somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদিতি (প্রথম পর্ব)

২৬ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বেশ কিছুদিন ধরে আমার সাথে অদ্ভুত কিছু ঘটছে। কিছু অচেনা অজানা লোকের মুখোমুখি হচ্ছি। তাদের দাবি তারা আমাকে চেনে কিন্তু আশ্চার্যের বিষয় আমি তাদের একদম চিনতে পারছি না। নিজের স্মৃতি শক্তির উপর আমার সবসময় আত্মবিশ্বাস ছিলো। আমি চাইলে অনেক পুরানো ঘটনাও মনে করতে পারি। দিন ক্ষন মাস গুনে বলে দিতে পারি সেই সময়ের ঘটনা। এমন কি ঘটনার পাত্র পাত্রি কি ধরনের কাপড় পরে ছিলো তাও অনেকাংশে হুবাহু বলে দিতে পারি। কিন্তু হঠাত করে সম্ভাবত আমার স্মৃতিভ্রম হচ্ছে। আমি এদের কাউকেই মনে করতে পারছি না। কিন্তু এরা আমাকে মনে রেখেছে। মানুষিক দ্বন্দে আমি ঘর থেকে বাহির হতে পারছি না। কেবলি মনে হয় বাহিরে গেলেই কেউ পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলবে, কি রে দোস্ত কেমন আছিস? প্রতিউত্তরে ভালো আছি না বলে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে থাকা ছাড়া আমার কোন উপায় নাই। কারন যে আমাকে দোস্ত বলে আপন করে পরম মমতায় ডাকলো তাকে আমি একদম চিনি না। কেউ হয়তো বলবেন মমতা দিয়ে যে ডেকেছে বুঝলেন কি করে, ঠাট্টা বা তিরষ্কার করেও ডাকতে পারে। যুক্তি সত্য কিন্তু একজান মানুষের চোখ ও তার গলার শব্দ তার ভেতরকার অনুভূতিকে প্রকাশ করে দেয়। আমি সেই সব মানুষের চোখে একধরনের মমতা আর আকুলতা দেখেছি যা হারিয়ে যাওয়া বড্ড আপন কেউ খুঁজে পেলে দেখা যায় ।


বেশকিছু দিন হলো আমি বাড্ডার বাসায় একা থাকছি। বাসার সবার সাথে অভিমান করে আমি আলাদা থাকবো বলে বাড্ডায় চলে এসেছি। একা মানুষ অথচ তিন রুমের পুরানা স্টাইলের এক বিশাল বাড়ি আপাতত দখল করে বসে আছি। বাসা থেকে আম্মা লোক পাঠিয়েছিলো ফিরে যাবার জন্য। অভিমানের মাত্রাটা একটু জোড়ালো হওয়ায় ফির যাই নাই। একজন কাজের মহিলা আছেন তিনি ঘরদোর পরিষ্কার করে দেন সেই সাথে ভাত ডাল জাতীয় রান্না কর দেন। অবশ্য ওতেই আমার চলে যায়। আমি খাদ্য রসিক কিন্তু রাক্ষস প্রজাতির না। অল্প আহারেই আমি তুষ্ট। যে মহিলা আপাতত রান্না ও ঘর গোছানোর দায়িত্বে আছেন তার নাম আমিরুনের মা। সম্ভাবত তিনি অসম্ভব মাত্রায় হাত টান দোষে দুষ্ট নতুবা তিনি সব কিছুই নিজের মতো করে নিজের কাছে রাখতে পছন্দ করেন। আমি দুই টিন বিস্কুট এনেছিলাম গতো পাঁচদিন হলো। এরমধ্যে এখন দেখি এক টিন শেষ বাকি টিনের অর্ধেক খালি। আমিরুনের মা কে কিছু না বলে বাকি অর্ধেক খালি টিনটা আমার রুমে এনে রাখলাম। বিকেলে দেখি আবার ওটা রান্না ঘরে ফেরত গেছে এবং আগের থেকে খালির পরিমান বেড়ে গেছে। ভাবছি আমিরুনের মা কে ডেকে জিজ্ঞাসা করবো বিস্কুটের টিনের পা গজালো কি করে ? বয়ষ্ক মানুষ তাকে কিছুই বলা যায় না। বললেই তাকিয়ে একটা হাসি দেয় যে হাসি খানা যথেষ্ট শিশু সুলভ । কোন ভাবেই ওমন হাসির পরে কারু কে কিছু বলা যায় না ।

