হোসেন আলী রাজনীতি করে। তবে সে নিজে বলে, সে দ্বিনের কাজ করে। তার দল ইসলামী হুকুমতের জন্য কাজ করছে। এটা কি রাজনীতি হলো? এ হচ্ছে দ্বিনের কাজ। এই কাজে শামিল হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। আখিরাত নিরাপদ রাখার জন্য দ্বিনের কাজের বিকল্প নাই। আল্লাপাক কোরআনপাকে বলেছেন, যে আল্লাহ পথে নিজের জানমাল বিলিয়ে দেয় পরকালে আল্লাপাক নিজ হাতে তাকে পুরুষ্কৃত করবেন...।
হোসেন আলীর মাল নাই জান আছে। সে গরীব মানুষ। ছোটখাটো ব্যবসা করে খায়। প্রয়োজনে সে সেটাই বিলিয়ে দিবে ইনশাল্লাহ! তার বুকটা ভরে যায় যখন দেখে কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষিত পোলাপানগুলোও তাকে অশিক্ষিত বলে অবহেলা না করে ‘সাথী’ হিসেবে নিজেদের সমান মনে করে। এইসব পোলাপানের সঙ্গে যখন সে কাজ করে তখন গর্বে তার বুকটা ফুলে উঠে। ইসলাম যে ধনী গরীব এক করে দেখে তাদের পার্টির মধ্যে না আসলে এটা বুঝবে না কেউ। এই জন্যই ইসলামী শাসন দরকার। আর এই ইসলামী শাসন একমাত্র তাদের পার্টিই দিতে পারে। দেশে তো আরো ইসলামী দল আছে, কিন্তু তারা সহি ইসলামী দল না। এরা মুখে খেলাফতের কথা বলে কিন্তু তলে তলে দুনিয়াবী শাসনতন্ত্রের পক্ষে কাজ করে। এরাই আসন্ন খেলাফতকে বাধাগ্রস্ত করছে। এরাই কৌশলে ইহুদী-নাসারাদের শাসন জিইয়ে রাখছে। বড়ই আফসোসের কথা যে, এরা যতটা ইসলামের ক্ষতি করছে ততটা নাস্তিকরাও করতে পারেনি...। সেদিন দুঃখ করে এই কথাগুলোই বলছিল তাদের আমির সাহেব।
আমির সাব মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। এমন শিক্ষিত আলেম মানুষ যখন কাঁধে হাত রেখে হোসেন আলীর মত লোকের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলে তখন বড়ই শরমিন্দা লাগে নিজের কাছে। শরীরটা কুঁকড়ে যেতে থাকে হুজুরের স্পর্শে। এই সমস্ত বড় মানুষের সঙ্গে চলাফেরা হোসেন আলী যদি একবার ঘরের মেয়েছেলেদের দেখাতে পারতো তো একটা কাজের কাজ হতো। মেয়েছেলেগুলো তখন বুঝতো হোসেন আলী ফেলনা না। অকাজেও দৌড়াদৌড়ি করে না। দোকান ফেলে মিটিংয়ে যায় বলে বাড়িতে বউ চিল্লাচিল্লি করে। হোসেন আলীর কাটা কাপড়ের ব্যবসা। পার্টি এসে ফেরত যায় দোকান বন্ধ থাকে। তাকে মাঝে মাঝে সফরে যেতে হয় সাথী ভাইদের সঙ্গে। তখন এক রাত বাইরেও থাকতে হয়। ফিরে আসার পর বাড়িতে হয় হাঙ্গামা। বউ গলার রগ খাড়া করে ঝগড়া করে। মেয়েছেলে হচ্ছে শয়তানের লাঠি! ইসলামকে নিয়াও আজেবাজে কথা বলতে এরা দ্বিধা করে না। বলে, ইসলাম দিয়া কি আমি ধুইয়া পানি খামু! মাস গেলে সুদ টানতে হয় যার সে আসছে ইসলাম মারাইতে...!
