somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য চট্টগ্রাম : সামাজিক ইস্যু’র রাজনৈতিক অবরোধ !

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সারাদেশে হঠাৎ করেই যেনো বেড়ে গেছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। যুগে যুগে নারীরা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর,গার্হস্থ্য জীবন থেকে কর্মক্ষেত্র সর্বত্রই যৌন নিপিড়নের শিকার হচ্ছে,নানাভাবে,নানা কৌশলে। কিন্তু আগে মানুষ শিক্ষা দীক্ষায়,সচেতনতায় পিছিয়ে ছিলো,এখন শিক্ষা ও সচেতনতার হার বাড়লেও আশ্চর্য্যজনকভাবে নারী নির্যাতনের ঘটনা যেনো কমছেইনা। নারী নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনাই একটি জাতি,একটি সমাজের জন্যই অত্যন্ত লজ্জাকর ও দুঃখজনক ঘটনা। তাইতো বিবেকবান মানুষেরা যুগে যুগে প্রতিবাদ করে আসছে নারী নির্যাতনের ঘটনার। এখনো এই দুঃসময়ে অজ¯্র শুদ্ধ চিন্তার মানুষ একযোগে প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে। দিল্লি থেকে টাঙ্গাইল তেঁতুলিয়া থেকে পার্বত্য রাঙামাটি সর্বত্রই শুভবোধ সম্পন্ন মানুষ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামছে,মাঠে আছে। হয়তো ভবিষ্যতেও এই লড়াইয়ে তাদের সবাইকে যূথবদ্ধভাবে মাঠেই থাকতে হবে। জয়ী হতে হবে মানুষরূপী হায়েনাদের বর্বরতার বিরুদ্ধে।

সারাদেশের আরো ৬১ টি জেলার মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাও বাংলাদেশের মানচিত্রের অংশ। এখানকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি পুরো দেশকেই সমৃদ্ধ করেছে। যেহেতু এই অঞ্চল বাংলাদেশেরই অংশ সেহেতু নারী নির্যাতনের ঘটনা এখানেও ঘটছে। এখানেও সারাদেশের মতো নারী নির্যাতনের ঘটনা স্বাভাবিক কারণেই কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এখানেও তাই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাই মাঠে নামে,প্রতিবাদ করে,বিক্ষোভ করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো,এখানে প্রতিবাদ হয়,ধর্ষিতা বা লাঞ্চিতার জাতিগত পরিচয় ভেদে,পরিচয় জেনেই নির্ধারিত আন্দোলন বা কর্মসূচীর মাত্রা।

নারীর উপর নির্যাতন বাংলাদেশের অন্যতম একটি সামাজিক সমস্যা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এই ইস্যুটিকে রাজনীতিকরণ করা হয় বরাবরই। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অপহৃত নারীনেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ ও নিখোঁজ হওয়ার মতো দুঃখজনক ঘটনাগুলো হয়তো রাজনৈতিক,কিন্তু এর বাইরে অজ¯্র ঘটনা,যা সামাজিক অপরাধের আওতায় পড়ে,তা নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি পার্বত্য চট্টগ্রামে বরাবরই হয়েছে,এখনো হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য,পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতন নিয়ে কিছু কথিত নারী নেত্রী ও সংগঠন এমন প্রচারণা চালায় যে,যে কারো মনে হতেই পারে,এই এলাকায় শুধুমাত্র পাহাড়ী নারীরাই ধর্ষিতা হয় বা নির্যাতিত হয়। অথচ পরিসংখ্যা বলছে ভিন্ন কথা। পাহাড়ের রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ এর সম্প্রতি দেয়া এক গবেষনা প্রতিবেদন বলছে,২০১২ সালে পার্বত্য তিন জেলায় ২৫ জন নারী ধর্ষিতা হয়েছেন এর মধ্যে ১৭ জন পাহাড়ী এবং ৮ জন বাঙালি। গবেষনা প্রতিবেদন বলছে,ধর্ষনের ঘটনাগুলোতে ধর্ষকদের মধ্যে পাহাড়ী ও বাঙালী উভয়ই আছে। প্রশ্ন হলো,যারা পাহাড়ে নারী নির্যাতন নিয়ে গলা ফাটায় তারা শুধু পাহাড়ী নারী নির্যাতনের কথা কেনো বলবে ? নারী তো নারী’ই। তার আবার পাহাড়ী বাঙালী কি ? তাহলে কি প্রতিবাদকারীদের সততাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়না ?
সবচে আশ্বর্য্যরে বিষয়,নারী নির্যাতন ইস্যুতে হঠাৎ করেই এই নারী নেত্রীদের একাংশ তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধ ডেকে বসেছেন ! ইস্যু কি ? থুমাচিং মারমা..। কাউখালি উপজেলা বর্বর হায়েনাদের বর্বরতার শিকার নিরীহ এই স্কুল ছাত্রীর হত্যাকান্ড যেকোন বিবেকবান মানুষকে কষ্ট দিবে। শুধু কি থুমাচিং ? এর আগে সুজাতা বা বলিমিলা ধর্ষন ও হত্যাও একই রকম যন্ত্রনাদায়ক। কিন্তু আজ যারা অবরোধ ডেকেছেন,তাদের জন্য করুনা হচ্ছে,কারণ সম্প্রতি জুড়াছড়িতে কঠিন চীবর দানোৎসবে যাওয়ার সময় ধর্ষিতা দুই কিশোরী এবং নানিয়ারচরে বৌদ্ধ বিহারের ভেতরে চারবছরের শিশুকণ্যা ধর্ষণের পর এই নারীবাদীরা চুপ করে ছিলেন,কোন আওয়াজ ছিলোনা। কারণ কি জানেন ? কারণ,ওই ধর্ষকদের একটি জাতিগত পরিচয় আছে! ওদের বিরুদ্ধে কথা বললে তো খবর আছে ! আর রাজনীতিও তেমন জমেনা।

বাংলাদেশের কোথাও এর আগে কোন ধর্ষন ঘটনার জন্য অবরোধ দেয়ার নজির আছে কিনা জানিনা। পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে এই ধরণের অবরোধ কতটা ধর্ষনের প্রতিবাদে তা নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যেও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যখন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সকল ধর্ষন ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে যূথবদ্ধভাবে,পাহাড়ী-বাঙালী,জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে একযোগে প্রতিবাদ প্রয়োজন,তখন রাজনৈতিক কৌশলে এবং ব্যক্তিস্বার্থে অবরোধ কর্মসূচী দিয়ে যারা সরকার নয়,বিদেশী প্রভূদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চায়,যারা ঘন ঘন বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি আগামী কয়েক বছরের জন্য নিশ্চিত করতে চায়,তাদের জন্য করুনা ছাড়া কিইবা করার আছে। তাদের ভুলে গেলে চলবেনা,বিদেশী প্রভুরা,এই দেশে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে পারবেনা,এর জন্য প্রয়োজন মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও শুভবোধ জাগ্রত করা। আর তা করার জন্য অসৎ মানসিকতা ভেতরে পুষে রাজনৈতিক হরতাল নয়,এনজিওদের ‘ব্যবসাকেন্দ্রিক’ নারী আন্দোলন নয়,চাই সত্যিকারের সামাজিক আন্দোলন। সমতল থেকে পাহাড়ে,সর্বত্রই বন্ধ হোক নারী নির্যাতন,নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা।




০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×