হবে।

লক্ষ করুন এখানে দু”টি দিক রয়েছে ।
-পুলিশের প্রজ্ঞাপন জারি; এবং
-নারীবাদীদের প্রত্যাখ্যান ।
.................................................................................................
আসুন, প্রথম দিকের ব্যাখ্যায় যাওয়া যাক ।
পুলিশ ইভটিজিং ও ধর্ষণ ঠেকানোর জন্য যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে তা সত্যিই বাস্তবসম্মত ও প্রশংসার দাবি রাখে ।
কিন্তু কথা হচ্ছে, কোন সমাজের উপর জোর করে চাপিয়ে দিয়ে কোন আইন/বিধি-বিধান সে সমাজে টিকতে পারে না ।

কোন জিনিস কিভাবে চলবে, কিভাবে চালালে তার কোন ক্ষতি হবে না, কিভাবে চালালে জিনিসটি ভাল থাকবে সেটা সবচেয়ে ভালো জানে যে সেই জিনিসের আবিষ্কারক/সৃষ্টিকর্তা ।

মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ । মানুষের কিসে কল্যাণ আর কিসে অকল্যাণ সেটা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না ।
সেই মহান আল্লাহই মানুষের সীমাহীন ক্ষতি থেকে বাঁচার পথ বাতলে দিচ্ছেন এভাবে-

অর্থ : মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
(সূরা আন নূর:৩০)


মহান আল্লাহ নারীদের কল্যাণের পথটা নির্দেশ করলেন তার পরের আয়াতে কারীমায় ঠিক এইভাবে-

অর্থ : ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
(সূরা আন নূর:৩১)


অর্থাৎ যে সমাজ এ আয়াতে কারীমার বাস্তবায়ন ঘটাতে সক্ষম হবে তার জন্য পৃথিবীর কোন আইনের প্রয়োজন হবে না । কিন্তু যে সমাজ এ আয়াতে কারীমার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেদের স্বাধীনতা প্রদর্শন করে বেড়ায় তাকে আইনের ভয় দেখিয়ে বা প্রজ্ঞাপন জারি করে ধর্ষণ ও ইভটিজিং বন্ধের চেষ্টা সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গকে বালির বাঁধ দিয়ে আটকে রাখারই নামান্তর ।

অনেকে হয়তো বলবেন, ভারত তো অমুসলিম রাষ্ট্র । তাদেরকে টেনে আনার দরকার কি???

ভারতের এ উদাহরণ টেনে এনে বাংলাদেশ নামক মুসলিম রাষ্ট্রের কিছু মানুষকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যেই আমার এ লেখা ।

এবার আসুন দ্বিতীয় বিষয়টিতে আলোকপাত করা যাক ।

অর্থাৎ নারীবাদীদের প্রতিবাদের বিষয়টি ।

তাদের কথা হচ্ছে, পোশাক নাকি কোন ভাবেই ধর্ষণের জন্য দায়ী নয় । কত বড় মূর্খ হলে কেউ এ কথা বলতে পারে তা আমার জানা নেই ।

আমাদের যুব সমাজ যখন টিভির দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে তখন কি দেখে??? পণ্যের মান নাকি নারীদের যৌনলোলুপ ভাঁজগুলো ??? নিঃসন্দেহে তারা নারীদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দিকে নজর দেয় ।

কিছুদিন আগে বিশ্বকাপ ফাইনালের সমাপণী অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে একজন স্ট্যাটাস দিলো, “আমার কাছে খেলার চেয়ে শাকিরা ইম্পর্টেন্ট”

আমার মনে হয় না ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন আছে বা থাকতে পারে ।
আপনি চাচ্ছেন, কেউ আপনাকে ডিস্টার্ব না করুক, কেউ আপনাকে ধর্ষণ করুক কিন্তু আপনাকে ডিস্টার্ব করা বা ধর্ষণ করার সকল আয়োজন আপনিই করে দিচ্ছেন । এমতাবস্থায় ধর্ষণ থেকে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা কি বোকামি ছাড়া আর কিছু হতে পারে ??? এটা সেই বিজ্ঞাপনের মতই হয়ে গেল, যেখানে আগুন জ্বলে যাবার পর নায়ক আগুনকে মুখ দিয়ে নিষেধ করছে কাছে না আসার জন্য ।

একথা যদি আপনার কাছে বোকামি মনে হয়ে থাকে, তাহলে আপনি যখন টাইট জামা কাপড় পড়ে রাস্তায় বের হন, যখন পাতলা জামা ফিনফিনে জামা পড়ে শপিং মলে যান, যখন ফেসবুকে ঠোঁটে টককটকে লিপস্টিক দেয়া যৌন আবেদনময়ী ছবি আপলোড দেন,বাইরের পুরুষদের তরে যখন নাভি বা পিঠের প্রদর্শনী করে বেড়ানোর পরেও আপনি ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে চান তখন কি এটা আপনার কাছে বোকামি মনে হয় না???

মাছ ধরতে গিয়ে বড়শিতে টোপ দিতে হয় যেন তা মাছে আকর্ষণ করে এবং তা খেতে এসে শিকারীর হাতে ধরা পড়ে । এমন কোন মাছ নেই যা টোপ দেখে সসম্মানে সেই টোপকে এড়িয়ে চলে ।আপনি যখন সমাজে,রাস্তাঘাটে বের হবার সময় নাভি,বগল বা পিঠের প্রদর্শনী করার মাধ্যমে সমাজের যুবক মাছগুলোর সামনে টোপ ফেলেন মনে হয় না সেই মাছগুলো আপনার সেই টোপগুলোকে সসম্মানে এড়িয়ে চলবে ।

আপুদেরকে বলছি,
আপনারা যেটাকে স্মার্টনেস মনে করেন, যে বিষয়গুলোকে আপনারা আধুনিকতা মনে করেন, নিঃসন্দেহে সেগুলোই আপনাদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক । আপনারা আপানদের সম্মান বুঝে নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন ।
না, শুধু আপনাদেরকে দায়ী করছি না । অবশ্যই ছেলেদের দোষ আছে । কিন্তু ছেলেদেরকে দোষারপ করে নিজের দোষ ঢাকার অপপ্রয়াসটা মনে হয় না আপনার জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে ।

আপনারা তো বরাবরই বলে থাকেন যে, ছেলেরা খারাপ । কিন্তু সেই খারাপদের খারাপত্বকে আপনি যে অশ্লীল পোষাকের মাধ্যমে আরো উস্কে দিচ্ছেন সেটা কি আপনার বোধগম্য হয় না???

আপনি ভালভাবেই জানেন যে, বাঘ হিংস্র প্রাণী । একথা জানার পর কেউ যদি বাঘের সামনে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য দাঁড়ায় সেই বাঘটি যেভাবে ঐ ব্যক্তিটিকে ছিঁড়ে-কুঁড়ে খাবে, তেমনি আমাদের ইসলামিক জ্ঞানহীন যুবসমাজের সামনে যৌন আবেদনময় পোশাক পড়ে দাঁড়ালে তারাও ঐ নারীর সেই অবস্থা করবে ।

সুতরাং, এই ধর্ষণ বা ইভটিজিং নামক মহামারী থেকে বাঁচার জন্য ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলার কোন বিকল্প নেই ।

অন্যথা, সাধু সাবধান ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×