মেয়েছেলের চোপার সঙ্গে পারা পুরুষ মানুষের কাজ না। তাই ধরে ঠেঙাতেই হয়। চুলের মুঠি ধরে মাগীরে দুই-চাইরটা মারলে শইলের জিদটা যদি মিটে। আজ সকালেই দিছিলো একচোট। কিন্তু ওমনি ধুম করে মার পক্ষ নিয়ে মেয়ে ফস্ করে বলে বসল, আব্বা মারবেন না খবরদার!
হোসেন আলীর চোখ কপালে উঠে গেলো মেয়ের কথা শুনে। হাত থেকে স্যান্ডেল পড়ল খসে। চোখ দুটো বড় বড় করে চেয়ে রইল মেয়ের দিকে। এই সেদিনও যে মেয়ে ফ্রক পরে ঘুরতো আজ সে পূর্ণ যুবতী। বিয়ের ঘর আসছে এখান সেখান থেকে। ভাল পেলে দিয়ে দিবেন। মেয়ের আস্পর্দা দেখে তো হোসেন আলীর আক্কেল গুড়–ম। বলে কি মেয়ে! বাপের মুখে মুখে কথা!
সব টেলিভিশনের কাজ! টেলিভিশন দেখে দেখে এইসব শেখে এরা। সেদিন একটা নাটকে দেখালো বউ স্বামীর গালে থাপ্পর মারতাছে! হোসেন আলী তো তাজ্জব এই দৃশ্য দেখে! এইসবই দেখে এরা শেখে। ঘরে একটা টিভি আছে। এই শয়তানের বাক্সটাকে বিদায় করতে কম চেষ্টা করে নাই হোসেন আলী। আল্লারসূলের ভয় দেখাইছে। হাদিস শুনাইছে। কিন্তু বজ্জাত মা-মেয়ে তা কানে তুললে তো। শয়তানের বাক্সটা এবার যে করেই হোক বিদায় করতে হবে। এর মধ্যেই এটা যথেষ্ঠ ক্ষতি করে ফেলছে। বাপের মুখে মুখে কথা! এসব নাটক দেখেই শিখছে।
বাড়ি থেকে ঝগড়া করে এসে যেদিন দোকানে খুলে সেদিন বিক্রি-বাট্টা খুব খারাপ যায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক টাকার মালও বেচতে পারেনি হোসেন আলী। মন-মেজাজ খুব খারাপ। ব্যবসার জন্য এক মাল্টি পারপাস সমিতি থেকে তিরিশ হাজার টাকা লোন নিয়েছিল ডেইলি পাঁচশো টাকা কিস্তিতে। সমিতির ছোকরাটা এসে টাকার জন্য আজ ঝগড়া করে গেছে। সাতদিনের টাকা বকেয়া পড়ে আছে। কাল টাকা না দিলে সমিতি থেকে লোকজন আসবে বলে হুমকি দিয়ে গেছে। ছোকরার ত্যাড়া কথা শুনে মারতে উঠেছিলো হোসেন আলী। পাশের দোকানের লোক এসে না থামালে কি হতো বলা যায় না। এর মধ্যে এক পার্টির কাছ থেকে নগদ টাকায় মাল কিনে দেখে মাল সব ভেজা, চায়ের দাগের মত দাগ কাপড়ে গায়ে, এই মাল পয়সা দিয়ে কেউ কিনবে? সাত হাজার টাকার মাল এখন দুই হাজার টাকাও বেচা যাবে না। ছোট ছোট হোসিয়ারী ফ্যাক্টরিগুলো তাদের মত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ছোট ছোট টুকরা গেঞ্জির কাপড় কিনে নিয়ে যায় বাচ্চাদের জাঙ্গিয়া, গেঞ্জি তৈরি করার জন্য। যাদের পুঁজি আছে তারা ভাল ব্যবসা করে। হোসেন আলীর টাকা নাই। ভাল মাল কিনতে পারে না। বাজারে অনেক দেনা হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে খুব খারাপ সময় যাচ্ছে তার।
