সেই স্বাধীনতার পর থেকেই ভূমি জরিপের কথা শুনলেই পাহাড়ী নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কেন ? সমতলে বারবার জরিপ হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে কেনো জরিপ করা যাবেনা,এটা একটা প্রশ্নই বটে। তবে কি পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের বাইরের কোন অংশ,যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন নিয়ন্ত্রন নেই। জরিপের নাম শুনলেই মাথা খারাপ হয়ে যায় পাহাড়ী নেতাদের। কারণটা শুনবেন ?
পাহাড়ী সাধারন মানুষ কখনই খবু বেশি কাগজপত্রের উপর নির্ভরশীল ছিলোনা। তারা সুদীর্ঘকাল পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে আসছেন। তাই দেখা গেছে মাত্র মাত্র পাঁচ লক্ষ পাহাড়ী তিন পার্বত্য জেলার ১৩২৯৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে ভোগ দখল করে আসছে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্যখানে। পাহাড়ীদের একটি অংশ যখণ শিক্ষায়-দীক্ষায় বৃদ্ধিমান হয়ে উঠে তারা তখন শুরু করে আরেক ধান্ধাবাজি। সাধারন পাহাড়ীদের সামান্য কিছু টাকা বা সুযোগ সুবিধা দিয়ে দখল নিতে থাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা জমি,পাহাড় এর। বুদ্ধিমান এই প্রজাতির পাহাড়ীরা কিন্তু ঠিকই জাতে মাতাল তালে ঠিক। সাধারন পাহাড়ীদের মতো এতো বোকা এরা নয়,তাই তারা ঠিকই নিজেদের জায়গাজমির কাগজপত্র করে নিয়েছে। ফলে অল্পদিনেই সাধারন পাহাড়ীদের মধ্যে ক্রমশঃ দরিদ্র হয়ে পড়া আর সুশীল পাহাড়ীরা (দেওয়ান,খীসা,তালুকদার,রায়) রা ফুলে ফেপে কলা গাছ হতে থাকে। তাদের সন্তানরা পড়াশুৃনা করতে যাওয়া শুরু দেশের বাইরে,আর সাধারন নিরন্ন পাহাড়ীর জীবনে কোন পরিবর্তন আসেনা,তাদের সন্তানদের জীবনসংগ্রাম চলতেই থাকে। ফলে দেখা যায়,পার্বত্য চট্টগ্রামের অভিজাত পাহাড়ীদের প্রায় সবার নামে শত শত একর জমি আছে,বৈধ এবং কাগজপত্র সহকারে। যদিও একক নামে নয়,সংসারের নানাজনের নানা নামে। কজনের নাম বলব ? কয়েকশত অভিজাত আছে এই তালিকায়। কিন্তু একটি রাষ্ট্রে একজনের বা এক পরিবারের কতটুকু ভূমি থাকতে পারে ??
সমস্যাটা এখানেই। ভূমি জরিপ হলেই বেরিয়ে আসবে থলের বেড়াল। পাহাড়ী নেতা যারা দীর্ঘকাল পাহাড়ে অশান্তি জিইয়ে রাখতে ভূমিকা রেখেছেন নানাভাবে,তাদের মুখোশ বেরিয়ে আসবে নগ্নভাবে। তাই ভূমি জরিপের নাম শুনলেই তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সরকার যখন বলে ‘ভূমি জরিপ করেই সমস্যার সমাধান হবে’তারা সেটাও মানেননা। আবার যখন সরকার বলল ঠিক আছে ‘বিরোধপূর্ণ ভূমি ছাড়া বাকী ভূমির জরিপ হবে’তারা তাও মানেননা। ঘটনা কি ? ওনাদের দাবী আগে বিরোধপূর্ণ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করেন,তারপর অন্যকিছু ! ১ লক্ষ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটারের দেশে আপনারা মাত্র ৫ লক্ষ মানুষ ১৩,২৯৪ বর্গকিলোমিটার (রাঙামাটি-৬১১৬ বর্গকিলোমিটার,খাগড়াছড়ি ২৬৯৯বর্গকিলোমিটার,বান্দরবান-৪৪৭৯ বর্গকিলোমিটার,যা দেশেল মোট আয়তনের এক দশমাংশ প্রায় ) দখল করে বসে থাকবেন,এটা কে মানবে ?? এটা কি মগের মুল্লুক ??? সারাদেশের ১৫ কোটি মানুষ ব্যবহার করবে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার,আর পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫ লক্ষ পাহাড়ীর জন্য ১৩,২৯৪ বর্গকিলোমিটার !!! (মালদ্বীপের আয়তন ২৯৮ বর্গকিলোমিটার,জনসংখ্যা-৩৯৬,০০ জন)।
পাহাড়ে সবাই মিলেমিশে থাকুক,ভূমি জরিপ হোক,ভূমিদস্যুদের উৎখাত করা হোক,ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হোক,জেএসএস-ইউপিডিএফ-সমঅধিকার নিপাত যাক-এটাই সবার প্রত্যাশা। আর পাহাড়ীদের প্রতি যেনো কোন অন্যায় না হয় সেই নিশ্চয়তাও দিতে হবে রাষ্ট্রকে। আর পাহাড়ীদেরও মনে রাখতে হবে,কোন প্রকার বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়,দেশকে ভালোবেসেই গনতান্ত্রিকভাবে লড়াই করেই অর্জন করতে হবে নিজের অধিকার। বেশি পেতে চেয়ে,সব হারানোর ঝুকি কোন বোকা নিয়েছে কোনকালে ???