" দি জুয়েল অব মদিনা” বই নিয়ে সারা বিশ্বের মুসলমান একযোগে জেগে উঠেছে। কিন্তু এর মধ্যে কয়জন “ইফকের ঘটনা” সম্পর্কে অবগত আছে সেই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। তাই আমি স্বল্প পরিসরে সেই অপবাদের কাহিনী বর্ননা করছি।
বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে এই ঘটনাটি দীর্ঘ ও বিস্তারিত আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। ষষ্ঠ হিজ্রীতে যখন নবীজি বনী মুস্তালিক নামান্তরে মুরায়সী যুদ্ধে গমন করেন, তখন বিবিদের মধ্যে আয়েশা সাথে ছিলেন। ইতোপুর্বে নারীদের পর্দার বিধান অবতীর্ন হয়েছিলো। তাই আয়েশার উঠের পিঠে পর্দাবিশিষ্ট আসনের ব্যবস্থা করা হয়। আয়েশা প্রথমে পর্দাবিশিষ্ট আসনে সোয়ার হয়ে যেতেন। এরপর লোকেরা আসন টিকে উঠের পিঠে বসিয়ে দিতো। এটাই ছিলো নিত্যকার অভ্যাস।
যুদ্ধ সমাপ্তির পর মদিনায় ফেরার পথে একটি ঘটনা ঘটলো। এক মঞ্জিলে কাফেলা অবস্থান করার পর শেষ রাত্রে প্রস্থানের কিছু পূর্বে ঘোষনা করা হয় যে , কাফেলা কিছুক্ষনের মধ্যে এখান থেকে রওয়ানা হয়ে যাবে। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজ নিজ প্রয়োজন সেরে প্রস্তুত হয়। আয়েশার তখন প্রকৃতিত ডাকে সারা দেওয়ার ইচ্ছে হয়। তিনি জংগলের দিকে চলে গেলেন।সেখানে ঘটনাক্রমে তার গলার হার ছিড়ে গিয়ে হারিয়ে গেলো। তিনি সেই হার খুজতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।। বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো। আয়েশা স্বস্থানে ফিরে এসে দেখলেন যে , কাফেলা রওয়ান হয়ে গেছে। রওয়ানা হওয়ার সময় আয়েশার পর্দা বিশিষ্ট আসনটিকে যথারীতি উঠের পিঠে সোয়ার করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাহকরা মনে করেছে যে , তিনি ভেতরেই আছেন। উঠানোর সময় ও সন্দেহ হয়নি তাদের। কারন তিনি তখন অল্প বয়স্কা ক্ষীণাংগিণি ছিলেন। ফলে আসন টি যে শুন্য - এরুপ ধারনা ও কারো মনে আসেনি।
আয়েশা ফিরে এসে যখন কাফেলাকে পেলেন না, তখন অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও স্থির চিত্ততার পরিচয় দিলেন এবং কাফেলার পশ্চাতে দৌড়াদৌড়ি করা কিম্বা এদিক ওদিক তালাশ করার পরিবর্তে স্বস্থানে চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে রইলেন। তিনি মনে করলেন যে, নবীজি ও তার সংগি গন যখন জানতে পারবেন যে, আমি আসনে অনুপস্থিত, তখন আমার খোঁজে তারা এখানে আসবেন। কাজেই আমি এদিক ওদিক চলে গেলে তাদের জন্য তালাশ করে নেওয়া কঠিন হবে। তাই তিনি স্বস্থানেই চাদর গায়ে বসে রইলেন। সময় ছিলো শেষ রাত্রি তাই কিছুক্ষনের মধ্যেই তিনি নিদ্রার কোলে ঢলে পড়লেন।
অপরদিকে সাফওয়ানকে নবীজি এ কাজের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন যে, তিনি কাফেলার পশ্চাতে সফর করবেন এবং কাফেলা রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর কোন কিছু পড়ে থাকলে তা কুড়িয়ে নেবেন। তিনি সকাল বেলায় সেখানে পৌছলেন। তখন পর্যন্ত প্রভাত হয়নি। তিনি শুধু একজন মানুষকে নিদ্রামগ্ন দেখতে পেলেন। কাছে এসে আয়েশাকে চিনে ফেললেন। কারন পর্দাপ্রথা অবতীর্ন হওয়ার পূর্বে তিনি আয়েশা কে দেখেছিলেন। চেনার পর অত্যন্ত বিচলিত কন্ঠের সাথে তার মুখ থেকে “ইন্না লিল্লাহে অয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” উচ্চারিত হয়ে গেলো। এই বাক্য আয়েশার কানে পড়ার সাথে সাথে তিনি জেগে উঠলেন এবং মুখমন্ডল ঢেকে ফেলেন।
সাফওয়ান নিজের উট কাছে এনে বসিয়ে দিলেন। আয়েশা তাতে সওয়ার হয়ে গেলেন এবং নিজে উটের নাকের রশি ধরে পায়ে চলতে লাগলেন। অবশেষে তিনি কাফেলার সাথে মিলিত হয়ে গেলেন।
আমারব্লগে পুর্বে প্রকাশিত।