জোহরের নামায পড়ে দোকান বন্ধ করে বাড়ি খেতে যাবে এমন সময় পার্টির দুটো ছেলে এলো। হোসেন আলী তাদের নিয়ে ফের দোকানে বসল। নিচু গলায় কিছুক্ষণ পরস্পর আলোচনা করলো। তারপর খুবই ব্যস্ততার সঙ্গে ছেলে দুটোর সঙ্গে বেরিয়ে পরল। বাড়িতে আর খেতে গেলো না। বৃহস্পতিবার তাগাদার দিন, খরিদদারের কাছে পাওনা টাকা আদায় করার কথা, হোসেন আলী তাগাদা-টাগাদা বাদ দিয়ে বেরিয়ে পরল। সেদিন বাড়ি ফিরলো রাত দশটায়। পরদিন শুক্রবার বিকাল তিনটায় বাইতুল মোকারমের সামনে মিটিং আছে। সেই মিটিং সফল করতে কর্মীসভা ছিল। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কাফনের কাপড় মাথায় বেধে আসতে সবাইকে। সরকারের কোরআন-সুন্না বিরোধী আইন বাতিলের লক্ষ্যে ‘কোরআন-সুন্না রক্ষা কমিটি’ গঠন করা হবে মিটিং থেকে। প্রত্যেক মুসলমানের এই ঈমানী দায়িত্ব সম্বন্ধে সজাগ থাকতে হবে। কোরআন রক্ষার জন্য প্রয়োজনে রাজপথে আলেম ওলামাগণ বুকের তাজা রক্ত দান করবেন ...।
হোসেন আলী শুক্রবার সকালবেলা উঠেই নামাযের জন্য তৈরি হতে থাকলো। জামা-কাপড় ধুয়ে রোদে শুকিয়ে জুম্মার নামাযের আগেই ইস্ত্রি করে ফেলল। নামায পড়বে বাইতুল মোকারমে। সকাল এগারোটার সময় পার্টির লোকজন সব মহল্লায় জড়ো হলো। আমির সাহেব সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, শোন, রসূল্লাহ কম সংখ্যাক মুসলিম বাহিনী নিয়া কাফেরদের বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন ঈমানী শক্তির জোরে। আর আল্লাপাকের পথে যারা যুদ্ধ করে আল্লাপাক ফিরিস্তা দিয়া তাদেরকে সাহায্য করেন। কাজেই ময়দানে যেন কারোর ঈমানী শক্তি কমজোড় না থাকে। আল্লাপাক এ ব্যাপারে ইরশাদ করছেন...।
জুম্মার নামায শেষ করে হোসেন আলীদের দল গেইটের সামনে জনসভা করার চেষ্টা করতে লাগলো। হোসেন আলী মিটিং শুনতে খবরের কাগজ বিছিয়ে রাস্তার উপর বসে পড়ল। তার সামনে অনেক লোক। এক হুজুর হ্যান্ড মাইক নিয়ে ভাষণ দিতে শুরু করেছে। পুলিশ দূরে দাঁড়িয়ে মিটিং দেখছিল। বক্তা বলছিল, তৌহদী জনতা, ইসলাম আজ বিপন্নের মুখে! কাফের সরকার কোরআন-সুন্না বিরোধী আইন করে এদেশের নব্বই ভাগ মুসলমানের মনে আঘাত করছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এই দেশে আলেম ওলামা একজনও বেঁচে থাকতে কোরআন বিরোধী কিছু করতে পারবে না। এদেশের আলেম ওলামাগণ ইসলামী শাসন কায়েম করে প্রকৃত কোরআনী শাসন চালু করবে ইনশাল্লাহ!...
মিটিং শেষে এবার মিছিল, বড় হুজুর গাড়িতে করে এলাকা ত্যাগ করার পর মিছিলের তোড়জোর শুরু হলো। মিছিল বেরুতেই পুলিশ আটকে দিলো, আর এক পা-ও এগুতে দিবে না। তর্কাতর্কি বাধলো এই নিয়ে দলের আমিরদের সঙ্গে পুলিশের। তারপর কি হলো হোসেন আলী বলতে পারবে না, হঠাৎ সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলো। তারা গিয়ে মসজিদের ভেতরে অবস্থান নিলো। সেখান থেকে বৃষ্টির মত ঢিল ছুড়তে লাগলো হুজুররা পুলিশের প্রতি। হোসেন আলী হঠাৎ আবিষ্কার করে তার পাঞ্জাবী রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তাকে দেখে একজন বলল, মাথা ফাইট্টা গেছে! এই, এর মাথা কিছু দিয়া বান দাও...