ঘটনার শুরু সাতদিন আগে থেকে। আমার চশমার কাঁচ ফেটে গেছে। ফাটা কাঁচ নিয়েই চলছিলাম কিন্তু কোন এক অজানা কারনে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চশমার অর্ধেক কাঁচ ফ্রেমে ঝুলে আছে বাকি অর্ধেক হাওয়া। অথচো ঘুমাতে যাবার আগে আমার স্পস্ট খেয়াল আছে আমি ভাংগা কাঁচ দুটকে এক সাথেই দেখেছিলাম। সকালে দেখি দুই কাঁচের একজন সাথি হারা হয়ে আছে। সমস্ত ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বাকি সাথি কাঁচ কে পেলাম না। চশমা ছাড়া আমি দুই ফুট দুরত্বের কিছুই দেখতে পাই না। হাতড়ে হাতড়ে চলতে হয়ে। বিশাল বিপদে পরে গেলাম। একজন অন্ধ সে চোখে দেখে না কিন্তু সে একটা উপায় বের করে নেয় চলাচলের জন্য কিন্তু যে হাল্ফ কানা তার অবস্থা হয় না ঘর কা না ঘাট কা। আবছা আবছা ঘোলাটে একটা অদ্ভুত দৃশ্য চোখের সামনে ঝুলাতে ঝুলাতে বাড়ির পাশের চশমার দোকানে গেলাম চশমার কাঁচ লাগাতে। দোকানি চশমা নেড়ে চেড়ে বললো, কাল রাত্রে একজন আসছিলো সম্ভাবতো এর বাকি অর্ধেক নিয়ে দাম কতো জিজ্ঞাসা করলো । আমি হাসি দিয়ে বললাম, বয়স্ক এক মহিলা। মাথা নেড়ে জানালো হ্যা বুড়ি এক মহিলা । দাম নাই শুনে ফেলে রেখে চলে গেছে , আমার কাছেই আছে। আমি বললাম ঠিক আছে ওটা আপনার কাছেই রেখে দিন আমাকে নতুন এক জোড়া কাঁচ বানিয়ে দিন । দোকানি চশমার পাওয়ার চেক করে বললো কাল আসতে। কিন্তু আমার কাল আসলে হবে না আজি দরকার। দোকানি লোকটা মুখে একটা অদ্ভুত বুড়বুড় জাতীয় শব্দ করে বললো বসেন তিন ঘন্টা লাগবে নতুন কাঁচ বানাতে। নিরুপায় হয়ে বসে রইলাম। চোখের সামনে দেও দানবের নড়াচড়া আর ছায়া ছাড়া কিছুই দেখছি না। মুহুর্তটা খারাপ না। কেউ এসে দুই থাপ্পর দিয়ে পকেট মেরে দিলে চেনার উপায় থাকবে না। পকেট মারার কথা মনে হতেই চিন্তায় পরে গেলাম টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছি কি না। আমি অনেক সময় টাকা পয়াসা না নিয়েই বের হয়ে যাই। যার ফলাফল দ্বীর্ঘ রাস্তা হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে পৌছাতে হয়। পকেট হাতড়ে সন্তুষ্ট হলাম টাকা নিয়েই বাসা থেকে বের হয়েছি।

