somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃতির বিড়ম্বনার গপ্পো-২

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বলা হয়, প্রতিভা আর প্রাকৃতিক চাপ নাকি দাবায়ে রাখা যায় না :)! প্রথমটার ব্যাপারে আমি বলতে পারিনা; তবে দ্বিতীয়টার ব্যাপারে আমার অল্পবিস্তর অভিজ্ঞতা হয়েছে। আগে একটা শেয়ার করেছি (প্রকৃতির বিড়ম্বনার গপ্পো-১ )। আপনারা যারা শুচিবায়গ্রস্ত আছেন, এখানেই ক্ষেমা দেন, নীচে যাইয়েন না :P!

সময়কাল খুব সম্ভবত ২০০৮-ই হবে। আমি তখন লেভেল ৩ টার্ম-২ অথবা লেভেল ৪ টার্ম-১ এ। হঠাত করেই প্ল্যান সেন্ট মার্টিন যাব। আমরা ৪ জন। কোন এক বুধবার কোন আগপিছু না ভেবেই, পাওয়ার ইলেক্ট্রনিকস সেশনাল মিস দিয়ে, ব্যাগ গুছিয়ে দে ছুট!

চট্টগ্রাম হকার্স মার্কেট থেকে কিছু কাপড় চোপড় কিনে নিয়ে, সিনেমা প্যালেস থেকে রাতের বাসে টেকনাফ এর উদ্দেশ্যে রওনা হই। বাসের ঝাঁকুনিতে আর বিকেল থেকে এখানে সেখানে ঘুরার ফলাফলে -অল্পক্ষণেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হটাত হটাত ঘুম ভেঙে কতদুর এলাম আন্দাজ করে -ফের ঘুম! রাতের জার্নি বিশেষ বৈচিত্র ছাড়াই ভোর বেলায় শেষ হয়!

শুনেছি সেন্ট মার্টিনে সবকিছুর দাম একটু বেশী। তাই টেকনাফে নেমেই বার্মিজ মার্কেট থেকে টুকটাক কেনাকাটা শেষে, আমরা অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় ট্রলারে চেপে বসি। অনেকক্ষণের অপেক্ষা শেষে, ট্রলার ভর্তি মানুষজন নিয়ে মাঝি- আবদুর রহমান তার কিস্তি ভাসান।

কিস্তি দরিয়ায় পড়া মাত্রই, মোচার খোলার মত উপর-নীচ করতে করতে ভটভট শব্দে আগায়। মৃদুমন্দ বাতাস, সকালের ম্যাড়ম্যাড়ে রোদের রেশ কাটতেই-প্রখর রৌদ্রকে সঙ্গী করে আমাদের গানে টান! এই গান-ই মাঝির সাথে আমাদের সখ্যতা বাড়ায়- যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে আমরা তার অতিথি হিসাবে পূর্ব বরাদ্দকৃত সময়ের থেকে একদিন বেশি থেকে আসি :)। মাঝির সাথে আমাদের দারুন জমে!

যাই হোক, একসময় সেন্টমার্টিন পৌছাই। তারপর নীল দিগন্তে-চেক ইন করেই দে ছুট- সমুদ্রে! সারাদিন দফায় দফায় সমুদ্রস্নান আর এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি শেষে, সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে বার-বি-কিউ :D। ইচ্ছেমত ভুড়িভোজ শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার সমুদ্র পাড়ে। গল্প, আড্ডা গানের মাঝেই আমাদের সাথে শরিক হয়- ট্রলারের মাঝি! রাত বাড়ে- কেওয়া গাছ আর নারিকেল গাছের পাতায় বাতাস হামলে পড়ার শব্দের সাথে কূলে ঢেউ আছড়ে পড়ার অনুনাদ! আর আকাশে লক্ষ কোটি তারার মেলা! চারপাশের পরিবেশ কি ভীষণ রকমের- অপার্থিব! সময়জ্ঞান হারিয়ে একসময় রুমে ফেরা।