হোসেন আলীর চোখ জ্বলছে। হুজুরদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানো গ্যাস মেরেছে রাস্তায়। সেই গ্যাস মসজিদের এসে ঢুকেছে। মসজিদের ভেতর আগুন ধরানো হয়েছে। এত ইটের টুকরা কোত্থেকে এলো হোসেন আলী বুঝতে পারলো না। কেরোসিনই বা পেলো কোত্থেকে? জুতার বাক্স ভেঙ্গে আগুন ধরানো হলো। দুই ঘন্টা পুলিশে জনতা যুদ্ধ চলল। হোসেন আলীর জীবনে এরকম অভিজ্ঞতা এই প্রথম। সে কিছুটা বিহ্বল হয়ে গেছে। এরকম রণক্ষেত্র সে আগে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছে। কতক্ষণ এরকম চলবে হোসেন আলীর ধারনা নেই। তার এলাকার সাথী ভাইদের সে কোথাও দেখতে পেলো না। বাইরে কি অবস্থা এখানে থেকে কোন আন্দাজ করা গেলো না। তবে থেমে থেমে ককটেল ফাটার শব্দ আসছিল। পুলিশের সাঁইরেন বাজছে অবিরাম। হোসেন আলী তার মাথায় একটা কাপড় চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কখন এখান থেকে মুক্তি পাবে সে জানে না।
রাত আটটার পর তাদের গ্রেফতার করা হলো মসজিদের ভেতর থেকে। হাত উপরে তুলে লাইন ধরে বেরিয়ে এলো পনেরো জন। হোসেন আলী এদের কাউকেই চেনে না। বাতিল মালের মত তাদের পুলিশের গাড়িতে ছুড়ে ফেলা হলো। সেই রাতে থানা হাজতে রেখে পরদিন আদালতে তোলা হলো তাদের। পুলিশ অভিযোগ দায়ের করে রিমান্ড চাইলো। মামলা হলো। হোসেন আলী জীবনে প্রথম জেল হাজত দেখলো।
ঘটনার দুই মাস পর জামিনে ছাড়া পেলো হোসেন আলী। এই জামিনের খেসারত দিতে হলো বউয়ের শেষ সম্বল সরু একটা সোনার চেইন, একজোড়া সোনার চুরি, মেয়ের বিয়ের জন্য এগুলো তুলে রাখা হয়েছিল। পঞ্চাশ হাজার টাকায় রফা হলো জামিনের। জর্জ সাহেবকে দিতে হবে তিরিশ হাজার। হোসেন আলীর বউ গয়না বেচা টাকা রাতের বেলা আদালতের এক মুহুরির মারফত জর্জ সাহেবের বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়ে এলো। বাকী বিশ হাজার টাকা দুই পক্ষের উকিল খাবে।
পরিকল্পনা মাফিকই সব হলো। হোসেন আলী অবশেষে জামিনে মুক্ত হলো। দুই মাস বাদে হোসেন আলী বাড়ি এলো। শরীর খুব অসুস্থ। কাশি আছে, বুকে খুব ব্যথা। ডাক্তার দেখানো হলো, গাদা গাদা ঔষধ দিল খেতে। সেখানেও বিস্তর টাকা খরচ হয়ে গেলো। হোসেন আলী জেল থেকে বেরিয়ে গুম হয়ে গেলো। বিশেষ দরকার না পরলে এখন সে বেশির ভাগ সময় চুপ করেই কাটায়। সারাদিন বাসায় বসে থাকে। দোকান বন্ধ, সারাদিন বাসায় বসে না থেকেই উপায় কি। শরীরও খুব দুর্বল। বউ ঘরে বসে সেলাই মেশিনে ডজন হিসাবে মাল সেলায়। ডজনে দুই টাকা। রোজ একশ টাকা সেলাই করতে তাকে মধ্য রাত পর্যন্ত মেশিনে বসে থাকতে হয়। সব সময় এত কাজ থাকেও না। সংসার চলছে তাই দ্বীনদরিদ্রর মত। তার উপর আছে পাওনাদারের তাগাদা। হোসেন আলীর চেয়ে দেখা ছাড়া গন্তত্যর নেই। দোকানটা ফের খুলে বসার চিন্তা করে। হয়ত সামনে বসবে, বসতে তো হবেই, কিছু একটা করে খেতে তো হবে...।