তিন ঘন্টা পর চশমা ঠিক করে চোখে দিয়ে শান্তি ফিরে পেলাম। বাহিরের সব দৈত্য দানব চশমার কেরামতিতে মানুষ রুপে আবির্ভুত হলো। মনে মনে খুশি হয়ে ভাবলাম আজ একটু রমনা যাই। অনেকদিন গাছের সাথে যোগাযোগ করছি না। ওরা কেমন আছে ঠিক মতো খান খাদ্য খায় কি না জানা উচিত। হঠাত পেছন থেকে মোটামুটি বড়সর চরের মতো একটা কিছু এসে পিঠে পরতে মনে মনে ওরে বাবা বলে পেছন ফিরে তাকাতে সম্পুর্ন অচেনা এক লোক কে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। হাল্ফ হাতার গেঞ্জি আর লুংগি পরা, হাতে বাজার। আমাকে বাজার সহো জড়িয়ে ধরলো। দোস্ত কেমন আছিস, কতো দিন পরে দেখা। ডাটাশাক আর লাউয়ের লতার মধ্যে আমার মুখ ডুবে গেলো। তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হাসি মুখে বললাম, দুঃখীত আপনার ভুল হচ্ছে আমি আপনাকে চিনি না। লোকটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাসা করলো, তুই মানে আপনি রতন না? আমি মাথা নেরে উত্তর দিলাম, জ্বী আমি রতন কিন্তু আপনাকে চিনতে পারছি না। লোকটা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে থমকে গেলো। আমি লোকটার দিকে মৃদু হাসি দিয়ে উলটা ঘুরে হাটা দিলাম। পেছন থেকে অচেনা লোকটা বলে উঠলো শালা রত্না, তুই আমারে চিনতে চাইবি না এটা আমি আগেই জানতাম, আগেও তুই স্বার্থপর ছিলি এখনো আছিস, তুই বদলাবি না। আমি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ঘুড়ে তাকালাম লোকটাকে কঠিন কিছু বলতে চাচ্ছিলাম এর ফাঁকে লোকটা বলে উঠলো, আদিতি কই, কবে বিয়ে করলি জানালিও না। শালা প্রেম করার সময় এই শফিক কে দরকার ছিলো এখন আমাকেই মনে নাই, তোর বাসা কোথায় বল, আমি যাবো, আদিতি আমাকে ভুলবে না আমি নিশ্চিত। লোকটার জন্য মায়া হলো। আমার মোটামুটি ধারণা হলো যে সে তার কোন বন্ধুর সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলেছে । আমি এগিয়ে গিয়ে তাকে ঠান্ডা মাথায় বললাম, ভাই আমি রতন এটা ঠিক আছে কিন্তু আমি না আপনার পুর্ব পরিচিত , না আপনার কি যেন নাম অদিতি হ্যা অদিতির পরিচিত । লোকটা বিস্ফোরিত চোখে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো , শেষ পর্যন্ত তুই অদিতিকেও ধোঁকা দিলি । লোকটার হাত থেকে বাজারের ব্যাগ পরে গিয়ে আলু পটল ডাটা শাক সব গড়াগড়ি খেতে লাগলো। কি যে এক মুছিবতের মধ্যে পরলাম । আশেপাশে লোক জড়ো হবার আগেই কেটে পরলাম । পেছন থেকে শুনতে পেলাম লোকটা চিৎকার করে বলছে , পালাচ্ছিস তো ! পালা ! শালা বেইমানের বাচ্চা বেইমান তোরে আমি ঠিকি খুঁজে নেব । আমি তোকে ছাড়বো না। হালকা মাথা ঘুড়িয়ে দেখলাম হাত বাতাসে নাড়িয়ে নাড়িয়ে আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে । আমি যতোটা সম্ভব দৌড়ে গলির বাহিরে চলে এলাম ।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২৩ রাত ১১:১৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিরে দেখা ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের প্রতি একটি সতর্ক বার্তা

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০০

অতীতে গরুর মাংসে হাড় বেশি হওয়ার জের ধরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে দেখেছি,
.
ও ভাই মুজে মারো মুজে মারো নেহি মাজাক হ রাহে
.
ঢাল-সড়কি,টেঁটা-বল্লম, গুলতি, লাঠিসোটা, ইট পাটকেল নিয়ে তারা দলে দলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা কেন শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করলো?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১১



ব্লগে কে কে বলেন, আমেরিকা শেখকে হত্যা করেছে? খুব বেশী ব্লগার ইহা বলেন না; তারা শেখের দুর্নীতি, আওয়ামী লীগের দোষ টোষ নিয়ে বলেন যে, কিছু বিপথগামী সৈনিক শেখকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গড়ে উঠুক ধর্মীয় সম্প্রিতীর মিলন মেলা

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৩


ধর্মের নামে একি রক্তের খেলা চেতনাহীন উন্মত্ত মঞ্চে
বিবেকের প্রদীপ যেন নিভে যাচ্ছে অদৃশ্য ঘন কুটচালে
শতাব্দীর সঞ্চিত মানবতার দীপ্যমান শিখা
অন্ধকারের আবরণে ঢেকে দিচ্ছে সম্প্রিতীর গৌরব গাথা।

গোপন লালসার দাবানলে পুড়ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় বিএসএফের বর্বরতা: পঞ্চগড় সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২১

আরেকটি নিরীহ প্রাণের বলিদান

আবারও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের সীমান্তে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আনোয়ার হোসেন নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা এলাকাবাসীর মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৭

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

এতো সোজা!
চাইলেই কেউ কোনো দেশ দখল করে নিতে পারে না- তা সে যতই শক্তিধর দেশ হোক। বড়ো, শক্তিশালী রাষ্ট্র হলেই যদি ছোট এবং দুর্বল দেশকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×