পরদিন নাস্তা করে, আগের দিনের প্ল্যান অনুযায়ী ছেড়া দ্বীপ এর উদ্দেশ্যে হাটা শুরু। ভাটার সময় নাকি- হেটেই যাওয়া যায়! সাথে গতকাল হোটেলে চেক-ইনের আগেই আমাদের সাথে জুটে যাওয়া গাইড- জাভেদ।

ফ্রেশ হয়েই বের হয়েছি, তাও মাঝপথে এসে এত সুন্দর প্রকৃতি আমায় ডাক দিয়ে বসল! আকুল হয়ে জাভেদ এর শরণাপন্ন হতেই সে জানায়, আশে পাশে কোন ব্যবস্থা নাই /:)। আমার চক্ষে তখন ঘোর অমানিশা! কি করি! কি করি! আল্লাহ’র নাম জপতে জপতে যখন কেয়া গাছের চিপায় দৌড়ের কথা ভাবছি, তখনি দু’কান অবধি প্রশস্ত হাসি হেসে, জাভেদ বলল – একটা বিকল্প আছে!


তীরে নোঙর ফেলা মাছ ধরার ট্রলার এর দিকে ইশারা করে, আমায় চোখ টিপে দিয়ে বলল- ট্রলারে উঠে যেতে। ওখানে নাকি ব্যবস্থা আছে! আমি পড়িমরি করে এক দৌড়ে ট্রলারে উঠে জায়গামত গিয়ে দেখি- দু’খান তক্তা বিছানো, নীচে পুরা ফাকা। সমুদ্রের নীল জল দেখা যায়। পাশেই একটা বদনা- রশি বাধা! তক্তার উপরে বসলে-তীর আড়াল, কিন্তু দাড়ালেই- পুরা পৃথিবী প্রকাশিত! মনে মনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, তক্তার উপরে বসে পরি । আহ...কি আরাম, কি শাআআআন্তি! গুনগুন করে গানও শুরু করে দিলাম ;););)


এইবার পানি নেয়ার জন্যে রশিময় বদনা নীচে ফেলতেই কলিজায় কামড় দিয়ে উঠল। মুখের গান হরিয়ে-শঙ্কায় গলা শুকিয়ে কাঠ! অস্ফুট গলায় ডেকে উঠলাম, ‘ইয়া মাবুদ!’


মাঝি মাল্লাদের বেগ পেলে, মাঝ নদীতে তারা রশিময় বদনা ফেলে পানি উত্তোলন করেন। তারা রশি ওই মাপমতোই রাখছেন! তীরে নোঙর ফেলা নৌকায় ওই দৈর্ঘ্যে আমি ক্যামনে পানি উঠাই! বদনা পানির নাগালের প্রায় একহাত উপ্রে থাকতেই রশির দৈর্ঘ্য শেষ!তক্তায় বসেই (দাড়ালেই তো পৃথিবী প্রকাশিত B-)) চিন্তায় মাতি- ‘উপায় কি নাই কোন!?’ রশিতে দোল দিতেই বদনা পেন্ডুলামের মত এদিক- ওদিক দোলে; পানির নাগাল আর পায় না!


অবশেষে, উপরওয়ালার খাস মেহেরবানিতে- মনে পড়ে, ট্রলারে উঠার সময় শ্যালো ইঞ্জিনের পাশে নৌকার তলায় পানি দেখেছি। কিভাবে ওই তক্তা থেকে উঠে নৌকার তলানীর ওই পানি পর্যন্ত পৌছালাম, তা জানতে চেয়ে লজ্জা দিবেন না :D:D:D। ঝামেলা মিটানোর পর, আবারো সৃষ্টিকর্তার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ট্রলার থেকে নেমে তীরে আসতেই দেখি- আমার কর্ম ঢেউয়ে ঢেউয়ে হাতছানি দিতে দিতে কূলে আছড়ে পড়ছে! আর আমি শশব্যাস্ত হয়ে, অন্য কারও উপলব্ধির আগেই বলে উঠি- ‘দ্রুত ছেড়া দ্বীপ চল! জোয়ার চলে আসবে!’

কর্ম পেছনে ফেলে, আমরা ছেড়া দ্বীপের পথে পা বাড়াই ;););)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×