ছাড়া পাওয়ার আরো মাস দুই পর হোসেন আলী দোকান খুলে বসেছে। হাতে কোন টাকা নেই, মালও কিনতে পারে না। শূন্য দোকানে বসে থেকে লাভ নেই। শেষে দালালী শুরু করে দিলো। পার্টিকে মাল কিনিয়ে দিয়ে দুই-চারশো করে পায়। দোকান ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ব্রোকারি শুরু করে দিলো। একেকদিন কোন বেচাকেনা নেই, হোসেন আলীর রোজগারও তখন বন্ধ। দিনমজুরের মত হলো তার জীবিকা। এই করেই কোন মতে চলে যাচ্ছে।
দুপুরে খেতে এসে হোসেন আলী সেদিন আর বের হলো না। শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে। টেলিভিশনে সিনেমা চলছে। বউ মেশিন চালায় আর ফাঁকে ফাঁকে সিনেমা দেখে। মেঝেতে বসে মেয়ে কি একটা সুই সুতার কাজ করছে। হোসেন আলী এসব নিয়ে এখন মাথা ঘামায় না। সে নিজেও কখন সিনেমা দেখতে শুরু করে দিয়েছে খেয়াল নেই। সিনেমা দেখতে দেখতে হোসেন আলী ঘুমিয়ে পড়ল। কতক্ষণ ঘুমিয়েছে জানে না, মেশিনের র্ঘর্ঘ শব্দ শুনতে শুনতেই ঘুম ভাঙ্গল। শরীর ম্যাজ ম্যাজ করছে। বাথরুম থেকে ঘুরে এসে বাইরে গিয়ে দাঁড়াল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিকশার আসা যাওয়া দেখলো। পথচারির হাঁটাচলা। পাড়ার চায়ের দোকান থেকে এক কাপ চা খেলো। মনটা বিষণœ হয়ে আছে। বুকের ভেতরটা ঘোর শূন্য।
-হোসেন ভাই, কাল সকাল দশটায় মিটিং আছে।
হোসেন আলী চেয়ে দেখে তাদের পার্টির একটা ছেলে। তার সঙ্গে আরো দুটি ছেলে। এখানকার মাদ্রাসাতেই পড়ে এরা। হোসেন আলী দীর্ঘশ্বাস চেপে বলে, নারে ভাই, কাল আমার হাজিরা আছে, কোর্টে যাইতে হইব...।
হোসেন আলীর মনে পড়ল কাল সকালবেলাই তার দুই হাজার টাকা লাগবে। টাকাটা উকিল সাহেবকে দিতে হবে। টাকা এখনো জোগাড় হয়নি। প্রত্যেকবার হাজিরার সময় এইরকম এক-দুই তিন হাজার করে যাচ্ছে। এই কাগজ বের করতে হবে, ঐ কাগজ বের করতে হবে-উকিলের বাহানার শেষ নাই। কতদিন এই কেস চলবে কে জানে। পানির মত টাকা বের হয়ে যাচ্ছে। কবে এই গজব থেকে মুক্তি মিলবে আল্লাহ জানে! হোসেন আলী রোজ হাত তুলে ফরিয়াদ জানায়, হে আল্লাহপাক! এই গজব থিকা আমারে মুক্তি দাও নয়তো আমারে দুনিয়া থিকা উঠায় নাও মাবুত...।
মাগরিবের আযান হলো এ সময় মসজিদে।... হাইয়া আলাসসালা... হাইয়া আলাসসালা...। মসজিদের উদ্দেশে হাঁটা দিলো তারা। ...আসহাদু আল্লা মহাম্মাদুর রাসূল্লাহ...। হোসেন আলীর মনে হলো, এই দুনিয়ায় তার কেউ নেই! কোথাও কোন আশা নেই, ভরসা নেই...।